সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শেষ। এবার ভোটগ্রহণের পালা। বুধবার ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হবে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
দীর্ঘ সময়ের আলাপচারিতায় সিটি নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হওয়া, নিজ দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ে বিভেদ, বিএনপির ভোট বর্জন, জয়ের সম্ভাবনা ও সিলেট নগর ঘিরে নিজের স্বপ্ন নিয়ে কথা বলেছেন নৌকার এই মেয়র প্রার্থী। নিউজবাংলার পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকারটি নেয়া হয়েছে রোববার।
আনোয়ারুজ্জামানের কাছে প্রথম প্রশ্ন ছিল- আপনি জীবনের দীর্ঘ সময় প্রবাসে কাটিয়েছেন। সিলেটের রাজনীতিতেও তেমন সক্রিয় নন। এবার প্রথমবারের মতো কোনো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে ভোটারদের কতটুকু সাড়া পেয়েছেন?
জবাবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘সিলেটেই আমার জন্ম। আমার লেখাপড়া সিলেট সরকারি কলেজে। রাজনৈতিক জীবনের শুরুটাও সিলেটেই। দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকলেও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে সিলেটের জন্য কাজ করেছি। নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে আমি প্রথম হলেও সিলেটের নির্বাচন কাছ থেকে দেখা এবং নির্বাচনে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার আছে।
দল থেকে আরও ১০ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তারা সবাই আমার চেয়ে যোগ্য। কিন্তু দল আমাকে মনোনয়ন দেয়ার পর সবাই দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। সবাই আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। দলের প্রত্যেক নেতাকর্মী আমাকে কাছে টেনে নিয়েছেন।
‘সিলেটের বিগত দুটি সিটি নির্বাচনে আমি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছি। এবার প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়ে আমি দেখেছি সিলেটের মানুষ খুবই সচেতন। রাজনৈতিকভাবে অভিজ্ঞ। তারা উন্নয়ন চায়। কাজ চায়। কার মাধ্যমে কাজ হবে সেটাও তারা জানেন।
‘অল্প দিনেই সিলেটের মানুষ আমাকে আপন করে নিয়েছেন। তারা আমার কথাগুলো শুনেছেন। আমার প্রতিশ্রুতিগুলোও শুনেছেন। আমার প্রতিশ্রুতি তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে বলেই ধারণা। তারা বুঝতে পেরেছেন আমাকে দিয়ে সিলেটের উন্নয়ন হবে। সব মিলিয়ে সিলেটের মানুষজনের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।
প্রশ্ন: আওয়ামী লীগ থেকে এবার ১১ জন মনোনয়ন চেয়েছিলেন। আপনাকে মনোনয়ন দেয়ায় তাদের মধ্যে একটা ক্ষোভ ছিলো। নির্বাচনে এর কোন প্রভাব পড়বে?
