চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের হাতিয়ারগুলো যাতে মানবতাকে আঘাত বা অবজ্ঞা করতে ব্যবহার না হয় তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার ‘স্মার্ট বাংলাদেশের নতুন অর্থনীতি এবং সমাজ’ শীর্ষক আলাপচারিতায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে স্মার্ট বাংলাদেশ নিয়ে এই আলাপচারিতার আয়োজন করে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম। অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে মানবতাকে আঘাত করা বা অবজ্ঞা করার জন্য চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের হাতিয়ারগুলো ব্যবহার হবে না। এক্ষেত্রে আমাদেরকে সম্মিলিতভাবে সাইবার আক্রমণ, গুজব এবং অন্যান্য অপকর্মের বিরুদ্ধে সুরক্ষাকবচ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
‘আমাদের এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আমাদের সমাজে আরও বিভাজন সৃষ্টি করবে না। এই উদ্দেশ্যে আমাদের বৈশ্বিকভাবে কার্যকর সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে হবে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘স্মার্ট শাসন ব্যবস্থার জন্য ভবিষ্যতে রাজনৈতিক নেতাদের তৈরি করতে বর্তমান সরকার স্মার্ট লিডারশিপ একাডেমি শুরু করেছে। সরকার বাংলাদেশের তরুণদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এবং ভবিষ্যতের কাজের জন্য প্রস্তুত করতে শুরু করেছে।’
বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা শুধু চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ট্রেন্ডকে অনুসরণ করবে না, তারা নেতৃত্ব দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সরকার প্রধান বলেন, ‘যখন দেখি যে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা রোবোটিক্সেও তাদের উদ্ভাবনী কাজ করছে তখন গর্ব অনুভব করি। সরকার সারাদেশে যে উদ্ভাবন মেলা করছে সেখানেও তাদের ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে। একটি স্বাধীন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের অংশীদারত্বকে স্বাগত জানাবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার ইতোমধ্যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য সঠিক আইন, নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরির কাজ করছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট, ন্যানোটেকনোলজিসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ আলাদা জাতীয় কৌশল তৈরি করছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ সারির প্রযুক্তি, ন্যানোটেকনোলজিসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হচ্ছে।’
একটি গ্লোবাল ডিজিটাল কম্প্যাক্ট তৈরিতে জাতিসংঘের কাজে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আশা করি এই গ্লোবাল কম্প্যাক্টে ডিজিটাল এবং সম্মুখ সারির প্রযুক্তির দায়িত্বশীল ও উৎপাদনশীল ব্যবহারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি সুস্পষ্ট নির্দেশিকা থাকবে।’
শিক্ষা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারি মিশ্র শিক্ষার অপার সম্ভাবনার বিষয়ে সরকারের চোখ খুলে দিয়েছে। আমরা মহামারির সময়ে দেশব্যাপী ডিজিটাল ব্যবস্থার সম্পূর্ণ সুবিধা নিতে পারি। আমরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে অনলাইনে স্থানান্তর করেছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কম-বেশি নিরবচ্ছিন্নভাবে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।’
টেলিভিশনে ক্লাস পরিবেশনের পাশাপাশি অনলাইনে পাঠ্যবই আপলোড করার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার সৃজনশীলতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে দেশের স্কুলগুলোর শিক্ষা কারিকুলাম পুনর্বিন্যাস করেছে। আমরা শিক্ষার্থীদের গতানুগতিক ধারায় তথ্য সংরক্ষণের পরিবর্তে তাদের নিজস্ব চিন্তা ও কাজকে উৎসাহিত করছি।
‘আশা করছি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সামাজিক ও বিশ্লেষণাত্মক দক্ষতা দিয়ে লালন-পালন করে বিশ্বমঞ্চে প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করা হবে।’
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে ‘ডেল্টা গভর্নিং কাউন্সিল’-এর তত্ত্বাবধানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করেছে। রাজধানী ঢাকার চারপাশে ৫টি নদী পুনরায় সচল করাসহ কিছু উচ্চ কার্যকর মেগা-প্রজেক্ট নিয়ে সরকার বর্তমানে বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করছে।
‘উচ্চাভিলাষী এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশে বড় ধরনের আন্তর্জাতিক অর্থায়ন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামকে (ডব্লিউইএফ) বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করার অনুরোধ জানাই।’