বাড়ির আঙিনায় হাসছে চার প্রজাতির দুর্লভ পদ্ম। আছে ছয় ধরনের শাপলা ও শালুক। পদ্ম ফুলের ওপর খেলা করছে ভ্রমর।
নয়নাভিরাম এমন দৃশ্যের দেখা মিলবে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার গুনানন্দী গ্রাম। ওই গ্রামের একটি বাড়িকে সবাই চেনেন ‘উদ্ভিদ জাদুঘর’ নামে। যিনি ফুল দিয়ে বাড়িটির শোভা বাড়িয়েছেন, তার নাম মোহাম্মদ আবু নাঈম।
চিকিৎসক আবু নাঈম পেশাগত কাজ বাদে বাকি সময়টা পার করেন গাছের সঙ্গে। কয়েক হাজার গাছের সংগ্রহ রয়েছে তার বাড়িতে।
যেসব গাছ আছে বাড়িটিতে
গুনানন্দীর সেই বাড়িতে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে বনজ, ফলজ, ঔষধি ও ক্যাকটাস জাতীয় হাজারো গাছ। বাড়ির ছাদ, বারান্দা, আঙিনা, ড্রইং রুম, ডাইনিং টেবিলে যেন গাছের মেলা।
বাড়িটির ড্রামের ভেতর পানিতে মনের খেয়ালে সাঁতার কাটতে দেখা যায় পদ্মের পরিবারকে। তাদের সঙ্গে জীবনের আনন্দে মেতে উঠতে দেখা যায় শাপলা, শালুক আর ভ্রমরকে।
আবু নাঈম জানান, পদ্ম কষ্টসহিষ্ণু গাছ। অল্প মাটিতে ছোট আকারের হয়। আবার বড় স্থান পেলে তা বিশালতায় মানুষকেও ছাড়িয়ে যায়।
তার ভাষ্য, পদ্ম চাষ করতে ছিদ্রবিহীন পাত্র যথেষ্ট। পচা গোবর আর এঁটেল মাটির মিশ্রণ জলে ডুবিয়ে তাতে কন্দ পুঁতে রাখলেই দেখা মেলে পদ্মের। বীজ থেকে চারা করা একটু সময়সাপেক্ষ। ফুল পেতে আরও দেরি হয়।
এ চিকিৎসক জানান, কুমিল্লার দক্ষিণগ্রাম বিলে দেশের প্রথম হলুদ পদ্মফুল দেখা যায়।
ব্যক্তি পর্যায়ে বাড়ির আঙিনায় হলুদ পদ্মফুল ফোটানোর সক্ষমতা খুব কমজনই জানেন। তাদের একজন ডা. আবু নাঈম। বাড়ির আঙিনায় প্রতিদিন বিকেলে নিয়ম করে ফুলের যত্ন নেন তিনি।
‘গাছ সংগ্রহ ও বিনা মূল্যে বিতরণ আমার নেশা। আমার বাগানে বনজ, ফলজ, ঔষধি ও ক্যাকটাস জাতীয় হাজারের বেশি গাছ রয়েছে; রয়েছে বিভিন্ন রঙের শাপলা, শালুক ও পদ্ম’, বলেন আবু নাঈম।
“এর আগে আমি সেন্ট মার্টিন দ্বীপে গাছ রোপণ করেছি। বিনা মূল্য বহুজনকে গাছের চারা বিতরণ করেছি। ‘গার্ডেনাস সোসাইটি’ নামে একটি পেজে আমরা যুক্ত হয়ে কাজ করছি”, যোগ করেন তিনি।
চিকিৎসকের গাছের নেশা নিয়ে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষি ও পরিবেশ সংগঠক মতিন সৈকত বলেন, ‘ডা. নাঈম একটা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, যেটাকে আমরা সবুজ আন্দোলন বলি। এই যে প্রকৃতিতে রুক্ষতা, দাবদাহ, তা গাছ কাটার ফল। সেখানে ডা. নাঈম নীরবে-নিভৃতে গাছ লাগিয়ে পরিবেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
‘পরিবেশকে নির্মল রাখতে ডা. মোহাম্মদ আবু নাঈমের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। ডা. নাঈমের মতো আমরাও সচেতন হই।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক কৃষিবিদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘পদ্ম প্রায় হারাতে বসেছে। পদ্মসহ বিভিন্ন দুর্লভ উদ্ভিদ ডা. মোহাম্মদ আবু নাঈম সংগ্রহ করছেন।
‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় উদ্ভিদ সংগ্রহ ও বিতরণ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। তার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।’