আনোয়ারুজ্জামান: দল থেকে আরও ১০ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তারা সবাই আমার চেয়ে যোগ্য। কিন্তু দল আমাকে মনোনয়ন দেয়ার পর সবাই দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। সবাই আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। দলের প্রত্যেক নেতাকর্মী আমাকে কাছে টেনে নিয়েছেন।
যেকোনো সুবিধা-অসুবিধায় আমি দলের পাশে যেমন ছিলাম তেমনি দলের নেতাকর্মীদের পাশেও সাধ্যমতো দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। কে কার পক্ষে বা কোন গ্রুপের আমি তা কখনও দেখিনি। ফলে নেতাকর্মীরা আমাকে কাছের মানুষ মনে করেন। আমি দল থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। নৌকার প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ। ভোটে তার প্রতিফলন দেখা যাবে।
আমি মেয়র নির্বাচিত হলে শুধু দলীয় নেতৃবৃন্দ নয়, সব স্তরের কর্মীদেরও নগর ভবনে অ্যাকসেস থাকবে। সুযোগ-সুবিধা নেতাকর্মীরা পাবেন। তার মানে অন্যরা পাবে না, তা নয়।
প্রশ্ন: বিগত সিটি নির্বাচনেও দৃশ্যত আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে দলের সবাই ছিলেন। তবু দলের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে হারতে হয়। দলীয় বিভেদের কারণেই কামরানকে হারতে হয় বলে তখন অভিযোগ ওঠে।
আনোয়ারুজ্জামান: আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগসহ দলের প্রত্যেক নেতাকর্মী আমাকে নিয়ে অন্য যেকোনো বারের চেয়ে বেশি ইউনাইটেড। বিগত নির্বাচনে দলের সাংগঠনিক ইউনিটি এমন ছিলো না। ছত্রভঙ্গ টিম ছিলো। এবার নিজেরা বিভিন্ন জোনে ভাগ করে, নিজেরাই সেই দায়িত্ব নিয়ে নৌকার বিজয়ের জন্য কাজ করছেন। এবার সাংগঠনিক কোনো দুর্বলতা নেই। সবার মধ্যে মেয়র পদটি পুনরুদ্ধারের তাগিদ রয়েছে।
প্রশ্ন: ১০ বছর পর মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
আনোয়ারুজ্জামান: আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায়। অথচ নগর ভবনে দলের নেতাকর্মীদের অ্যাকসেস ছিলো না। ১০ বছর ধরে আওয়ামী লীগ নগর ভবনের দায়িত্বে না থাকার যে শূন্যতা ছিলো এ কারণেই নেতাকর্মীদের মধ্যে এবার তাগিদটুকু বেশি অনুভূত হচ্ছে। তাদের মধ্যে কর্মস্পৃহা বেড়েছে। গতি বেড়েছে। নির্বাচিত হলে শুধু নেতৃবৃন্দ নয়, সব স্তরের কর্মীদেরও নগর ভবনে অ্যাকসেস থাকবে। নগর ভবনে শুধু দলীয় নেতাকর্মী নয়, সাধারণ মানুষেরও অ্যাকসেস থাকবে।
প্রশ্ন: প্রচার-প্রচারণায় দলের নেতাকর্মীরা যেভাবে আপনাকে ঘিরে রেখেছেন, নির্বাচিত হলে নগর ভবনের কর্মকাণ্ডে তাদের প্রভাব বিস্তারের ঝুঁকি থেকে যায় কি?
আনোয়ারুজ্জামান: আল্লাহর রহমতে নির্বাচিত হতে পারলে নগর ভবনে কারও প্রভাব বিস্তারের প্রশ্নই ওঠে না। প্রভাব খাটানোর ক্যাপাসিটিই তো তাদের থাকবে না। নেতাকর্মীরা আসবেন। দেখা করবেন। সুযোগ-সুবিধা নেতাকর্মীরা পাবেন। তার মানে অন্যরা পাবে না, তা নয়।
সিটি মেয়র হয়ে গেলে সব নাগরিকের জন্য সমানাধিকার থাকবে। আমার ঘনিষ্ঠ কেউ যদি লাইনের বাইরে চলে যান বা অকারেন্স ঘটান, তিনি বিপদে পড়বেন। আমার দ্বারাই তিনি বড় ভিকটিম হবেন। ম্যাসেজ ক্লিয়ার। রেকর্ড করে রাখেন। এটা হবেই না।
সিলেটকে নিয়ে আমার বড় স্বপ্ন আছে। বেশি বলতে চাই না এখন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন যে সিটিগুলো হয়েছে সে আদলে সিলেটকে সাজাতে চাই। যদিও মেইন সিটিকে সেভাবে পারা যাবে না। জায়গা কম। তবে উপকণ্ঠের বর্ধিত অংশকে সেভাবে সাজাতে চাই। অনেক আইডিয়া আছে।
প্রশ্ন: মেয়র পদে ৮ জন প্রার্থী আছেন। অন্যদের চেয়ে কেন আপনি নিজেকে যোগ্য মনে করেন?
