অপারেশন থিয়েটার থেকে রোগীর অনুমতি ছাড়া ফেসবুকে ডা. সংযুক্তা সাহার লাইভে এসে প্রচার করা সম্পূর্ণ অনৈতিক বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) শৃঙ্খলা কমিটি। কমিটির সদস্যরা বলেছেন, ডা. সংযুক্তা সম্পূর্ণ অনৈতিক কাজ করেছেন। তিনি সেখান থেকে ফেসবুক লাইভে আসতে পারেন না।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে বিএমডিসির কার্যালয়ে কাউন্সিলের শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানানো হয়।
এ বিষয়ে কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘কোনো চিকিৎসকই রোগীর কনসার্ন (অবগতি) ছাড়া তার ভিডিও প্রকাশ করতে পারেন না। এক্ষেত্রে সংযুক্তা সাহা যা করেছে তা সম্পূর্ণ অনৈতিক।’
সম্প্রতি সেন্ট্রাল হসপিটালে নবজাতক সন্তানসহ মাহবুবা রহমান আঁখির মৃত্যুর ঘটনায় আলোচনায় এসেছেন ডা. সংযুক্তা সাহা।
কুমিল্লার তিতাস উপজেলা থেকে অন্তঃসত্ত্বা মাহবুবা রহমান আঁখিকে ৯ জুন এনে সেন্ট্রাল হসপিটালে ভর্তি করা হয়। আঁখির পরিবারের ভাষ্য, তাকে ভর্তি করা হয় চিকিৎসক সংযুক্তা সাহার অধীনে, তবে সংযুক্তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি সে সময় দেশের বাইরে ছিলেন।
অন্য চিকিৎসকরা আঁখির স্বাভাবিক প্রসব করাতে ব্যর্থ হয়ে পরে অস্ত্রোপচার করেন। ওই সময় নবজাতকের মৃত্যু হয়। সংকটাপন্ন হয়ে পড়েন মাহবুবাও। নবজাতকের এক সপ্তাহ পর আঁখির মৃত্যু হয়।
নবজাতকের বাবা ইয়াকুব আলী এ ঘটনায় মামলা করলে দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এ ঘটনায় সেন্ট্রাল হসপিটাল দুষছে ডা. সংযুক্তাকে। আর তিনি দুষেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এর মধ্যে জানা যায়, ডা. সংযুক্তার বিএমডিসির নবায়নও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে।
ডা. এহতেশামুল হক বলেন, ‘ডা. সংযুক্ত সাহার নিবন্ধন নেই বিষয়টি এমন নয়। তিনি বিএমডিসির নিবন্ধন করেছিলেন, কিন্তু ২০১০ সালের পর নবায়ন করেননি। তিনি নবায়নের জন্য অতি সম্প্রতি দুই-একদিনের মধ্যে আবেদন করেছেন। আমরা তার আবেদন বর্তমানে স্থগিত করে রেখেছি। এই বিষয়ে আমাদের আইনে যা রয়েছে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
তবে বিএমডিসির ওয়েবসাইটে ডা. সংযুক্ত সাহার নিবন্ধন আপডেট দেখাচ্ছে।
শুক্রবারের সভার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে বিএমডিসির শৃঙ্খলা কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘১৮ জুন সেন্ট্রাল হসপিটালে যে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে এবং সেই বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে তথ্য উঠে এসেছে, সেগুলো আমরা বিএমডিসির নির্বাহী কমিটির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। নির্বাহী কমিটি যদি সে বিষয়ে কোনো করণীয় প্রয়োজন মনে করে, তাহলে তারা সেটা করবে।
‘আমাদের কাছে যে অভিযোগগুলো আসে, একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা সেগুলোর সমাধান করে থাকি। সেখানে যদি কোনো আইনের ব্যত্যয় পাই, তাহলে আইন অনুযায়ী আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। আঁখি ও তার নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায়ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রতি মাসে কেমন অভিযোগ আসে, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএমএ মহাসচিব বলেন, ‘অভিযোগ বেশি আসছে না কম আসছে, সেগুলো আমরা বিবেচনায় নেই না। তবে ইদানীং আমাদের এই শৃঙ্খলা কমিটি হওয়ার পরে আমরা প্রতি মাসে একটি সভা করি। শৃঙ্খলা কমিটি হওয়ার পরে সভায়ই অভিযোগগুলোর ব্যাপারে আলোচনা করা হয়। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করি।’
তবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় অনেকের স্বাক্ষর গ্রহণ করতে হয় বলে জানান এ কর্মকর্তা। বলেন, ‘অনেক কিছু আলামত হিসেবে গ্রহণ করতে হয়। এক্সপার্ট ওপিনিয়নের (বিশেষজ্ঞ মতামত) জন্য কিছু কমিটিও গঠন করতে হয়। সবগুলো নিয়েই আমরা দ্রুততম সময়ে সমস্যাটি সমাধান করার চেষ্টা করি।’