চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নে জড়িত পাঁচ আসামি জামিনে ছাড়া পেয়ে ক্যাম্পাসে ফিরেছেন। শুধু তাই নয়, তারা সংগঠিত হয়ে বন্ধুবান্ধব নিয়ে নিপীড়নের শিকার ওই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে প্রক্টরকে দুই দফা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ছাত্রী। গত ২৯ এপ্রিল পুনরায় হেনস্তার শিকার হয়ে প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন তিনি।
এরপর সোমবার দেয়া এক লিখিত অভিযোগে ওই ছাত্রী লেখেন, ‘গত ২৯ এপ্রিল একদল ছেলে আমাকে আবার হেনস্তার চেষ্টা করে এবং সেই বিষয়ে আমি আপনাকে (প্রক্টরকে) সে সময়েই অবগত করেছি। সে সঙ্গে ৩০ এপ্রিল অভিযোগপত্র দাখিল করেছি। সেই ঘটনা নিয়ে সেদিন থেকেই সেই নিপীড়ক মহল অনলাইনে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা প্রচারনা চালাচ্ছে, হুমকি এবং বিভিন্ন মানহানিকর বক্তব্য দিচ্ছে, এগুলো স্পষ্টই আইনের লংঘন এবং কিছু মন্তব্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’
তিনি আরও লেখেন, ‘অপরাধীরা যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে আদালতে সাক্ষ্য পর্যন্ত দিয়েছে, তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরি করছে এবং বিভিন্নভাবে আকারে ইঙ্গিতে আমাকে উদ্দেশ্য করে কথা বলছে। যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটার পরে যে কারও মানসিক অবস্থা যদি ন্যূনতম বিবেচনা করা হয়, তাহলেই বুঝতে পারা যায় অপরাধীদের এরকম অঙ্গভঙ্গি কিংবা অবাধে চলাফেরা আমাকে কতটা অনিরাপদ বোধ করায় এবং আমার মানসিক অবস্থার কতটা ক্ষতি করে। যেখানে অপরাধীরা অবাধে চলাফেরা করছে, প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে আমার ক্ষতি সাধন করবে না, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই এবং আমার নিরাপত্তাও নিশ্চিত নয়। আমি অবিলম্বে অপরাধীদের ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।’
যৌন হেনস্তার শিকার ওই ছাত্রী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসামিরা ক্যাম্পাসে ঘোরাফেরা করছে। তারা আমার হলের সামনেও ঘোরাফেরা করছে। তারা আমাকে টিজ করছে, হল থেকে বের হলে আমাকে ইঙ্গিত করে আশেপাশের মানুষদের দেখিয়ে দিচ্ছে। তাদের কাছের মানুষজন আমাকে নিয়ে মিথ্যাচার করছে, সোস্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি করছে।
‘অন্যদিকে তাদের জামিনের বিষয়ে আমার আইনজীবীও আমাকে কিছু জানাননি, আমাকে সাবধান বা হুঁশিয়ারও করেনি।’
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের সময় দাবি ছিল অপরাধীরা ক্যাম্পাসে থাকতে পারবে না। কিন্তু সে দাবি মানাই হচ্ছে না, উল্টো আমাকে টিজ করে তারা চলে যাচ্ছে। এই বিষয়ে কারও কোনো পদক্ষেপ দেখছি না৷ আমি আমার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে একটা তদন্ত কমিটি করেছি। তারা এটা নিয়ে কাজ করছে।’
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আবুল মনছুর বলেন, ‘আমরা আজকে বৈঠক করেছি, ওই ছাত্রীর সাক্ষাতকার নিয়েছি। সে যাদের নামে অভিযোগ করেছে, তাদের নামের তালিকা করেছি।
‘তাদের (অভিযুক্তদের) আমরা ডাকব, জিজ্ঞাসবাদ করব। মেয়েটির অভিযোগ শুনে প্রক্টরিয়াল বডিকে বলেছি, যারা ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।’
২০২২ সালের ১৭ জুলাই রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ‘হতাশার মোড়’ থেকে হলে ফেরার পথে এক ছাত্রী ও তার বন্ধুকে আটকে বোটানিকেল গার্ডেন এলাকায় নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন কয়েকজন। এ সময় ওই ছাত্রীকে মারধর ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে নিপীড়নকারীরা।
যৌন নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সেই পাঁচজন হলেন- চবির ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আজিম হোসাইন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের নুরুল আবছার বাবু, হাটহাজারী কলেজের ছাত্র নুর হোসেন শাওন, মাসুদ রানা ও সাইফুল।
তাদের মধ্যে ইতিহাস বিভাগের আজিম হোসাইন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের নুরুল আবছার বাবুকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়।
তাদের নামে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১০ ধারায় মামলা করে ওই ছাত্রী। পাশাপাশি যৌন নিপীড়নে জড়িত আসামিদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নিষদ্ধ করে চবি প্রশাসন।