বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আড়াই মাসের এমপি হতে দৌড়-ঝাঁপ

  •    
  • ১৩ জুন, ২০২৩ ০৮:২৮

একাদশ সংসদের মেয়াদ শেষ হতে বাকি আছে ৭ মাসের কিছু বেশি সময়। মেয়াদের শেষ তিন মাসে সংসদ নির্বাচনের বিধান রয়েছে। সে হিসাবে চট্টগ্রাম-১০ আসনে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত এমপি সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাবেন আড়াই মাস থেকে সর্বোচ্চ ৫ মাস। এই আড়াই মাসের এমপি হতে আগ্রহী চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ডজনখানেক নেতা।

ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘদিন লড়াই করে সম্প্রতি মারা যান চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আফছারুল আমিন। তার মৃত্যুতে বন্দর নগরীর ডবলমুরিং, পাহাড়তলী ও হালিশহর থানা এলাকায় সিটি করপোরেশনের ৮টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত আসনটি শূন্য ঘোষণা হয়ে পড়েছে।

ইতোমধ্যে এই আসনে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ৩০ জুলাই এই আসনে ভোটগ্রহণ হবে।

এদিকে একাদশ সংসদের মেয়াদ শেষ হতে বাকি আছে ৭ মাসের কিছু বেশি সময়। তাছাড়া মেয়াদের শেষ তিন মাসে সংসদ নির্বাচনের বিধান রয়েছে। সে হিসাবে চট্টগ্রাম-১০ আসনে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত এমপি সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাবেন আড়াই মাস থেকে সর্বোচ্চ ৫ মাস।

এই আড়াই মাসের এমপি হতে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ডজনখানেক নেতা। তাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন- নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, সাবেক সিটি প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, সাবেক মেয়র মনজুর আলম, যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু, যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ, প্রয়াত আফছারুল আমীনের ভাই এরশাদুল আমিন, ছেলে ফয়সাল আমিন ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা এমদাদুল ইসলাম।

তবে আলোচনায় থাকলেও খুব একটা দৌড়-ঝাঁপ দেখা যাচ্ছে না আ জ ম নাছির উদ্দিনের। সম্প্রতি সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মোসলেম উদ্দিনের মৃত্যুর পর চট্টগ্রাম-৮ আসন শূন্য হলে ওই আসনেও মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় ছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি তিনি। আলোচনায় থাকলেও এবারও তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন না বলে ধারণা নগর আওয়ামী লীগের একাংশের।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে আ জ ম নাছিরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মূলত নির্বাচন ও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ প্রশ্নে মুখে কুলুপ এঁটে আছেন নগর আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনও আলোচনায় ছিলেন চট্টগ্রাম-০৮ আসনে তৃতীয় দফায় উপনির্বাচনের আগে। শেষ পর্যন্ত তিনিও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। এদিকে সম্প্রতি দলের পক্ষ থেকে তাকে চট্টগ্রামে ১৪ দলের সমন্বয়ক করা হয়। দায়িত্ব পেয়ে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ১৪ দলের সমাবেশের আয়োজেন করেন তিনি। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সেই সমাবেশে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের চেয়ার ছোড়াছুড়িই গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়। এতে প্রথম পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হিসেবে ধরে নেয়া হচ্ছে ‘চট্টগ্রামের ফাটাকেষ্ট’ খ্যাত এই নেতাকে। উপনির্বাচন ঘিরে আলোচনায় থাকলেও তিনিও অনেকটা চুপচাপ।

সাবেক মেয়র মনজুর আলম নগরীর দক্ষিণ কাট্টলী এলাকার দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর ছিলেন। ২০১০ সালে বিএনপিতে যোগ দিয়ে টানা তিনবারের মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন মনজুর।

২০১৫ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়ে আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। তবে ওই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে তিনি ভোট বর্জন করেন। এরপর অনেকটাই বলে-কয়ে রাজনীতি থেকে অবসরে যান মনজুর। বছর ঘুরতেই ফের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি।

উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে মনজুর আলম বলেন, ‘এখনও তো মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়নি। আমি এখনও চিন্তা করিনি। মনোনয়ন ফরম দেয়া শুরু হলে তখন দেখা যাবে। তাছাড়া মনোনয়ন দেয়ার মালিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’

এই তিন বড় নেতার বাইরে মনোনয়নের দৌড়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছেন যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক। ১৯৭৫ সালে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র থাকা অবস্থায় কলেজ ছাত্রলীগের পক্ষে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় মামলায় জড়ান তিনি। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ৪ বছর জেল খাটেন।

