কুমিল্লার দেবিদ্বারে আস্তানায় সাত বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় পির মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন শাহ সুন্নি আল কাদেরী ওরফে মাওলানা প্রফেসর মো. ইকবাল হোসাইনকে রাজধানীর মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
বাহিনীটির ভাষ্য, ভোটারদের ওপর ওই পিরের প্রভাব থাকায় তার বিভিন্ন অপকর্মে মদদ দিতেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইকবাল নিজেকে মাইজভান্ডারি দরবার শরিফের অনুসারী বলে দাবি করেন, তবে মাইজভান্ডারির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি তাদের অনুসারী না।
র্যাবের ভাষ্য, গত ২ জুন কুমিল্লার দেবিদ্বারে ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শিশুটির মা বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১১-এর যৌথ অভিযানে রোববার রাতে রাজধানীর মিরপুরে অভিযান চালিয়ে ইকবালকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইকবাল ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার তথ্য দিয়েছেন।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সোমবার দুপুরে মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘২ জুন দুপুর আনুমানিক ১২টায় ভিকটিম ইকবালের বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে গেলে তিনি ভিকটিমকে লিচু দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তার আস্তানায় ডেকে নিয়ে কৌশলে জোর করে ধর্ষণ করেন।’
তিনি বলেন, ‘একপর্যায়ে ভিকটিম সেখান থেকে পালিয়ে বাড়িতে আসলে তার মা তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। ইকবাল ও তার অনুসারীরা ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য ভিকটিমের পরিবারকে ভয়ভীতি দেখান। ইকবাল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে তার আস্তানা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান।’
‘ইকবালের আস্তানায় মাদক সেবনসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ড’
স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, ইকবাল কুমিল্লার চান্দিনা এলাকার তথাকথিত একজন পিরের মুরিদ এবং মাইজভান্ডারি দরবার শরিফের অনুসারী ও প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে দাবি করে আসছিলেন। তিনি প্রতারণার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরে তার বাড়িতে আস্তানা গড়ে তোলেন। ধর্মীয় বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকায় তিনি শুদ্ধভাবে আরবি পড়তে পারতেন না। বিভিন্ন ইসলামি বই পড়ে ও মোবাইলে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল শুনে কিছু ধর্মীয় বিষয় মুখস্ত করে সপ্তাহে এক দিন তার আস্তানায় জমজমাট আসর বসাতেন। সেখানে ধর্মীয় বিষয়ে বক্তব্য দিতেন এবং আস্তানার বাইরেও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতেন।
র্যাব জানায়, ইকবালের আস্তানায় আসা লোকজন মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপ করতেন। ইকবাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের এবং তার আস্তানার বিভিন্ন আইডি ও পেজ খুলে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতেন। ইতোপূর্বে তিনি বেশ কয়েকবার ‘অসামাজিক কার্যক্রমে’ লিপ্ত হলে স্থানীয় লোকজন তাকে ধরে ফেলে। পরবর্তী সময়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে অঙ্গীকারনামা দিয়ে সেখান থেকে ছাড়া পান। তার অন্ধ ভক্তরা তাকে উপহার হিসেবে টাকা-পয়সা, স্বর্ণ অলংকার ও গবাদি পশু দিতেন, যা তিনি নিজের ও নিজের আস্তানার জন্য ব্যয় করতেন।
যেভাবে পির
খন্দকার আল মঈন জানান, ইকবাল কুমিল্লার একটি স্থানীয় কলেজ থেকে স্মাতক শেষ করে বিভিন্ন কলেজে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকতা করতেন এবং স্থানীয় লোকজন তাকে ‘প্রফেসর’ বলে ডাকত। একপর্যায়ে তিনি স্থায়ী কোনো চাকরি না পেয়ে সহজে টাকা উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে স্থানীয় জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে পির হিসেবে দাবি করেন।
র্যাব আরও জানায়, ইকবাল তার বেশভূষা ও চলাফেরায় পরিবর্তন এনে পিরের লেবাস ধারণ করে নামের শেষে শাহ সুন্নি আল কাদেরী উপাধি যুক্ত করেন। তিনি ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনের অন্ধবিশ্বাসকে পুঁজি করে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিলেন। ঘটনার পর থেকে এলাকা থেকে পালিয়ে প্রথমে কক্সবাজার ও পরবর্তী সময়ে নারায়ণগঞ্জে আত্মগোপন করে। সর্বশেষ তিনি তার স্থান পরিবর্তন করে রাজধানীর মিরপুরে পরিচিত একজনের বাসায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।