বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘শায়েস্তা’ করতে চেয়ারম্যান বাবুর পরিকল্পনায় নাদিমকে হত্যা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ১৭ জুন, ২০২৩ ২০:০২

ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর অপকর্ম নিয়ে অনলাইন পোর্টালে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পরিকল্পিতভাবে সহযোগী সন্ত্রাসীদের নিয়ে রাতের আঁধারে নাদিমের ওপর হামলা চালান বাবু। এই হামলায় তার ছেলে রিফাতও অংশ নেন।

জামালপুরের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর পরিকল্পনাতেই সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

নৃশংস এই হত্যার ঘটনায় ইতোমধ্যে মূল পরিকল্পনাকারী স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বাবুসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের উল্লেখ করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) এমন তথ্য জানিয়েছে।

র‍্যাব জানায়, সাংবাদিক নাদিম সম্প্রতি বাবুর অপকর্ম নিয়ে অনলাইন পোর্টালে কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক নাদিমকে বিভিন্নভাবে হুমকিসহ তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন বাবু।

ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল মামলাটি খারিজ করে দেন। মামলা খারিজের বিষয়টি নিয়ে ভিকটিম নাদিম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়ায় বাবু আরও ক্ষিপ্ত হন। তিনি সাংবাদিক নাদিমকে ‘উচিত শিক্ষা’ দেয়ার পরিকল্পনা করেন।

সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম। ফাইল ছবি

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ জুন রাত আনুমানিক ১০টার দিকে সাংবাদিক নাদিমের বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জ বাজারের পাটহাটি এলাকায় বাবু তার সহযোগী সন্ত্রাসীদের নিয়ে ওঁৎ পেতে থাকেন।

নাদিম তার সহকর্মীসহ মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে বাবুর সন্ত্রাসীরা তাকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।

পরবর্তীতে পেছন থেকে দৌড় দিয়ে বাবুর নিয়োগ করা আরও কয়েকজন সন্ত্রাসী এসে তাকে মারতে মারতে পাশের একটি অন্ধকার গলিতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা সেখানে নিয়েও তাকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। নাদিমের সহকর্মী তাকে বাঁচাতে গেলে বাবুর সন্ত্রাসীরা তাকেও মারধর করে।

আর হামলার এই পুরো ঘটনায় নেতৃত্ব দেন প্রধান অভিযুক্ত চেয়ারম্যান বাবু। একপর্যায়ে ভিকটিম নাদিমের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে বাবু তার সন্ত্রাসী গ্রুপ নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

গুরুতর আহত অবস্থায় নাদিমকে প্রথমে জামালপুর সদর হাসপাতালে ও পরদিন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

ওই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে মাহমুদুল আলম বাবুকে প্রধান অভিযুক্ত করে বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

সাংবাদিক নাদিম হত্যার ঘটনায় শনিবার ভোরে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুসহ তিনজনকে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‍্যাব। অন্য দুজন হলেন- মো. মনিরুজ্জামান মনির ও জাকিরুল ইসলাম। এরপর সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আরেকজনকে। তার নাম রেজাউল করিম।

শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ‘র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৪ এর একটি দল স্থানীয় র‌্যাবের সহযোগিতায় শনিবার ভোরে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ ও বগুড়ার দুপচাঁচিয়া এলাকায় অভিযান চালায়। ওই অভিযানে সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম ওরফে বাবু, তার সহযোগী মনিরুজ্জামান মনির ওরফে মনিরুল, জাকিরুল ইসলাম ও রেজাউল করিমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

‘ঘটনার সময় প্রধান অভিযুক্ত বাবু নিকট স্থানে থেকে পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দেন। নাদিমের সহকর্মীরা তাকে বাঁচাতে গেলে বাবুর সন্ত্রাসীরা তাকেও মারধর করে। একপর্যায়ে সাংবাদিক নাদিমের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।

পঞ্চগড়ে আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপন করেন বাবু

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে চেয়ারম্যান বাবু গ্রেপ্তার এড়াতে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে তার এক দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়ীতে আত্মগোপন করেন। সেখান থেকে র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।

‘বাবুর বিরুদ্ধে জামালপুরের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। আর গ্রেপ্তার রেজাউল, মনির ও জাকির চেয়ারম্যান বাবুর সন্ত্রাসী গ্রুপের অন্যতম সহযোগী।’

সাংবাদিক নাদিম হত্যার ঘটনায় শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফ করে র‍্যাব। ছবি: নিউজবাংলা

বাবুর ছেলে রিফাতকে খুঁজছে র‌্যাব

র‍্যাব জানায়, সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন প্রধান অভিযুক্ত বাবুর ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত। তাকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাবু নিজেই এমন তথ্য জানিয়েছেন।

ফেসবুক লাইভে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন সাংবাদিক নাদিম। এরপরও তাকে মরতে হলো।

এ বিষয়ে র‍্যাবের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কমান্ডার মঈন বলেন, ‘ভুক্তভোগী সাংবাদিক ফেসবুকে লাইভ করেছেন, নিরাপত্তা চেয়েছেন। বিষয়টি স্থানীয় পুলিশ ভাল বলতে পারবে। তবে তিনি আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। তিনি যদি অভিযোগ করতেন তাহলে আমাদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ ছিল।’

নাদিমের ওপর হামলার ঘটনায় কতজন জড়িত ছিল জানতে চাইলে র‍্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘মামলার এজাহারে ২২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে উদ্ধার করা সিসিটিভি ফুটেজে আমরা দেখতে পেয়েছি ১০/১২জনকে। মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার তদন্তে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উঠে আসবে। সব আসামিকে গ্রেপ্তারের পর হয়তো এ বিষয়টি স্পষ্ট হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর