গাবতলীর গরুর হাটের প্রধান প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকে একটু এগুলেই চোখে পড়বে হালকা গোলাপি রঙের বিশাল এক গরু। মুখ ও ঘাড়ে ছোপ ছোপ কালো রঙ। রাজকীয় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে ‘কুষ্টিয়ার মিনিস্টার’।
অস্ট্রেলিয়ান জাতের গরুটির ওজন এক হাজার ৭০০ কেজি। অর্থাৎ দাম হাঁকা হচ্ছে ২৫ লাখ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত গাবতলী গরুর হাটে আনা সবচেয়ে বড় গরু এই ‘কুষ্টিয়ার মিনিস্টার’। গরুটির মালিক আশরাফুল ইসলাম। তিনি এটি ছাড়া আরও তিনটি গরু গাবতলীর হাটে নিয়ে এসেছেন।
কোরবানি উপলক্ষে রাজধানীতে এবার ১৯টি হাট বসছে। এর মধ্যে গাবতলীর হাটটি স্থায়ী এবং সবচেয়ে বড়। অন্যগুলো ঈদুল আজহা উপলক্ষে ইজারা দিয়েছে দু্ই সিটি করপোরেশন।
পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি আরও ছয়দিন। তবে ইতোমধ্যে গাবতলীর হাটে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গরু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারিরা। সে অনুপাতে হাটের ক্রেতার আনা-গোনা নেই। কিছু মানুষ গরু দেখতে এসেছেন। কেউ কেউ পশুর বাজার যাচাই করতেও এখানে ঢু মারছেন। আর দর্শনার্থীদের বড় জটলাই দেখা গেল ‘কুষ্টিয়ার মিনিস্টার’কে ঘিরে।
আশরাফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রায় আড়াই বছর আগে কুষ্টিয়ার বামুনদির হাট থেকে একটি কিনেছিলাম। তখন সেটির বয়স ছিল ৮ মাসের মতো। কেনার সময়ই এটির বডি ভালো দেখে কিনেছিলাম। তখন থেকেই নাম রাখা হয়েছিল মিনিস্টার। আমি আড়াই বছরের মতো গরুটাকে লালনপালন করেছি। সে হিসাবে মিনিস্টারের বয়স এখন তিন বছরের মতো।’
খাবারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মিনিস্টারকে বরাবরই প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হয়েছে। খড়, ঘাস ও ভূষি খাওয়ানো হয়েছে নিয়মিত। সকাল ৭টায় খড় ও ভূষি পানি দিয়ে মিশিয়ে খাওয়ানো হতো। এরপর দুপুরে ঘাস ও খড় এবং রাতে ঘাস, খড় ও ভূষি খাওয়ানো হয়। ঠাণ্ডার ওষুধ ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ খাওয়ানো হয়নি। এখন পর্যন্ত বড় কোনো রোগ হয়নি।’
আশরাফুল দাবি করেন, গরুটিকে স্কেলে মাপা হয়েছে। তাতে ওজন দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭০০ কেজি। অর্থাৎ সাড়ে ৪২ মণ। দাম চাচ্ছি ২৫ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত দাম উঠেছে চাওয়া দামের প্রায় অর্ধেক।’
মিনিস্টারকে হাটে যে জায়গায় রাখা হয়েছে এই জায়গার ভাড়া হিসেবে তাকে গুনতে হচ্ছে ২০ হাজার টাকা।
ঝিনাইদহ থেকে গাবতলী হাটে আনা হয়েছে ‘সোনামণি-১’ ও ‘সোনামণি-২’। ছবি: নিউজবাংলা
ঝিনাইদহের ‘সোনামণি-১’ ও ‘সোনামণি-২’
গাবতলী গরুর হাটে আরও কয়েকটি বড় গরু আনা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ঝিনাইদহ থেকে জামাতা ও শ্বশুর মিলে নিয়ে এসেন ‘সোনামণি-১’ ও ‘সোনামণি-২’ নামের দুটি গরু। গরুর মালিক জামাতা। শ্বশুর এসেছেন জামাতাকে সাহায্য করতে।
গরুর মালিক আব্দুর রশিদের মেয়ের নাম সোনামণি। তার নামেই গরু দুটির নামকরণ করা হয়েছে।
সোনামণি-১ নামের গরুটির গায়ের রঙ সাদা ও লালের মিশ্রণ। আর সোনামণি-২ নামের গরুটির গায়ের রঙ কালো।
আব্দুর রশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সোনামণি-১ নামের গরুটির ওজন ১ হাজার ৫০০ কেজি (সাড়ে ৩৭ মণ) এবং সোনামণি-২ গরুর ওজন ১৩০০ কেজি (সাড়ে ৩২ মণ)।
‘আমরা গরু দুটি নিয়ে গত রাতে হাটে এসে পৌঁছেছি। এখনও ওভাবে কাস্টমার আসে নাই হাটে। সোনামণি-১ গরুর দাম চেয়েছি ১৫ লাখ টাকা। আর সোনামণি-২ গরুর দাম চেয়েছি ১৩ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত একজন কাস্টমার দুইটা মিলে ১৩ লাখ বলেছেন’
আব্দুর রশিদ জানালেন, গরু দুটিকে কাঁচা ঘাস, খড়, গমের ভূষি, ভুট্টার গুঁড়া, ছোলা ও খেসারির ডাল খাওয়ানো হয়। এছাড়া খুদ (ভাঙা চাল) সেদ্ধ করে খাওয়ানো হয়। এর বাইরে কিছুই খাওয়ানো হয় না।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের খামারি গাবতলী হাটে এনেছেন ‘বস’। ছবি: নিউজবাংলা
চৌদ্দগ্রামের ‘বস’ ও ‘টাইগার’
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে জয়নাল আবেদিন গাবতলী হাটে নিয়ে এসেছেন চারটি গরু। এর মধ্যে বড় দুটির নাম ‘বস’ ও ‘টাইগার’। বসের রঙ হালকা গোলাপি ও কালোর মিশ্রণ এবং টাইগারের রঙ সাদার মাঝে হালকা কালো ছোপ।
গরুর মালিক জয়নাল আবেদিন বললেন, ‘বসের ওজন ১ হাজার ৪০০ কেজি। আর টাইগারের ওজন ১ হাজার ২০০ কেজি। বসের দাম চাচ্ছি ১৫ লাখ টাকা এবং টাইগারের দাম চাচ্ছি ১২ লাখ টাকা। আজ জুমার নামাজের পর হাটে গরু নিয়ে এসেছি। গরু দুটি আমার পালের। ওদের মধ্যে বসের বয়স পাঁচ বছর ও টাইগারের বয়স সাড়ে চার বছর।’
গরুর খাবারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বস ও টাইগারকে নিজের জমির ঘাস, খড় ও চাইনিজ খাবার খাওয়াই। ওই চাইনিজ খাবারটা বানাই ভুট্টা, গম, খৈল, বাদাম, ছোলা, চালের কুড়া মিশিয়ে।’
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘গরুর খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা বিপাকে আছি। গরুর পেছনে খরচ করতে করতে আমরা দিশেহারা। অথচ খরচ অনুযায়ী বাজারে দাম পাওয়া কঠিন।’