সিটি নির্বাচনের এক সপ্তাহেরও কম সময় আগে ফের জলাবদ্ধতায় নাকাল হলেন সিলেট নগরবাসী। বুধবার তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে সিলেট নগরী। তলিয়ে যায় সড়ক ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। বাসাবাড়িতেও ঢুকে পড়ে পানি। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে ২১ জুন। জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রতি দিচ্ছেন এ নির্বাচনের প্রার্থীরা। আর বর্তমান মেয়র ও কাউন্সিলরদের দাবি, জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতোমধ্যে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে নতুন-পুরনো প্রার্থীদের কথার লড়াইয়ের মধ্যেই বুধবার সকালে নগরের বেশির ভাগ এলাকা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়।
বুধবার ভোর থেকেই ভারি বৃষ্টি শুরু হয় সিলেটে। আবহাওয়া অফিসের হিসাব অনুযায়ী, সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত এখানে ৪৬ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এ বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় নগরী।
বৃষ্টিতে সড়ক উপচে পানি ঢুকে পড়ে নগরের বইয়ের বাজার হিসেবে পরিচিত রাজা ম্যানশনে। মার্কেটের নিচ তলার অর্ধশতাধিক দোকানে পানি ঢুকে কোটি টাকার বই নষ্ট হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
রাজা ম্যানশনের পপি লাইব্রেরির স্বত্বাধিকারী গোলজার আহমদ বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুনি মার্কেটে পানি ঢুকে গেছে। এসে দেখি সব শেষ। আমার দোকানের ভেতরে হাঁটুর ওপরে পানি।
‘নিচের সব বই ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘একটু ভারি বৃষ্টি হলেই আমাদের মার্কেটে পানি ঢুকে যায়। এভাবে তো ব্যবসা করা সম্ভব না।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারী বৃষ্টির ফলে নগরের মদিনা মার্কেট, আখালিয়া, সুবিদবাজার, জালালাবাদ, হযরত শাহজালাল (র.) মাজার এলাকার পায়রা ও রাজারগল্লি, বারুতখানা, হাওয়াপাড়া, যতরপুর, ছড়ারপাড়, উপশহর, সোবহানিঘাট, ঘাসিটুলা, তালতলাসহ নগরের বেশির ভাগ এলাকার সড়ক তলিয়ে যায়। অনেক এলাকায় সড়কে হাঁটু পানি দেখা গেছে। সড়ক উপচে পানি ঢুকে পড়ে মানুষের বাসাবাড়িতে।
ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা মিশ্রিত পানি বাসা-বাড়িতে ঢুকে পড়ায় দুর্ভোগে পরেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।
নগরের জামতলা এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই বাসায় পানি ঢুকে পড়ে। আজকেও পানি ঢুকে অনেক আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরের ভেতরে দুর্গন্ধে টেকা যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন থেকে এত প্রকল্প নেয়া হয়, প্রচুর টাকা ব্যয় করা হয়। তবু আমরা কোনো সুফল পাচ্ছি না।’
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচিত হওয়ার পর ওই বছরই জলাবদ্ধতা নিরসনে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এরপর ২০১৪ সালে ৭৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা ও ২০১৫ সালে আরও ১১ কোটি টাকা বরাদ্ধ আসে। আর ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারি বরাদ্দে ২৩৬ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়।
সূত্রটি আরও জানায়, ২০১৯ সালে ‘সিলেট সিটি করপোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পে বরাদ্দ আসে ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যয় করা হয় ২৬৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৯৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৯৮ কোটি ৪৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়। প্রকল্পটির আওতায় অন্যান্য কাজের সঙ্গে ৩২৭ কিলোমিটার ড্রেন ও ৮ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হয়।
এত বিপুল ব্যয় সত্ত্বেও জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ প্রসঙ্গে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘বেশি পরিমাণ বৃষ্টির কারণে ড্রেন দিয়ে পানি নামতে সময় লাগছে। সিটি করপোরেশনের টিম কাজ করছে। কোথাও ময়লা-আবর্জনার জন্য পানি আটকে গেলে তা পরিষ্কার করে দেয়া হচ্ছে, তবে বৃষ্টি থামলেই পানি নেমে যাবে।’
নগরে অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে জলাবদ্ধতা নিরসন হচ্ছে না দাবি করে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘অপরিকল্পিত উন্নয়ন হওয়ায় নগরবাসী এসব কাজের কোনো সুফল পাচ্ছে না; বরং টাকার অপচয় হয়েছে।’
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসেন বলেন, ‘রাতে ও সকালের কিছু সময় সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৪৬ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এটা স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত। সারা দিন থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।’