এই আসনে গেল নির্বাচনেও মনোনয়ন চেয়েছিলেন মাহমুদুল। তবে এবার নিজেকে মাঠের ত্যাগী রাজনীতিবিদ দাবি করে মনোনয়নের বিষয়ে আশাবাদী তিনি। বলেন, ‘আফছার ভাই মারা গেছেন, আমরা এখনও শোক কাটিয়ে উঠতে পারিনি। আমি এখন মনোনয়নের বিষয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না।

‘তবু তৃণমূলের কর্মী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী যদি মনোনয়ন দেন তাহলে আমি বৃহৎ পরিসরে কাজের সুযোগ পাব। আমি মাঠের কর্মী, ১৯৭৫ সালে মৌলভী সৈয়দসহ আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করে কারাভোগ করেছি চার বছর। আমার বাবা-ভাইকেও কারাভোগ করতে হয়েছে আমার জন্য।’

মনোনয়ন দৌড়ে আলোচনায় আছেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুও। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েও পাননি তিনি। যুবলীগের রাজনীতি ছেড়ে এখন আওয়ামী লীগে সক্রিয় তিনি। মনোনয়ন দৌড়ে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবেই ধরা হচ্ছে তাকে।

উপনির্বাচনে নিজের আগ্রহের বিষয়ে বাচ্চু বলেন, ‘এই আসনে আমার সাংগঠনিক বিচরণ ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। ইউনিট, ওয়ার্ড ‌ও মহানগর ছাত্রলীগে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনকালে রাজনৈতিক কঠিন সংগ্রামের দিনগুলোতে আমি এই আসনেই সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করেছি।

‘বিভিন্ন দুর্যোগ তথা করোনাকালীন সময়েও সার্বক্ষণিকভাবে সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে এই এলাকার মানুষের পাশে ছিলাম। এলাকার সাধারণ মানুষও আমাকে তাদের লোক মনে করে। এটাই আমার শক্তি। আমি মনোনয়ন চাইব। তবে মনোনয়ন দেওয়র মালিক জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার সিদ্ধান্তই আমাদের শিরোধার্য।’

যুবলীগের যুগ্ন আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদও সক্রিয় হচ্ছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। নগর আওয়ামী লীগের পরবর্তী সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ পদপ্রত্যাশী এই নেতা চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থিতা ইস্যুতে আলোচনায় আছেন।

ফরিদ মাহমুদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই মনোনয়ন দেবেন। তবে সাংগঠনিক কর্মী হিসেবে প্রত্যেকের মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার আছে, আমিও চাইব। আমি মনোনয়ন পেলে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি বৃদ্ধির জন্য কাজ করব।’

প্রয়াত সংসদ সদস্য আফছারুল আমিনের ভাই এরশাদুল আমিনকেও মনোনয়নের দৌড়ে যোগ্য মনে করছেন অনেকে। ১৯৯১ সালের বন্যায় বড় ভাই আফছারুল আমীনের সঙ্গে কাজ করেছেন বলে দাবি তার।

তিনি বলেন, ‘আমার বড় ভাইয়ের পাশাপাশি আমিও রাজনীতি ও জনসেবায় সক্রিয় ছিলাম। বড় ভাইয়ের সঙ্গে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের জন্য কাজ করেছি। তাছাড়া ছাত্র জীবনে আমি এম ই এস কলেজে ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলাম। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আমার বড় ভাই অনেক অসমাপ্ত কাজ রেখে মনে বড় দুঃখ-কষ্ট নিয়ে চলে গেছেন। তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য আমরা পরিবার থেকে একজন মনোনয়ন চাইব।’

এছাড়াও মনোনয়নের বিষয়ে আলোচনায় আছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা এমদাদুল ইসলাম। তবে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার অনেকটাই শূন্য। তবুও আওয়ামী লীগ থেকে তিনি মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে।

প্রার্থিতার দৌড়ে আছেন প্রয়াত সংসদ সদস্য আফছারুল আমীনের ছেলে ফয়সাল আমিনও। তবে পরিবার থেকে যে কোনো একজন মনোনয়ন চাওয়ার বিষয়ে পারিবারিক সিদ্ধান্ত হওয়ায় ওই পরিবার থেকে এরশাদুল আমিনকেই এগিয়ে রাখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত টানা চারটি নির্বাচনে এই আসনে বিজয়ী হন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী। সেই হিসেবে এই আসনকে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবেই দেখেন অনেকে। তবে এই উপনির্বাচনে এখন পর্যন্ত বিএনপি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের কারও কোনো তৎপরতা নেই।

এ বিভাগের আরো খবর