বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পরিচ্ছন্ন, স্মার্ট সিলেট গড়তে আনোয়ারুজ্জামানের ২১ দফা

  • প্রতিবেদক, সিলেট   
  • ১৭ জুন, ২০২৩ ১৫:৫৫

নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার শুরুতে আনোারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে যে আশা করে সিলেটে প্রার্থী করেছেন, আমি সেই আশা পূরণে চেষ্টা করব। নগরবাসী আমাকে ভোট দিলে ঠকবেন না। আমি সিলেটকে একটি স্মার্ট সিটিতে রূপান্তর করব।’

সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও স্মার্ট নগর গড়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

নগরের একটি হোটেলের কনফারেন্স হলে শনিবার তিনি এ ইশতেহার ঘোষণা করেন।

ওই সময় দলীয় নেতা-কর্মী ও সিলেটের বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার শুরুতে আনোারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে যে আশা করে সিলেটে প্রার্থী করেছেন, আমি সেই আশা পূরণে চেষ্টা করব। নগরবাসী আমাকে ভোট দিলে ঠকবেন না। আমি সিলেটকে একটি স্মার্ট সিটিতে রূপান্তর করব।’

তিনি বলেন, ‘সিলেট একটি ঐতিহ্যবাহী নগর। এই নগরকে কোনো অবস্থাতেই নোংরা, দূষণ, যানজট, অনিরাপদ ও অনিশ্চয়তার নগর হিসেবে আমরা দেখতে চাই না। বর্ধিত নগর হিসেবে এখনই সময় পরিকল্পিত নগরায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা। পাশাপাশি এটাও সত্য যে, সিলেট ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শহর, আবেগের শহর, স্নিগ্ধতার শহর, লড়াই-সংগ্রাম-প্রতিবাদের শহর, অর্জনের শহর, গৌরবের-গর্বের শহর, ভালোবাসার শহর, একটি প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক শহর।’

সবাইকে নিয়ে, সবার সহযোগিতা নিয়ে সিলেটকে গড়ে তোলার আশাবাদ ব্যক্ত করেন আনোয়ারুজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘আমি আমার সাধ্য, বুদ্ধিমত্তা, যোগাযোগ, প্রচেষ্টা সব মিলিয়ে সিলেটের জন্য কাজ করতে চাই। আমি এই চ্যালেঞ্জটা নিতে চাই।’

যা আছে ইশতেহারে

আনোয়ারুজ্জামান ঘোষিত ইশতেহারে ২১ দফার মধ্যে রয়েছে স্মার্ট নগর ভবন, পয়ঃনিষ্কাশনে কার্যকর ব্যবস্থাপনা ও জলাবদ্ধতা নিরসন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিচ্ছন্ন নগরী ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন, পরিকল্পিত গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু ও যানজট নিরসন, সুরমার নাব্যতা বৃদ্ধি ও অকাল বন্যা রোধে পদক্ষেপ, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, বঙ্গবন্ধু উদ্যান নির্মাণ, ভালো মানের কর্মমুখী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও সবুজায়ন, নিরাপদ ও শান্তির নগর হিসেবে সিলেটকে গড়ে তোলা, দুর্যোগ মোকাবিলায় সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রস্তুতি ও তদারকি, বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য সোলার প্ল্যান্ট স্থাপন বা পৃথক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট, নগরে জাদুঘর স্থাপন, সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ, দক্ষিণ সুরমা থেকে সুরমা নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ, রাজধানীমুখী দ্রুতগামী ট্রেন চালুতে ভূমিকা রাখা, পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট তৈরি, খেলার মাঠের ব্যবস্থা, উদ্যোক্তা ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, নগরীর তারের জঞ্জাল পরিষ্কার ও প্রযুক্তিবান্ধব সিলেট গড়ে তোলা।

ইশতেহারে আনোয়ারুজ্জামান উল্লেখ করেন, স্মার্ট নগর ভবন হবে পরিপূর্ণ ডিজিটালাইজড। এর পাশাপাশি জনশক্তিকে আরও দক্ষ করে সেবার মানসিকতায় উদ্বুদ্ধ করা, মৌলিক নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা ও মাস্টার রোলে নিয়োগ বন্ধ করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় জনবল নিয়োগ করা হবে।

আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমান নগর ভবনের দিকে তাকালেই বোঝা যায় এর অবকাঠামোগত অবস্থা কী পরিমাণ শোচনীয়। ভবনটি অর্ধেক নির্মিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। ফটক বন্ধ, গাড়ির প্রবেশ এবং নির্গমন পথ অচিহ্নিত, সামনের খালি জায়গায় নির্মাণ যন্ত্রপাতি সংবলিত গাড়ি পার্ক করে রাখা, বেজমেন্টের র‌্যাম্পের ঢালেও গাড়ি রাখা—এই হলো অবস্থা। আর ভবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে তো দিশেহারা হওয়ার অবস্থা। কোথায় কী আছে, কোন দিকে কোন দপ্তর, তার কোনো সুশৃঙ্খল বিন্যাস নেই। তথ্যকেন্দ্রও অকার্যকর।’

পয়ঃনিষ্কাশনে কার্যকর ব্যবস্থাপনা ও জলাবদ্ধতা দূর করার আশ্বাস দিয়ে ইশতেহারে তিনি উল্লেখ করেন, ‘পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার খেসারত সিলেটবাসী দীর্ঘদিন ধরে দিতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে একটি পূর্ব গবেষণামূলক স্যানিটেশন সলিউশন প্ল্যান দরকার। ছড়া কখনই পয়ঃনিষ্কাশনের অংশ নয়। ছড়া বেয়ে বৃষ্টির পানি সুরমা নদীতে গিয়ে পড়বে। ছড়াগুলো উদ্ধার করে নদী পর্যন্ত এর পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা। তবেই জলাবদ্ধতা দূর হবে।’

