নোয়াখালীতে বাসায় ঢুকে মা ও মেয়েকে কুপিয়ে হত্যার নেপথ্যের কারণ প্রবাসীর সঙ্গে প্রেম ও আর্থিক লেনদেন বলে জানিয়েছেন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার।
এই জোড়া হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত ওমান প্রবাসী আলতাফ হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর মেহার গ্রামের আবুল কালামের ছেলে।
বুধবার সন্ধ্যায় সুধারাম মডেল থানায় এক ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ওমান প্রবাসী আলতাফের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে মাইজদীতে বসবাস করছেন।
হত্যাকাণ্ডের শিকার নূর নাহার বেগমের সঙ্গে প্রবাসে থাকা অবস্থায় রং নম্বরের সূত্র ধরে পরিচয় হয় আলতাফের। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর নুরনাহার আলতাফকে ওমান থেকে দেশে এসে ব্যবসা করার জন্য বলেন। ব্যবসার মূলধন এবং তার সব দেনা বহনেরও আশ্বাস দেন তিনি।’
হত্যার শিকার নূর নাহার বেগম ও তার মেয়ে প্রিয়ন্তী। ফাইল ছবি
পুলিশ সুপার বলেন, ‘ভিকটিমের আশ্বাসে ৮ জুন আলতাফ ওমান থেকে ভিসা বাতিল করে সব ছেড়ে দেশে চলে আসেন। দেশে এসে নূর নাহার বেগমের বাসায় কয়েকবার গিয়ে ব্যবসার জন্য টাকা চান। ভিকটিম নুর নাহার তাকে ব্যবসার টাকা দিতে গরিমসি করতে থাকেন। বুধবার সকাল ১০টার দিকে পুনরায় টাকা চাওয়ার জন্য আলতাফ নুর নাহারের মাইজদী শহরের বার্লিংটন মোড়ের হক মঞ্জিলের বাসায় গেলে তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করেন।
গ্রেপ্তার আলতাফের দেয়া তথ্যের উল্লেখ করে পুলিশ সুপার জানান, টাকা চাওয়া ও দিতে না চাওয়া নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে টাকা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে আলতাফকে পুলিশে দেয়ার হুমকি দেন নুর নাহার।
বুধবার সন্ধ্যায় সুধারাম মডেল থানায় ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম। ছবি: নিউজবাংলা
একপর্যায়ে আলতাফকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিতে চাইলে আলতাফ সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে নুর নাহারকে তার কক্ষেরএভতরে উপর্যুপরি আঘাত করেন। ওই সময় নুর নাহারের মেয়ে ফাতেহা আজিম প্রিয়ন্তী মাকে রক্ষায় এগিয়ে এলে আলতাফ তাকেও উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে।
আহত হয়ে প্রিয়ন্তী দৌড়ে নিচতলার ভাড়াটিয়ার বাসার দরজায় ধাক্কা দিলে ভাড়াটিয়া দরজা খুলে দেন। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়ন্তী ডাইনিং রুমের মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়ে। প্রিয়ন্তীর পিছু পিছু আলতাফ হোসেন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাকে আটক করে।
এদিকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে নুর নাহার বেগম ঘটনাস্থলেই মারা যান। গুরুতর আহত প্রিয়ন্তীকে উদ্ধার করে জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। প্রিয়ন্তী এ বছর হরিনারায়ণপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল।
পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেপ্তার আলতাফকে থানা পুলিশ হেফাজতে নিয়ে নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে। একপর্যায়ে পুলিশের কাছে তিনি ঘটনার বিস্তারিত জানান। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি তার দেয়া তথ্যমতে তার মেস থেকে জব্দ করা হয়। নিহত মা ও মেয়ের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।’