রাজশাহী সিটি নির্বাচনে জিতেও প্রতিজ্ঞা রক্ষা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ভোটের আগে তার নির্বাচনি এলাকার মানুষের জন্য কর্মসংস্থান করার কথা দিয়েছিলেন তিনি। সে বিষয়টি তিনি কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারবেন, কীভাবে শুরু করবেন- এ বিষয়গুলো ভাবাচ্ছে সদ্য নির্বাচিত এ মেয়রকে।
বুধবার টানা দ্বিতীয় ও মোট তৃতীয়বারের মত রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
ভোটে জিতে প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘ভোট জয়ে আনন্দ তো হচ্ছেই, তবে ভোটের আগে কর্মসংস্থান দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তা পূরণ করার কাজটি কিভাবে শুরু করব, সেটা নিয়ে ভাবনায় আছি।’
বুধবার রাতে সিলেটের জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে যখন ফলাফল ঘোষণা হচ্ছিল, তখন থেকেই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যালয়ে উৎসবের বন্যা শুরু। নেচে-গেয়ে বিজয় উদযাপন করেন দলীয় নেতা-কর্মীরা।
বিজয়ী মেয়র তার প্রথম প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘বিগত ৫ বছরে আমি যে কাজ করেছি, তাতে মানুষের ভেতরে এক ধরনের আস্থা তৈরি হয়েছে। সেইসঙ্গে কর্মসংস্থানের বিষয়ে যে অঙ্গিকার করেছি, সেটিকেও গুরুত্ব দিয়েছে ভোটাররা।’
লিটন বলেন, ‘বিগত পাঁচটি বছর আমি মানুষের কাছে অনেকবার গিয়েছি। বিশেষ করে করোনা মহামারির সময় রাজশাহী শহরের বিভিন্ন জায়গায় দফায় দফায় খাদ্যদ্রব্য, ওষুধপত্র, অক্সিজেন সিলিন্ডার বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। এসব কারণে মানুষের মনে আমার প্রতি একটা আস্থা তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, আমি নির্বাচনের আগে আমার ইশতেহারে যখন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেই, তখন তারা সেটি গ্রহণ করেছেন এবং আমার উপর আস্থা রেখেছেন। তারা বিশ্বাস করেছেন যে এটা আমার দ্বারাই সম্ভব। নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত, প্রত্যেকেই তাদের সন্তানের কথা ভাবেন।
‘কর্মসংস্থানের কাজটি খুব কঠিন। কিন্তু আমি কাজটি করতে চাই। আশা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা নিয়ে আমি কাজটি শুরু করতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘জয়ের অনুভূতি যেমন আনন্দের, ঠিক একইসঙ্গে অতিরিক্ত একটা দায়িত্ব কাঁধে চাপলে যেমন মানুষকে চিন্তিত করে, আমিও তেমনই চিন্তিত। আমি যে কথা দিয়েছি, সেটা বাস্তবায়ন করা কঠিন হলেও আমাকে তা করতে হবে। তাই আনন্দিত হলেও কাজটি কোথা থেকে কীভাবে শুরু করব, সেটা নিয়ে আমাকে ভাবতে হচ্ছে।’
বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ভুল করেছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘নির্বচনের ট্রেন কারও জন্যই থেমে থাকে না। হাতপাখার প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়ার পরও বেশ ভালোই ভোট পেয়েছেন। বিএনপি হয়ত সেখানে আরও অনেক বেশি ভোট পেতে পারত। ভোট বর্জনের এই রাজনীতি তাদের জনগন থেকে আরও বিচ্ছিন্ন করে দেবে।’
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় কাদিরগঞ্জে জাতীয় চার নেতার অন্যতম মেয়র লিটনের বাবা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান ও মা জাহানারা জামানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন লিটন।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজশাহী সিটি এলাকা সম্প্রসারণ করা হবে। রাজশাহী-কলকাতা সরাসরি ট্রেন ও বাস যোগাযোগ চালুর বিষয়ে কথা হয়েছে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে রাজশাহী-কলকাতা সরাসরি ট্রেন ও বাস সার্ভিস চালু করা সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।’
তিনি বলেন, ‘ভোটে নারীদের উপস্থিতি ছিল বেশি। নারীরা ও নতুন ভোটাররা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। বিপুল ভোটে জয়ের ব্যাপারে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছেন।’
এ সময় মেয়রের সহধর্মিণী রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহীন আকতার রেণীসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় খায়রুজ্জামান লিটনকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী মহানগরের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমারপাড়স্থ দলীয় কার্যালয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী মহানগর, থানা আওয়ামী লীগ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। পুনর্নির্বাচিত নগরপিতাকে ফুলে ফুলে সিক্ত করেন দলটির নেতারা।