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিচ্ছন্ন নগর এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের প্রসঙ্গে তার ইশতেহারে বলা হয়, ‘সিটি করপোরেশনের অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে জনস্বাস্থ্যের মানোন্নয়ন; নগরের সব শ্রেণির মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে সুস্থ থাকার ব্যবস্থা করা। সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ, প্রজনন ও শিশু স্বাস্থ্য, পরিবারকল্যাণ, রোগ প্রতিষেধক ব্যবস্থাসহ পুষ্টি, পরিবেশ, বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা।

‘এগুলো ঠিক রাখার জন্য নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় বিভিন্ন স্থান বা জলাশয়ে ফেলা এসব বর্জ্য পরিবেশের জন্য যেমন হুমকি তৈরি করছে, জমির উর্বরতা কমছে।’

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘এ ছাড়া প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে সুরমা নদী, খাল-বিল নাব্যতা হারাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতা সৃষ্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কঠিন, পুনর্ব্যবহারযোগ্য ও রান্নাঘরের বর্জ্য আলাদা করে সংগ্রহ করার ব্যবস্থা, এই বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া। অর্থাৎ টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা ও চিকিৎসাবর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণে সরকারের বিধিমালা মেনে চলা। ভোরের আগেই নগরীর বর্জ্য পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা। নাগরিকদের যত্রতত্র বর্জ্য ফেলার অভ্যাস পরিবর্তনে উদ্যোগ নেওয়া।’

পরিকল্পিত গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু ও যানজট নিরসন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা উল্লেখ করে আনোয়ারুজ্জামানের ইশতেহারে বলা হয়, ‘একটি নগরীর রাস্তার পরিমাণ হওয়া উচিত মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ। সিলেটে জনসংখ্যার সঙ্গে বাড়ছে যানবাহন; বাড়ছে না রাস্তা। ফলে বাড়ছে যানজট।

‘পরিকল্পনাহীন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা, চালক ও নাগরিকদের নিয়ম না মানার সংস্কৃতির জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। অসহ্য যানজটে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জীবনযাত্রা। এ জন্য পরিকল্পিত গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু ও যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। সেই সাথে সরু চৌরাস্তার মোড়ে অপ্রয়োজনীয় ও অকার্যকর স্তম্ভ অপসারণও জরুরি।’

সুরমা নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতিও রয়েছে আনোয়ারুজ্জামানের ইশতেহারে। এ প্রসঙ্গে বলা হয়, ‘সরকার সুরমা নদী খননের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি আমাদের জন্য বড় এক সুসংবাদ। এই কাজকে যথাযথ তদারকি করা ও দ্রুত শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণে উদ্যোগ নিয়ে সুরমা তীরবর্তী বাসিন্দাদের জলাবদ্ধতা থেকে স্থায়ী মুক্তি দেওয়ার দাবি আমাদের।’

সিলেট নগরে উন্মুক্ত উদ্যান করার দাবি দীর্ঘদিনের। এ বিষয়ে উদ্যোগ দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে সিলেটে কোনো স্থাপনা নেই। নগরীর পুরনো জেল সরানো হলেও এই এলাকাটি নগরবাসীর কোনো কাজেই আসছে না। আমরা চাই তা নগরীর জন্য উন্মুক্ত করে ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যান’ তৈরি এবং সেখানে সিলেটের নারী-শিশু-প্রবীণদের প্রাতঃ ও সান্ধ্যকালীন ভ্রমণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া। সেই সাথে সিলেটে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা।”

পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও সবুজায়নে গুরুত্ব দিয়ে ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়, ‘উন্নয়নের নামে সিলেটে বৃক্ষনিধন, পাহাড়, টিলা কাটা বন্ধ করা, পানির আঁধার বিনষ্ট আর করতে দেয়া যাবে না। গাছ কমে যাওয়ায় নগরীতে পাখিও কমে গেছে। একসময়ের দীঘির নগরী ছিল সিলেট। সব ভরাট হয়ে গেছে।

‘আর যেন কোনো দীঘি ও পুকুর ভরাট না হয়, সুরমা নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি, দূষণমুক্ত রাখতে উদ্যোগ নিতে হবে। পানির আঁধার রক্ষায় সচেতনতা তৈরি করতে হবে।’

ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা সিলেটে দুর্যোগ মোকাবিলায় সচেতনতা সৃষ্টি, প্রস্তুতি ও তদারকি, বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য সোলার প্ল্যান্ট স্থাপন এবং পৃথক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপন, পর্যটন সম্ভাবনাময় সিলেটে জাদুঘর স্থাপন ও সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণের কথা বলা হয়েছে ইশতেহারে।

এ ছাড়া পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট ও খেলার মাঠের ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তিবান্ধব নগর গড়তে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, বাসস্ট্যান্ড, রেলওয়ে স্টেশনে বিনা মূল্যে ওয়াইফাইয়ের ব্যবস্থা, সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ই-লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা, বাসিন্দাদের সমস্যা জানানো, সুবিধা-অসুবিধা জানানো, প্রয়োজনীয় তথ্যসমৃদ্ধ মোবাইল অ্যাপ চালু, সব ধরনের সেবা পর্যায়ক্রমে ডিজিটালাইজড করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় ইশতেহারে।

এ বিভাগের আরো খবর