আনোয়ারুজ্জামান: আমি ইয়াং। এনার্জেটিক। দৌড়ঝাঁপ করতে পারব। কাজ করতে পারবো। রাজনীতি তো দেশের জন্য করি। এলাকার জন্য করি। পতাকার জন্য করি। আমার ছোটবেলার স্বপ্ন ছিলো জনপ্রতিনিধি হয়ে সিলেটের উন্নয়নে কাজ করার। সেই সুযোগ যখন সৃষ্টি হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু আমাকে নমিনেশন দিয়েছেন, আমি উন্নয়ন করতে চাই।
সিলেটকে নিয়ে আমার যে উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে তা আমি জনগণের কাছে তুলে ধরেছি। ২১ দফা ইশতেহার দিয়েছি। যদি রাজশাহী সিটি উন্নয়ন করে দেশের উদাহরণ হতে পারে সিলেট কেন পারবে না? জনগণও বুঝতে পেরেছে যে আমি আমার প্রতিশ্রুতির ১০০ ভাগ না পারলেও ৯০ ভাগ পূরণ করতে পারবো। তাই জনগণ সিলেটের উন্নয়নের জন্য আমাকে ভোট দেবে।
সিলেটকে নিয়ে আমার বড় স্বপ্ন আছে। বেশি বলতে চাই না এখন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন যে সিটিগুলো হয়েছে সে আদলে সিলেটকে সাজাতে চাই। যদিও মেইন সিটিকে সেভাবে পারা যাবে না। জায়গা কম। তবে উপকণ্ঠের বর্ধিত অংশকে সেভাবে সাজাতে চাই। অনেক আইডিয়া আছে।
প্রশ্ন: নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেক দল অংশ নিচ্ছে না। ফলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না বলে অনেকে দাবি করছেন। আপনার কী মত?
আনোয়ারুজ্জামান: অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে। নির্বাচন জমজমাট। ৮ জন মেয়র প্রার্থী রয়েছেন। কাউন্সিলর প্রার্থীরা তো আছেনই। তারা প্রচার চালাচ্ছেন। মেয়র প্রার্থীরা কাজ করছেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী স্ট্রং। অংশগ্রহণমূলক না হওয়ার তো কারণ দেখি না।
মানুষের মধ্যে স্পিড আছে। মানুষ ভোট দিতে আসবে। আমরাও জনগণকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতে সর্বাত্মক চেষ্টা করব। যাকেই ভোট দিক না কেন সে যেন ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে আসে। এতে আমি ফেল করলেও সমস্যা নেই।
‘বিএনপির প্রার্থীরাও তো আছেন। ওরা তো ৪৩ জনকে বহিষ্কার করেছে। তা থেকেই প্রমাণ হয় ওরাও নির্বাচনে আছে। ভোট বর্জনের আহ্বান তাদের নেতাকর্মীরা মানছে না।
প্রশ্ন: বরিশালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না আসতে প্রচার চালানো হয়েছে। সিলেটে সেরকম হলে ভোটার উপস্থিতি কমবে বলে মনে করেন?
