নরসিংদীতে এক নারীর মৃত্যুর ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও খাটের নিচে তার মরদেহ রেখে দিয়েছিলেন স্বজনরা। তার ফিরে আশার অপেক্ষায় ওই মরদেহের সঙ্গে বসবাস করছিলেন তারা।
মনোহরদী উপজেলার পৌর এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পরিবারটি আটরশী পীরের মুরিদ বলে পরিচিত। অবcMষে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে নিজ বাড়িতে থাকতেন মোক্তার উদ্দীন তালুকদার। গত সোমবার ভোরে তার স্ত্রী ৫৫ বছর বয়সী শামিমা সুলতানা নাজমা মারা যান। স্বজনদের ভাষ্য, ওই নারী মৃত্যুর আগে তার পরিবারের সবাইকে বলে গিয়েছেন, মৃত্যুর ৩-৪ দিন পর তিনি পুনরুজ্জীবিত হবেন।
পুলিশ জানায়,পীর ভক্ত পরিবারটি তার এ কথা বিশ্বাস করে ওই নারীর মরদেহেটি বসত ঘরের খাটের নিচে রেখে খুব স্বাভাবিকভাবে দিন কাটাচ্ছিল। কেউই বিষয়টি বুঝতে পারেনি। পরে ঘরের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ ছড়ালে প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ শনিবার মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে দরজা ভেঙ্গে ঘরের ভেতর খাটের নিচ থেকে শামিমা সুলাতানা নাজমার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে। এ সময় নাজমার স্বামী মোক্তার উদ্দীন তালুকদার ও তার চার মেয়ে ঘরের ভেতরই অবস্থান করছিলেন।
পুলিশ আরও জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সবাইকে থানায় নেয়া হয়েছে। বিষয়টির রহস্য উদঘাটনে পুলিশি তদন্ত অব্যহত রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মারা যাওয়া ওই নারীর বড় মেয়ে ৪০ বছরের মাহবুবা তালুকদার মনোহরদী উপজেলার বড়চাপা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। প্রায় দেড় বছর যাবত তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান। এ ছাড়া মারা যাওয়া নারীর ছোট মেয়ে ৩৪ বছরের রোকসানা স্বামীর সঙ্গে থাকেন না। বকি দুই মেয়ের একজনের বয়স ২৫, অন্যজনের ২৮। তারা শিক্ষার্থী। এদের সবাই পীর ভক্ত।
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দীন জানান, পরিবারটির সদস্যরা এক পীরের মুরিদ ছিলেন বলে জানিয়েছেন। তারা প্রতিদিন ভোর ৩ টা থেকে ৫টা ৬টা পর্যন্ত জিকির করতেন। জিকিররত অবস্থায় নাজমার মৃত্যু ঘটে বলে তারা পুলিশকে জানিয়েছেন।
তিনি জানান, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ নরসিংদী সদর হাসপাতালো পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যেতে পারে।
ওসি জানান, মেয়েদের জিজ্ঞাবাদ করে জানা গেছে, তারা ফরিদপুরের আটরশী পীরের ভক্ত।পরিবারের সদস্যরা শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় থাকায় তাদের পুলিশ হেফাজতে মনোহরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।