জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিজিবি সদর দপ্তরে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৩তম সীমান্ত সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
গত ১১ থেকে ১৪ জুন ভারতের নয়াদিল্লিতে চার দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই অনুষ্ঠানের প্রতিক্রিয়া জানাতে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘প্রতিটি নির্বাচনে আমাদের বাহিনীর একটা ভূমিকা থাকে। নির্বাচনকালীন আমার ওপর যেসব অর্পিত দায়িত্ব থাকে এবং যেসব দায়িত্ব আসবে, সব দক্ষতা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে পালন করব।
‘নির্বাচন উপলক্ষে অনেক আগে থেকেই বাহিনীতে প্রস্তুতি শুরু করেছি।’
কেএনএফ নিয়ে আলোচনা
কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) বর্তমানে দেশের অন্যতম আলোচিত বিষয়। সংগঠনটির প্রধান নাথান বম একবার মিজোরামে যাচ্ছেন আবার বাংলাদেশে আসছেন। সীমান্তে এত কড়াকড়ি থাকলেও তিনি কীভাবে যাওয়া-আসা করছেন- সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে বিজিবি প্রধান বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলের ভূমিপ্রকৃতি খুবই দুর্গম। এমন জায়গাও আছে যেখানে মানুষের পদচিহ্ন পড়েনি। কুকি চিনের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি আমাদেরও অভিযান চলছে। আমরা চেষ্টা করছি বর্ডার দিয়ে যেন কেউ বাইরে ও ভেতরে যাওয়া-আসা না করতে পারে। সে জন্য আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
কেএনএফ প্রতিরোধে সেনাবাহিনী ও র্যাব কাজ করছে বলে জানান তিনি। কেএনএফ-এর কয়েকটি ক্যাম্পও তারা দখল করেছে ও প্রতিহত করেছে।
কেএনএফ প্রতিরোধে বিজিবি কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি না জানতে চাইলে ডিজি বলেন, ‘আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে দ্বৈত ভূমিকা পালন করি। সীমান্তের প্রাথমিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রোমের শান্তি রক্ষায়ও দায়িত্ব পালন করি। সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমরা যৌথ অপারেশন করছি। ‘আমরা কেএনএফ-এর বড় একটি ক্যাম্প দখল করেছি। সেখান থেকে অনেক ধরনের দেশি অস্ত্র, গোলাবারুদসহ তাদের ব্যবহারের অনেক কিছু উদ্ধার করেছে বিজিবি।’
যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের নির্মূল না করা যাবে ততক্ষণ বিজিবি কাজ করে যাবে বলে জানান তিনি।
নাথান বম সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে ভারতের মিজোরামে অবস্থানের বিষয়ে জানিয়েছেন। সীমান্ত সম্মেলনে তাকে ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে বিজিবি প্রধান বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক বিষয়। সেভাবেই আলোচনা হওয়া উচিত। নাথান বমকে হস্তান্তরের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আমি মূলত চেয়েছি বর্ডার সিল করে দেয়ার বিষয়টি, যাতে কোনো সন্ত্রাসী বর্ডার দিয়ে যাওয়া-আসা করতে না পারে।
বান্দরবানে সম্প্রতি দুই জন শ্রমিককে নিয়ে যায় কেএনএফ। তাদের বিষয়ে কোনো খোঁজ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা খোঁজ-খবর রাখছি। এ বিষয়ে যারা কর্তৃপক্ষ, তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।’
সীমান্তে বন্ধ থাকা ৫ কাজের অনুমোদন
সীমান্তে বন্ধ থাকা পাঁচটি কাজের অনুমোদন পাওয়া গেছে বলেও জানান বিজিবি মহাপরিচালক।
প্রকল্পগুলো হলো— রামগড় স্কুল ভবনের অসম্পন্ন কাজ, তিন বিঘা করিডোর এলাকায় ঝালংগী পকেট এবং ভিতরবাড়ি পকেট এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন, শেরপুর জেলার ভোগাই নদীর তীর সংরক্ষণ, জকিগঞ্জে কুশিয়ারা নদী ও রহিমপুর খালের সংযোগস্থল পুনঃখনন এবং নেত্রকোনা জেলার ভবানীপুর সীমান্তে ১ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাকাকরণ।
ওই পাঁচটি কাজের অনুমোদন প্রসঙ্গে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘পূর্বানুমতি ছাড়া সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ শুরু না করার ব্যাপারে উভয় বাহিনীর মধ্যে সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বন্ধ থাকা বেশ কয়েকটি উন্নয়নমূলক কাজ জয়েন্ট ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে দ্রুত সমাধানের ব্যাপারে সম্মতি পাওয়া গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবারের সম্মেলনে সব থেকে উল্লেখযোগ্য সাফল্য হচ্ছে, পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় বন্ধ থাকা উল্লেখযোগ্য পাঁচটি কাজ চালু করার ব্যাপারে অনুমোদন পাওয়া গেছে।’