আনোয়ারুজ্জামান: বিএনপির ভোট বর্জন এটা রাজনৈতিক কথা। ওরা বর্জন করতেই পারে। কিন্তু কাউকে বাধা দেয়া অপরাধ। বিদেশে এরকম হলে জেল হয়ে যেত। এটা রাষ্ট্রবিরোধী কাজ। তবে সিলেটে রাজনৈতিক সোহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বিরাজমান। সিলেটে সেটি আশঙ্কা করছি না। সিলেট অন্য জেলা থেকে ভিন্ন।
কামরান ভাই একটা ফেইজ করেছেন। আরিফ ভাইও একটা ফেইজ করেছেন। আমি তাদের থেকে আরও ভালো করতে চাই। বিগত ১০ বছরে সিলেটের জন্য ২৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ এসেছে। তবে অপরিকল্পিত কাজের কারণে সরকারের অর্থের অপচয় হয়েছে।
প্রশ্ন: জাতীয় পার্টির প্রার্থীর অভিযোগ- আপনি হলফনামায় শিক্ষা সনদ ও আয় নিয়ে তথ্য গোপন করেছেন।
আনোয়ারুজ্জামান: আমি তো তথ্য গোপন করিনি। এসব মিস ইনফরমেশন। আমার তো সার্টিফিকেট আছে। আয় যা আছে তা দিয়েছি। ইংল্যান্ডে বিজনেস আছে। বাড়ি আছে। সেটা তো অন্য টেরিটরি। ইনকাম লন্ডনে আছে। অফিসিয়ালি তা দেখাতে পারি না। এখানে নেই, তাই দেই নাই। কেন বাড়িয়ে মিথ্যা তথ্য দেবো। আমি মিথ্যার আশ্রয় নেইনি। এখানে যা আছে তা দিয়েছি।
প্রশ্ন: ১০ বছর ধরে সিলেটের মেয়র পদে রয়েছেন বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। তার কার্যক্রমকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আনোয়ারুজ্জামান: ইতিবাচকভাবে দেখছি। তিনি তো কিছু কাজ ভালো করেছেন। রাস্তাঘাট বড় করেছেন। তবে অপরিকল্পিত কাজ করেছেন। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ রয়েছে। আরিফুল হক খুব খারাপ করেছেন তা বলব না।
কামরান ভাই একটা ফেইজ করেছেন। আরিফ ভাইও একটা ফেইজ করেছেন। আমি তাদের থেকে আরও ভালো করতে চাই। বিগত ১০ বছরে সিলেটের জন্য ২৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ এসেছে। তবে অপরিকল্পিত কাজের কারণে সরকারের অর্থের অপচয় হয়েছে।
প্রশ্ন: আপনার দৃষ্টিতে সিলেটের প্রধান সমস্যা কী কী?
আনোয়ারুজ্জামান: প্রথমেই প্রয়োজন স্মার্ট নগর ভবন। মহানগরের যাবতীয় নাগরিক সেবা পরিচালিত হয় যে ভবন থেকে তা যদি হয় অপর্যাপ্ত, অপূর্ণাঙ্গ ও অদক্ষ, তখন জনগণকে কাঙ্ক্ষিত যুগোপযোগী সেবা দেয়া অসম্ভব।
এক সময় প্রকৃতি-কন্যা বলা হতো সিলেটকে। সুন্দরী শ্রীভূমিও বলা হতো। কিন্তু আজ গাছ নেই। সবুজ প্রকৃতি আজ বিনষ্ট। রাস্তাঘাট, বাসা-বাড়ি নির্মাণ এবং নগর পরিকল্পনায় সবুজকে প্রাধান্য দেয়াসহ সবুজ সিলেট গড়ে তুলতে এলাকাভিত্তিক পরিকল্পিত বনায়ন করতে হবে। রাস্তাঘাট সুন্দর করতে হবে।
অপরিচ্ছন্নতা আরেক অন্যতম সমস্যা। নগর পরিচ্ছন্ন রাখতে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা করতে হবে। জলাবদ্ধতা দূর করতে হবে। শহর রক্ষা বাঁধ, সুরমা নদী খনন, চা বাগানে গার্ড ওয়াল দিতে হবে। যানজটমুক্ত নগরী গড়তে হবে। তবে যাই করা হোক না কেন, করতে হবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও মতামতের ভিত্তিতে। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আসতে হবে।
প্রশ্ন: সিলেট একটি পর্যটন নগরী। কিন্তু নগরে পর্যটকদের জন্য কোনো সুবিধা নেই। এ ব্যাপারে আপনার কোনো পরিকল্পনা আছে কী?
