কারাগারে ২৬ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করা জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া মুক্তি পেয়েছেন। তবে কোথায় যাবেন, কী করবেন তা নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
শাহজাহান তার সাজা থেকে ১০ বছর পাঁচ মাস ২৮ দিন ক্ষমা পেয়েছেন। তাই ৩১ বছর ছয় মাস সাত দিন কারাভোগ করে রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্ত হন।
শাহজাহানের বের মুক্তির বিষয়ে ঢাকা কেরানীগঞ্জের জেলার মাহবুবুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, শাহজাহান এ পর্যন্ত ২৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেছেন। এতে প্রতি ফাঁসির জন্য তার দুই মাস করে শাস্তি মওকুফ হয়েছে।
তিনি বলেন, এ ছাড়া জেলে কেউ ভালো কাজ না করলে, কারও শাস্তি মওকুফ করা হয় না। তবে শাহজাহান জেলে থাকা অবস্থায় ভালো কাজ করে ১০ বছর পাঁচ মাস সাজা কমিয়েছেন।
জেল থেকে বের হয়ে শাহজাহান সাংবাদিকদের বলেন, আমি অপরাধ করেছি। সে জন্য জেলে এসেছি, সাজা ভোগ করেছি। আপনারা এখন আমার প্রতি মায়া দেখাচ্ছেন, লোকটা এত বছর জেল খেটেছে।
তিনি বলেন, আমার পেছনের দিকটা যদি আপনারা টান দেন। তাহলে দেখবেন আমি অতীতে কেমন ছিলাম। এখন আমি মায়ের গর্ভের থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার মতো অতীতের সবকিছু ভুলে গেছি। এখন আমি কীভাবে আগামী দিনে চলবো, থাকবো সেটা হচ্ছে বিষয়।
এ সময় তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমার বাড়ি, ঘর নেই। এত বছর জেল খাটার পর আমার কিছুই নেই। আমি যে এখন আমি কারাগার থেকে বেরিয়ে নিজের বাড়িতেও যাচ্ছি না। আমি আরেকজনের বাড়িতে গিয়ে উঠছি এখন। আমি এখন কী করে খাবো? কোথায় যাবো? কী করবো? আমার এখন আর কিছু করার বয়স নেই।
জল্লাদ শাহজাহান আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একটিই আবেদন, আমাকে যেন বাড়ি-ঘর ও একটি কর্মসংস্থান দিয়ে চলার মতো কিছু করে দেন। এটিই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন।
২৬ জন আসামিকে ফাঁসি দেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি বিচার প্রক্রিয়া শেষে কারাগারে সাজা ভোগ করছিলাম। তাই কারাগারে নিয়ম অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের কোনো না কোন কাজ করতে হয়। আমি একটু সাহসী ছিলাম বলে আমাকে জল্লাদের কাজে নিয়োগ করা হয়। এসব ফাঁসি আমার সিদ্ধান্তে আমি দেইনি, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি দিয়েছি।
কারাগার থেকে বের হওয়ার পর তিনি এখন কোথায় যাবেন প্রশ্ন করা হলে জল্লাদ শাহজাহান বলেন, আমার কোনো বাড়িঘর নেই। শুনেছি আমার এক বোন ও ভাগিনা আছে। তবে তাদের সঙ্গে আমার কখনো দেখা হয়নি। তবে এখন আমি বসুন্ধরার নর্দ্দা এলাকায় একজনের বাসায় যাচ্ছি। কারাগারে থাকার সময় তার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল।
কারাগার সূত্রে জানা যায়, জল্লাদ শাহজাহানের পুরো নাম শাহজাহান ভূঁইয়া। তিনি নরসিংদী জেলার পলাশ থানার ইছাখালী গ্রামের মৃত হাছেন আলীর ছেলে। ৭৩ বছর বয়সী শাহজাহান ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত। কারাগারে তার কয়েদি নম্বর ছিল ২৫৮৯/এ এবং মুক্তির আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান জল্লাদ ছিলেন
রেকর্ড অনুযায়ী, দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত শাহজাহান। একটি ডাকাতি করতে গিয়ে হত্যা মামলা এবং আরেকটি অস্ত্র আইনে মামলা। ১৯৯১ সালের ১৭ মে থেকে কারাগারে ছিলেন তিনি। দুই মামলায় তার ৪২ বছরের সাজা হয়েছিল।