রাজশাহী সিটি করপোরেশনের এক সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার বাসায় গিয়ে অবরুদ্ধ হয়েছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইশতিয়াক আহমেদ লিমন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, লিমন ওই নির্বাচন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করতে টাকা নিয়ে রোববার রাতে সেখানে গিয়েছিলেন। রাত ১২টার দিকে ওই বাসা থেকে উদ্ধার করে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয় লিমন।
লিমনের মামা এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী।
রাজশাহীর জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল হোসেন দাবি করেন, লিমনের সঙ্গে টাকা লেনদেনের কোনো ঘটনা ছিল না।
স্থানীয়রা জানান, রোববার রাত ৯টার দিকে নগরীর সাগরপাড়া এলাকায় নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল হোসেনের ভাড়া বাসায় ঢোকেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লিমন। এর পরপরই স্থানীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাকে ওই বাসায় অবরুদ্ধ করেন।
খবর পেয়ে লিমনের বাবা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর ইকবালসহ পরিবারের সদস্যরা বাসাটিতে যান। লিমনকে অবরোধকারী ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বাইরে নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন। রাত ১২টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পুলিশ লিমনকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্ত বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছিলাম লিমন তার মামাকে জেতানোর জন্য নির্বাচন কর্মকর্তাকে টাকা দিতে আসেন। লিমনের সঙ্গে আরও দুজন ছিলেন।
‘আমরা এই খবর পাওয়ার পর সেই বাসা ঘিরে রাখি। আমরা ওপরে ওঠার আগেই লিমনকে বাসায় অবরুদ্ধ করার সময় একটি ব্যাগ নিয়ে মোটরসাইকেলে দুজন পালিয়ে যান। সেখানে টাকা ভর্তি ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘লিমনের মামা আবদুল হামিদ সরকার টেকন নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। আগামী ২১ জুনের নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হয়েছেন। লিমনের বাবা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও রাজশাহী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল। লিমনের আরেক মামা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার।’
রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্ত অভিযোগ করেন, লিমনের মামা ভোটকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছেন। তিনি টাকার বিনিময়ে ভোটে জিততে চান।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের বোয়ালিয়া থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, ‘নগরীর সাগরপাড়া এলাকায় নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল হোসেনের ভাড়া বাসায় অবরুদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতা মীর ইশতিয়াক লিমনকে উদ্ধার করে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর বেশি কিছু এখন বলা সম্ভব না।’
আবুল হোসেন দাবি করেন, লিমন রাতে তার বাসার নিচে এসেছিলেন। তখন তাকে বাড়িতে চা খেতে ডেকেছিলেন। এর বেশি কিছু নয়। তার সঙ্গে কোনো টাকা লেনদেন হয়নি। তার বাড়ি থেকে কোনো টাকা উদ্ধার হয়নি।
নির্বাচন কর্মকর্তা দাবি করেন, লিমন তার কাছে জানতে চাইছিলেন ভোট সুষ্ঠু হবে কি না।
এই ঘটনার সর্বশেষ অবস্থা জানার জন্য সোমবার সকালে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, মহানগর পুলিশের মুখপাত্র, বোয়ালিয়া থানার ওসির মোবাইলে ফোনে কল দিয়ে কাউকেই পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঘটনা তদন্তে কাজ করছে পুলিশ। ওই বাড়িতে লিমন টাকা নিয়ে গিয়েছিলেন কি না বা এর সঙ্গে নির্বাচন কর্মকর্তার ভূমিকা কী ছিল, এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।