গত বছরের ভয়াবহ বন্যার স্মৃতি মিইয়ে যাওয়ার আগেই সিলেটে ফের বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে জেলায়। বৃষ্টি আরও ১৫ দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ব্যাপক বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটের উজানে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে। এতে নামছে ঢল। ঢল আর বৃষ্টিতে সিলেটের নদ-নদীর পানি বেড়ে চলছে।
ঢল আর বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে চলতি সপ্তাহেই মাঝারি ধরনের বন্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
গত বছর সিলেটে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়। এতে তলিয়ে গিয়েছিল জেলার ৭০ শতাংশ এলাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল জেলার প্রায় সব মানুষ।
ওই বন্যায় ভেঙে যায় প্রায় ১০ হাজার ঘরবাড়ি। গতবারের বন্যার ধকল এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি ক্ষতিগ্রস্তরা।
ভারি বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা
ভারি বৃষ্টি হলেই সিলেট নগরে জলাদ্ধতা দেখা দেয়। গত বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকালের বৃষ্টিতেও তলিয়ে যায় নগরের অনেক এলাকা। এমন অবস্থায় আবার বন্যার আশঙ্কায় সিলেটে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয় জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৩৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। আর সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয় ৭৫ মিলিমিটার। এর আগে বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৭১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, ‘আগামী ৪৮ ঘণ্টা সিলেটে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে পাহাড়ি ঢল নামতে পারে।’
এদিকে সিলেটে নদ-নদীর পানি বাড়লেও এখন পর্যন্ত বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি
বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নিতে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয়ে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়।
ডিসি মজিবর রহমান বলেন, ‘সিলেটে গত কয়েক দিন ধরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। পূর্বাভাস রয়েছে আগামী ১৫ দিন সিলেটজুড়ে অতিবৃষ্টি হবে। এই কয় দিনে ১ হাজার ৪০০ মিলিমিটারের বৃষ্টিপাত হতে পারে সিলেট জেলায়। ফলে সিলেটে বন্যা হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বন্যা হলে এর ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাই। এই লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার জেলার সকল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছি।
‘সকলের কাছ থেকে নিজ নিজ উপজেলার পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হয়ে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।’
ইউএনও ও চেয়ারম্যানদের বরাত দিয়ে ডিসি বলেন, ‘নদীবেষ্টিত উপজেলাগুলোর নদীতে গত কয়েক দিনে বেশ পানি বেড়েছে, তবে এখনও বিপৎসীমার ওপরে উঠেনি। তারা (ইউএনও ও চেয়ারম্যান) জানিয়েছেন, নিজ নিজ উপজেলায় নগদ অর্থ ও চাল মজুত রয়েছে, তবে তা পর্যাপ্ত নয়।
‘নতুন করে চাহিদা পাঠাতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনে পর্যাপ্ত চাল ও নগদ অর্থ মজুত রয়েছে। চাহিদামতো উপজেলাগুলোতে পাঠানো হবে।’
বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের অবস্থা বিবেচনায় দ্রুত সরিয়ে নিতে প্রস্তুত থাকার জন্য সব উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান ডিসি।