রাজধানীর গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর বাংলাদেশ জঙ্গিবাদের আন্তর্জাতিক সূচকে উচ্চ ঝুঁকিতে ছিল বলে জানিয়েছেন পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) প্রধান ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এস এম রুহুল আমিন।
তিনি বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাগাতার অভিযান ও সবার চেষ্টায় সেই সূচকে বাংলাদেশে এখন লো রিস্ক (নিম্ন ঝুঁকি) ক্যাটাগরিতে রয়েছে।
রাজধানীর একটি হোটেলে বুধবার দুপুরে এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান এটিইউর প্রধান।
তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ বিষয়ে সন্তুষ্টির সুযোগ নেই। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বিট ও কমিউনিটি পুলিশিং। বাংলাদেশ একটা সময় জঙ্গিবাদের বৈশ্বিক ইনডেক্সে হাই রিস্কের (উচ্চ ঝুঁকি) দেশ ছিল। সেখান থেকে আমরা লো রিস্কের (নিম্ন ঝুঁকি) দেশে পরিণত হয়েছি।’
এটিইউর প্রধান বলেন, জঙ্গিবাদ সংক্রান্ত বৈশ্বিক অবস্থান নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার একটি পর্যালোচনামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ইনস্টিটিউট অফ পিস অ্যান্ড জাস্টিস নামক ওই প্রতিষ্ঠানটি জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের দিক থেকে পাঁচটি ক্যাটাগরি করেছে। তা হলো ভেরি হাই রিস্ক, হাই রিস্ক, মিডিয়াম রিস্ক, রিস্ক ও লো রিস্ক।
তিনি বলেন, ‘২০১৬/১৭ সালে আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তখন আমরা হাই রিস্ক ক্যাটাগরিতে ছিলাম। ২০১৬ সালে (বাংলাদেশ) ছিল ২২তম। ২০১৭ সলে ছিলাম ২১তম। অর্থাৎ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশের একটি ছিলাম। এরপর থেকে আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগের ফলে আমাদের গ্লোবাল ইনডেক্সে উন্নতি ঘটে। ধীরে ধীরে আমরা হাই রিস্ক থেকে মিডিয়াম রিস্কে এবং সর্বশেষ এ বছর আমরা লো রিস্ক ক্যাটাগরিতে ধাবিত হয়েছি।
‘আমাদের অবস্থান এখন ৪৩তম। রেটিং পয়েন্ট ৩.৮২। উপমহাদেশে আমাদের নিচে রয়েছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান। এমনকি ভারতও রয়েছে আমাদের নিচে ১৩তম অবস্থানে।’
পুলিশের জ্যেষ্ঠ এ কর্মকর্তা বলেন, ‘উন্নত দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জামানি ও যুক্তরাজ্যও আছে আমাদের চেয়ে বেশি রিস্কে। চারটি দেশই রয়েছে মিডিয়াম রিস্কে। আমরা ভালো কিছু করতে পেরেছি, যা বিশ্বের অনেক দেশের কাছে ঈর্ষণীয়।
‘শুধু তাই নয়, যে দেশটি থেকে আমরা আলাদা হয়েছি স্বাধীনতাযুদ্ধের মাধ্যমে তাদের চেয়ে শুধু ইনডেক্সে নয়, অর্থনৈতিক অবস্থানেও পাকিস্তান থেকে আমরা অনেক বেশি নিরাপদ।’
এটিইউর প্রধান বলেন, ‘২০১৩ সালে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী, লেখকদের ওপর হামলা শুরু করে। সঙ্গে যোগ দেয় নিউ জেএমবি। ২০১৬ সালে হোলি আর্টিজানে হামলা ছিল সবচেয়ে ভয়ংকর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদবিরোধী জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেন। ২০১৯ সালে এটিইউ কার্যক্রম শুরু করে একটি বিধিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে।
‘প্রথম মাত্র ৬০০ জনবলে শুরু। এরপর কোভিড মহামারি, এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু। সারা দেশেই অর্থনৈতিক কৃচ্ছ্রতা সাধন নীতি গ্রহণ করা হয়, যে কারণে এটিইউ আর সম্প্রসারণে যেতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘সীমিত অবস্থানে থেকেও দেড় শতাধিক অভিযানে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৩০০ জঙ্গি গ্রেপ্তার করেছে এটিইউ। অনেক সাজাপ্রাপ্ত, যুদ্ধাপরাধীসহ সেনসেশনাল মামলার আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সফট ও হার্ড অ্যাপ্রোচের আলোকে কাজ করছে এটিইউ। পাশাপাশি সচেতনতায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।’
এটিইউর প্রধান আরও বলেন, ‘বিট পুলিশিং ও কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে অনেক বেশি কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব। কীভাবে জঙ্গিকে সনাক্ত করা যায়, শিক্ষকদের দায়িত্ব কী, ছেলে-মেয়েদের চলাফেরায় কী কী বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, তা সচেতন করা সম্ভব।
‘বিট ও কমিউনিটি পুলিশিংয়ের কার্যক্রমকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে জঙ্গিবাদ দমন করা যায়, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।’