রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচন প্রতিযোগতিামূলক না হওয়ার শঙ্কা করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। বিএনপিসহ অন্যান্য কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
শনিবার রাজশাহী নগরের একটি রেস্তরাঁয় সুজনের রাজশাহী জেলা কমিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান তিনি। রাসিক নির্বাচনে যেন প্রকৃত অর্থেই গণরায়ের প্রতিফলন ঘটে, সুজনের পক্ষ থেকে সেই প্রত্যাশা করা হয়।
দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘সব দলের অংশগ্রহণে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ না হলেও যেসব দল ও প্রার্থীরা এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, তারা সবাই যেন নির্বাচন কমিশনসহ নির্বাচন-সংশ্লিষ্টদের কাছে সম-সুযোগ ও সম-আচরণ পান। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন, সরকার, জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট সব অংশীজন নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজ নিজ ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করে এ নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করবেন। আমাদের প্রত্যাশা, যেন এই নির্বাচনে প্রকৃত অর্থেই গণরায়ের প্রতিফলন ঘটে।’
বরিশালের নির্বাচনের পর ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের সিলেট ও রাজশাহী সিটি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়ায় এ দুটি নির্বাচন আরও প্রতিযোগিতাহীন হয়ে পড়বে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে রাসিক নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
এসময় লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, ২০১৮ সালের নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ৫ লাখ টাকার কম সম্পদের মালিক ছিলেন ৬৭ দশমিক ২৮ ভাগ প্রার্থী। এবারের নির্বাচনে এই হার ৫০ ভাগ।
অপরদিকে এবারের নির্বাচনে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। গত নির্বাচনে কোটিপতির হার ১ দশমিক ৮৪ ভাগ থাকলেও, এবারের নির্বাচনে তা হয়েছে ৩ দশমিক ৭০ ভাগ। ২০১৮ সালে কোটি টাকার অধিক উপার্জনকারী কোনো প্রার্থী না থাকলেও এবারের নির্বাচনে ৩ জন (১ দশমিক ৮৫ ভাগ) কোটিপতি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দিলীপ কুমার সরকার জানান, নির্বাচনে চারজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তিনজনের বার্ষিক আয় ৫ লাখ টাকার কম আর একজনের ৫ কোটি টাকার অধিক। তিনজন মেয়র প্রার্থীর আয়করের তথ্য পাওয়া গেছে। তার মধ্যে দুইজন ৪ হাজার টাকা কর প্রদান করেছেন আর একজন ৫১ লাখ টাকা কর প্রদান করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, যুদ্ধাপরাধী, নারী নির্যাতনকারী, মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি, ঋণখেলাপি, বিলখেলাপি, সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি, ভূমিদস্যু, কালো টাকার মালিক, কোনো অসৎ, অযোগ্য ও গণবিরোধী ব্যক্তিকে ভোট না দেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৩ সালের নির্বাচনে স্বল্পশিক্ষিত প্রার্থীর (এসএসসি ও তার নিচে) হার কমেছে। ২০১৮ সালে এই হার ছিল ৫৪ দশমিক ৩৭ ভাগ, যা এবার ৫২ দশমিক ৩৭ ভাগ। অপরদিকে উচ্চশিক্ষিত (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী) প্রার্থীর হার কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালের ২৫ দশমিক ৩৪ ভাগ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩ সালের নির্বাচনে এই হার দাড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৬৩ ভাগে।
স্বল্পশিক্ষিত প্রার্থীর হার হ্রাস পাওয়া এবং উচ্চ শিক্ষিত প্রার্থীর হার বৃদ্ধি পাওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে সুজন।
২০১৮ সালের নির্বাচনের সাথে তুলনা করলে দেখা যায়, এবারের নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার হার গতবারের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালে প্রার্থীদের মধ্যে ব্যবসায়ীর হার ছিল ৪৮ দশমিক ৩৮ ভাগ। এবারের নির্বাচনে তা দাঁড়িয়েছে ৫৮ দশমিক ৬৪ ভাগে।
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী জেলা সুজনের সভাপতি আহম্মেদ শফিউদ্দিন, মহানগর সুজনের সভাপতি পিয়ার বখশ্, জেলা সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম, সুজন রাজশাহীর সমন্নয়কারী মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।