আনোয়ারুজ্জামান: সিলেট নগরীতে পর্যটকদের জন্য বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এ বিষয়ে সিলেটের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য নগরীতে একটা মিউজিয়াম স্থাপন এবং সুরমা নদী ও নদীর তীরকে ঘিরে পর্যটকদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা ও একটি সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স তৈরি করতে চাই।
প্রশ্ন: নগর ভবনের সেবার মান নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে অনেক অসন্তোষ রয়েছে। সেবার মান বাড়াতে আপনি কী করবেন?
আনোয়ারুজ্জামান: সিটি করপোরেশন হলো সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। সেবা দিতে হবে। আমি নির্বাচিত হলে মাস্টার রোলের নিয়োগ বন্ধ করব। অবশ্য ইতোমধ্যে গরিব মানুষ যারা চাকরি পেয়েছেন তাদেরকে মানবিক কারণে বাদ দেয়া যাবে না। তবে আর কোনো অবৈধ নিয়োগ যেন না হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্নীতি, বাণিজ্য, অবৈধ কোনো কিছু আর করতে দেয়া হবে না। নগর ভবনকেন্দ্রিক সিন্ডিকেট বন্ধ করব। সেবা দিতে হবে। না হয় আমি থাকব না।
প্রশ্ন: সিলেটে পুরনো জেলখানার জায়গায় একটি উন্মুক্ত উদ্যান করার দাবি দীর্ঘদিনের। এ ব্যাপারে সাবেক অর্থমন্ত্রী আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি...।
আনোয়ারুজ্জামান: সিলেটে বঙ্গবন্ধুর নামে কোনো স্থাপনা নেই। আমি নির্বাচিত হলে এ বিষয়ে কিছু করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। জেলখানার জায়গায় বঙ্গবন্ধুর নামে একটি উদ্যান করা যায়। এই স্থানটি নিয়ে নগরবাসীর অনেকদিন থেকেই দাবি রয়েছে।
কিন্তু এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে খোঁজখবর না নিয়ে কী করা যাবে এখন বলা যাবে না। আর বঙ্গবন্ধুর নামে কিছু করতে গেলে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতির বিষয় রয়েছে। তবে নগরীতে উদ্যান দরকার। শিশু, বৃদ্ধ ও নারীদের অবসর ভ্রমণের জন্য এখানে না হলেও সুরমার তীরবর্তী স্থানে নিরাপদ উদ্যান করা যাবে।
আমি শুধু সিলেট সিটির মানুষের জন্য না, পুরো সিলেটবাসীর জন্য কাজ করব। সুযোগ যখন সৃষ্টি হয়েছে, নির্বাচিত হলে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে তা আদায় করবো। এটা আমার স্বপ্ন। এটি বড় কাজ। এটা দিয়েই কাজ শুরু করতে চাই। ড্রেন সবাই করতে পারে। বড় কাজ ক’জন করতে পারে।
প্রশ্ন: আপনি এমন সব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যেগুলোর সব সিলেট সিটি মেয়রের কাজের আওতায় পড়ে না।
আনোয়ারুজ্জামান: দু-একটা বড় প্রতিশ্রুতি আমি দিচ্ছি। আমি বলছি হাইস্পিড ট্রেন চালু করব। আমিও বলছি যে এটা সিটির প্রজেক্ট নয়। আমি সিলেটের মেয়র হবো আর আমি সিলেটের জন্য কাজ করবো না? ট্রেন রাজধানী থেকে সিলেটে আসবে। তা দিয়ে সিলেটের মানুষজনই যাতায়াত করবে।
আমি শুধু সিলেট সিটির মানুষের জন্য না, পুরো সিলেটবাসীর জন্য কাজ করব। সুযোগ যখন সৃষ্টি হয়েছে, নির্বাচিত হলে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে তা আদায় করবো। এটা আমার স্বপ্ন। এটি বড় কাজ। এটা দিয়েই কাজ শুরু করতে চাই। ড্রেন সবাই করতে পারে। বড় কাজ ক’জন করতে পারে।
প্রশ্ন: নগরে বিকল্প বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। এটা কী বাস্তবায়ন সম্ভব?
