ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের। তিনি এখন আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আপাতত হিরো আলম না থাকলেও আছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক মেজর সিকদার আনিছুর রহমান। আর বিএনপিসহ বিভিন্ন বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করলেও উদ্ভূত বাস্তবতায় তার প্রতি বিরোধীদের সমর্থন থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ছয় মাসের কম সময়ের আগে ঢাকা-১৭ আসন একদিক থেকে রাজনীতির জন্য গুরুত্বহীন। কিন্তু যেহেতু সরকারের সুষ্ঠু নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে আবার দলের হেভিওয়েট পার্থীকে জেতানোর তাগিদও রয়েছে, তাই ঢাকা-১৭ আসন নিয়ে অন্যরকম একটা আকর্ষণ তৈরি হয়েছে, সৃষ্টি হয়েছে উত্তেজনা। কেননা বিরোধী দলগুলো সরকার তথা আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই বার্তা পৌঁছাতে চাইবে যে, সরকার জনপ্রিয়তা হারিয়েছে।
মোহাম্মদ এ আরাফাত। ফাইল ছবি
এ আসনে আগামী ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে মনোনয়নে চমক দিয়েছে। দলের লীগের গত কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে চমক সৃষ্টি করা মোহাম্মদ এ আরাফাত গুলশানের এই ভিআইপি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি জাতীয় ব্যক্তিত্ব। টক শোর জনপ্রিয় মুখ। শিক্ষক। আছে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগও।
মোহাম্মদ এ আরাফাতের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সিকদার আনিছ রাজনীতিতে আনকোরা। অল্প কিছুদিন আগে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে প্রার্থমিক সদস্য পদ পাওয়া এই ব্যক্তি মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছেন। জাতীয় পার্টি তো তার সমর্থনে কাজ করবেই, এর সঙ্গে হিরো আলমকে যারা সমর্থন দিয়েছিলেন, শেষ পর্যন্ত যদি হিরো আলম প্রার্থিতা ফিরে না পান, তারাও গোপনে বা প্রকাশ্যে সিকদার আনিছুরকে সমর্থন ও সাহায্য করবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, যেহেতু শক্তিশালী বিরোধী দল বিএনপির প্রার্থী নেই, কিন্তু এ আসনে বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থক আছে; স্বাভাবিকভাবেই তারা ক্ষমতাসীনদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বেছে নেবেন।
হিরো আলম। ফাইল ছবি
হিরো আলম ঢাকা-১৭ আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দেয়ায় রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়। প্রকাশ্যে এবং গোপনে দু-একজন রাজনীতিবিদের তাকে সাহায্য করার খবর চাউর হয়। বিশেষ করে আন্দালিব রহমান পার্থের বিজিপি তাকে সহযোগিতা-সমর্থন করছে বলে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা ওঠে।
অবশ্য আরও একটি কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাতকে অনেকে ঠকাতে চাইবেন। তা হলো এ আসনে আওয়ামী লীগের স্থায়ী কোনো প্রার্থী নেই। যদি তিনি জিতে যান তাহলে পরবর্তীতেও তাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। সে ক্ষেত্রে গত কয়েকবার যারা মনোনয়নের চেষ্টা করেছেন এবং ভবিষ্যতেও পেতে আগ্রহী তাদের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তারা আরাফাতের বিজয় চাইবেন না। বিষয়টি টের পেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই এলাকার নেতাদেরকে গণভবনের ডাকেন এবং তাদেরকে মিলেমিশে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য অনুরোধ জানান।
সিকদার আনিছুর রহমান। ফাইল ছবি
সার্বিক বিষয়ে নিউজবাংলার কথা হয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. হারুনুর রশীদের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিএনপি বিভিন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছে না বটে তবে তারা আওয়ামী লীগকে হারানোর কৌশল নিয়েছে। আওয়ামী লীগকে হারিয়ে রাজনীতিকে একটা তামাশা বানাতে চাইছে। প্রমাণ করতে চাইছে সরকার জনপিয়তা হারিয়েছে এবং নির্বাচনী ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা নেই।
চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠানের (ফারুক) মৃত্যুতে শূন্য হয় ঢাকা-১৭ আসন। গত ১ জুন এই আসনে উপনির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন।