জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমকে হত্যা মামলার সব আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিকরা। এ ঘটনায় বকশীগঞ্জ থানার ওসি সোহেল রানার ভূমিকা হত্যাকারীদের পক্ষাশ্রিত হওয়ায় তাকেও মামলায় সম্পৃক্ত করার দাবি জানানো হয়েছে।
সোমবার দুপুরে জামালপুর প্রেসক্লাব আয়োজিত সাংবাদিক নাদিম স্মরণে শোকসভা ও দোয়া মাহফিলে এ দাবি করেন সাংবাদিক নেতারা।
জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদার সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষুব্ধ সাংবাদিকদের বক্তব্যে শোকসভাটি এক পর্যায়ে প্রতিবাদ সভায় পরিণত হয়।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক জামালপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান বলেন, “রাজাকার পরিবারের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় গত ১১ এপ্রিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীনা বেগমের ইন্ধনে তার সন্ত্রাসী বাহিনী সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলা করে। এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ ও ভিডিওবার্তায় নিরাপত্তাহীনতার কথা জানালেও ওসি সোহেল রানা সেসময় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ১৪ জুন ফের তিনি হামলার শিকার হলে ঘটনাটি ‘চোখে সামান্য আঘাত লেগেছে’ বলে মন্তব্য করেন ওসি। সাংবাদিক নাদিম নিহত হওয়ার পরও ওসির ভূমিকা রহস্যজনক।”
চ্যানেল ২৪ ও দৈনিক সমকালের স্টাফ রিপোর্টার আনোয়ার হোসেন মিন্টু বলেন, ‘এ পর্যন্ত ১৩ জন আসামি গ্রেফতার হলেও এজাহারভূক্ত আসামি গ্রেফতার হয়েছে মাত্র ৫ জন। এর মধ্যে প্রধান আসামি বাবু চেয়ারম্যানসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ডে পুলিশের অভিযান ব্যর্থ।’
ওসির ভূমিকা রহস্যজনক হলেও তাকেই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা করায় সাংবাদিক নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে ওসিকে প্রত্যাহারসহ তাকেও হত্যা মামলায় আসামি করার দাবি করেন তারা।
জামালপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘সাংবাদিক নাদিমের হত্যাকারী বাবু চেয়ারম্যানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চাচাতো ভাই সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেছুর রহমান পান্না এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীনা বেগমের ইন্ধন থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।’
এসময় রাষ্ট্রকে নিহত সাংবাদিকের পরিবারের যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ, সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি করেন সাংবাদিকরা।
শোকসভায় সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বলেন, ‘আমি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমি প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করতে চাই এবং আমার স্বামী হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো সাংবাদিককে এভাবে প্রাণ দিতে না হয়।’
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন, জামালপুর সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ৭১-এর সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম খান সজিব, জামালপুর প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি অধ্যাপক মো. সুরুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ কাফি পারভেজ, দৈনিক সচেতনকণ্ঠের সম্পাদক বজলুর রহমান, জেলা জাসদের সভাপতি জুলফিকার মো. জাহিদ হাবিব, কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি মোস্তফা মনজু, জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শওকত জামান, সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া জাহাঙ্গীর প্রমুখ।
সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে গত বুধবার (১৪ জুন) রাতে বকশীগঞ্জ বাজারের পাটহাটি এলাকায় হামলার শিকার হন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধি ও জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি নাদিম। পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ৩টায় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় ইতোমধ্যে বাবু চেয়ারম্যানকে র্যাব গ্রেফতারের পর বিজ্ঞ আদালত তাকে ৫ দিনসহ গ্রেফতারকৃতদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড দিয়েছেন।