সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে ভোটার সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে করছেন দুজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তাদের একজন মনে করছেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি আস্থা বাড়ায় ভোটে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। এটি জাতীয় নির্বাচনেও অব্যাহত থাকবে। অন্যজন মনে করছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে দুটি কারণে ভোটার বেড়েছে, তবে উপনির্বাচনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম, যা জাতীয় নির্বাচনের সময়ও থাকতে পারে।
সম্প্রতি গাজীপুর, খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেককে ভোট দিতে দেখা যায়। ভোট দিতে আগ্রহ দেখা যায় তরুণ থেকে শুরু করে বেশি বয়স্ক মানুষকেও।
এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে মানুষের আগ্রহ বেশি দেখা গেছে। এগুলো ছিল স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এ ধরনের নির্বাচনে স্থানীয় বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়। প্রতিনিধিরা জনগণের কাছাকাছি থাকে। ভোটাররা নিজেদের স্বার্থেই অধিকসংখ্যক অংশ নেয়।’
এ শিক্ষাবিদ বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের আস্থা বাড়ছে। মানুষ সে কারণেই আগ্রহী হয়ে উঠছে। বাকি দুটিতেও পুনরাবৃত্তি ঘটবে। জাতীয় নির্বাচনেও তা অব্যাহত থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন এই আস্থা যদি ধরে রাখতে পারে, পরবর্তী নির্বাচনগুলো যদি শান্তিপূর্ণ হয়, সুষ্ঠু হয়, তাহলে আরও বেশিসংখ্যক জনগণ ভোট দিতে যাবে, সেটা বিএনপি আসুক বা না আসুক। কেননা প্রতিটা মানুষ তার সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করতে চায়।’
গত ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুলনায় ভোট পড়েছে ৪৫ শতাংশের কিছু বেশি। আর বরিশালে তা ৫০ শতাংশ।
এর আগে গত ২৫ মে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনেও ৫০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে এর আগে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ একটি সংবাদপত্রকে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ভোটারদের নির্বাচনে আগ্রহ কমে যাচ্ছে। একই কথা বলেছিলেন ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননও। তিনি জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেছিলেন। অবশ্য এসব মন্তব্যের বাস্তবতাও ছিল।
অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, উপনির্বাচনগুলোতে ভোটের হার ছিল অনেক কম। এ বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনগুলোতে ২৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি।
নির্বাচনে জনগণের আগ্রহ নিয়ে নিউজবাংলা কথা বলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঙ্গে। তিনিও স্বীকার করেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে মানুষের অংশগ্রহণ বেড়েছে।
ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়ার দুটি কারণ উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘প্রথমত, এসব নির্বাচনে স্থানীয় ইস্যু থাকে, প্রার্থীরাও স্থানীয়। প্রার্থী-ভোটার পরস্পর পরিচিত। আর বিশেষ করে কাউন্সিলর প্রার্থীরা বেশি ভোটার নিয়ে আসেন। এ কারণে মানুষ ভোট দিতে যায়।
‘আরেকটা হলো সম্প্রতি আমেরিকান ভিসা নীতির কারণে কেউ ভোটদানে বাধা দেবে না, ভোট কেন্দ্রে আসতে বাধা দেবে না; ভয়-ভীতি দেখাবে না। কিন্তু উপনির্বাচনগুলোয় ভোটার উপস্থিতি ছিল কম, যেটা জাতীয় নির্বাচনের বেলায়ও ঘটতে পারে।’
ভোটারের বিষয়ে ইতোপূর্বে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন ইসির সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব ও বর্তমান কমিশনার মো. আলমগীর।
তিনি বলেছিলেন, ‘ভোটের প্রতি মানুষের আস্থা এখন বেড়েছে। ভোটার উপস্থিতি এখন বেড়েছে। এতে বোঝা যায় ভোটের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে এবং সম্পূর্ণ আস্থা আছে। এ জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছে।’
একই দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও। সোমবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘জনগণ ভোট উৎসবে অংশ নিচ্ছে। বিএনপি নির্বাচনে না এলে জনগণ ভোট দিতে আসবে না, এমন দুঃস্বপ্ন দেখে লাভ নেই।’
এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে ভোটারদের বড় পরিসরে উপস্থিতির কথা উল্লেখ করেন তিনি।