আনোয়ারুজ্জামান: সিলেটে প্রতিদিন ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। নগরীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি কিংবা জ্বালানি সংকটের জন্য প্রায়ই লোডশেডিং হয়। আমি নির্বাচিত হলে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে একটা ৩০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপনের কথা বলছি।
এটা সোলার হবে নাকি প্ল্যান্ট হবে, বা কী পদ্ধতিতে হবে সেটা পরিকল্পনা করে, বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে করতে হবে। যেটা বেটার হবে সিলেটের জন্য সেটাই করতে হবে।
এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ন্যাশনাল গ্রিডে থাকবে তবে ব্যবহার করবে সিলেট সিটি। অবশ্য এর জন্য প্রধানমন্ত্রীর পারমিশন প্রয়োজন। আমি বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী সিলেটবাসীর জন্য এটি অনুমোদন করবেন।
প্রশ্ন: নগরের অন্যতম বড় সমস্যা যানজট, ফুটপাত ও ছড়া দখল। অতীতের জনপ্রতিনিধিরা নানা উদ্যোগ নিয়েও এসব সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। আপনি এগুলো সমাধানে কতটুকু আশাবাদী?
আনোয়ারুজ্জামান: আমি আশাবাদী। তবে কেয়ারফুলি অ্যাড্রেস করতে হবে। হকার ও সিএনজি আমাদের জন্য একটা সমস্যা, ঠিক আছে। কিন্তু তারা তো এই নগরের মানুষ, এই দেশের মানুষ। তারা এই নগরীতেই বসবাস করেন।
আমাদের দেশে জবের সংকট আছে। ইন্ডাস্ট্রি নেই। আমরা যদি সরাসরি তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাই, তাহলে চুরি-ডাকাতি বেড়ে যাবে। কয়েক হাজার মানুষ বেকার হয়ে যাবে। এটা তো একদিনের বিষয়। একদিনে সিটি ক্লিন করে ফেলা যায়। তখন ওরা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে কোথায় যাবে?
প্ল্যান করে উইক-এন্ড মার্কেট, সান্ধ্য-মার্কেট করে তাদেরকে স্মার্টলি পুনর্বাসন করতে হবে। নগরীতে পরিকল্পিতভাবে সিএনজি স্ট্যান্ড করতে হবে। অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশা যেন নগরীতে ঢুকতে না পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।
নগরবাসীকে যানজট থেকে মুক্তি দিতে হকার উচ্ছেদও চাই। আবার তাদের পুনর্বাসনও চাই। তবে যা-ই করি না কেন মাস্টার প্ল্যানের আওতায় নিয়ে এসে করতে হবে।
প্রশ্ন: আপনি নির্বাচিত হলে ৫ বছরের পরের নগরের চিত্র কেমন দেখতে চান?
আনোয়ারুজ্জামান: আল্লাহর হুকুম যদি হয় আমি একবারের জন্যই মেয়র হতে চাই। এরপর আর জনগণ আমাকে ভোট দেবে না। জনপ্রিয়তা থাকবে না। কারণ ওই যে বড় বড় মানুষ, সে জানে সে ছড়ার মাঝে ঘর বানিয়েছে। তাদের বাড়ি-ঘর ভাঙলে তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করবে।
আরিফুল হক চৌধুরী এই বিপদেই পড়েছেন। আরিফ ভাই চেষ্টা করেছেন। অন্যদিকে কী করছেন তা আমি জানি না। কিছু তো অবশ্যই আছে। অকারেন্স নাই এটা আমি বলব না। ভালো কাজ করতে গিয়েও মানুষ বিপদে পড়ে। আমি ৫ বছরের মধ্যে যা আছে সব ভেঙে উচ্ছেদ কমপ্লিট করে আমার কাজ শেষ করবো। আমি এরপর আর মেয়র হতে চাইবো না।