গত কয়েক দিনের প্রচণ্ড তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত। রুক্ষ্ণ প্রকৃতিতে পানির জন্য চারদিকে হাহাকার। এমন পরিস্থিতিতে দুটি ডুমুর গাছ নিয়ে একটি গ্রামের মানুষের কৌতূহলের যেন শেষ নেই।
গাছ দুটি বেয়ে অনবরত ঝরছে পানি। আর সেই দৃশ্য দেখতে গাছটির চারপাশে উৎসুক জনতার ভিড় লেগে আছে। অলৌকিক দাবি করে অনেকেই সেই পানি মাখছেন শরীরে। আবার কেউ কেউ বোতলে ভরে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে পরিবারের জন্য।
রাজধানী ঢাকার অদূরে ধামরাই উপজেলার কুশুরা ইউনিয়নের বান্নল বোচাইবাড়ি গ্রামে ঘটনা এটি। ওই গ্রামের বোচাইবাড়ি খালের পাশের দুটি ডুমুর গাছ নিয়ে এলাকায় শুরু হয়েছে চাঞ্চল্য।
বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের নির্জন খালের পাশে দুটি ৩০-৪০ ফুট উচ্চতার ডুমুর গাছ। আশপাশে আর গাছপালা থাকলেও এই গাছ দুটি চেনা যায় সহজেই। দুটি গাছের শরীর বেয়ে অনবরত পানি গড়াচ্ছে। পাতা থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় পড়ছে পানি। এতে ভিজে আছে চারপাশ।
এমনিতে জায়গাটা নির্জন থাকলেও গত কয়েক দিনে মানুষের ভিড় চোখে পড়ার মতো। দলবেঁধে এই দৃশ্য দেখতে আসছেন অনেকেই। পলিথিন বিছিয়ে, হাতের তালুতে ধরে পানি নিচ্ছেন তারা। গায়ে মাখছেন কেউ কেউ। আবার কেউ বোতলে জমিয়ে বাড়ির লোকজনের জন্যও নিচ্ছেন সেই পানি।
স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার এলাকার কয়েক জন কৃষক প্রথম গাছ থেকে পানি ঝরার বিষয়টি লক্ষ্য করেন। পরে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের অনেকেই ভিড় করছেন সেখানে।
গাছটির নিচে পলিথিন নিয়ে দাঁড়িয়ে পানি জমাচ্ছিলেন চন্দনা রানী দাস ও অর্পনা রানী দাস। পঞ্চাশোর্ধ এই দুই নারীর বাড়ি প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে একই উপজেলার সুয়াপুর ইউনিয়নের খড়ারচর গ্রামে। স্থানীয় এক আত্মীয়ের মাধ্যমে খবর পেয়ে পানি নিতে আসেন তারা।
চন্দনা রানী দাস বলেন, ‘এরকম অলৌকিক পানি পড়ার কথা শুনে এসেছি। পানি গায়ে মেখেছি, পান করেছি। বাড়ির অন্যদের জন্যও নিয়েছি। যাতে অসুখ দূর হয়ে যায়।’
পাশের বান্নাখোলা গ্রামের সোহেল রানাও এসেছেন পানি নিতে। তিনি বলেন, ‘সকালেই পানি ঝরার কথা শুনেছি। আশ্চর্যজনক এ ঘটনা শুনে দেখতে এসেছি। দেখলাম পুরো গাছই পানিতে ভেজা। কাণ্ড ও পাতা থেকে পানি ঝরছে। আমার মতো অনেকেই পানি নিচ্ছেন।’
এদিকে পানি পড়ার এই প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল হাসান। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি গাছই মাটি থেকে পানি শোষণ করে সেই পানি বিভিন্ন কাণ্ড ও পাতায় ছড়িয়ে দেয়। কখনও কখনও কোনো গাছ অতিরিক্ত পানি শোষণ করে ফেলে। অতিরিক্ত পানি গাছটি কাণ্ডের মাধ্যমে বের করে দেয়। সেটিই পানি ফোঁটায় ফোঁটায় বেরিয়ে আসে। এ গাছটির ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরসঙ্গে তাপপ্রবাহেরও সংযোগ আছে। তাপপ্রবাহ বাড়লে পানি শোষণ হয় বেশি। তাপ কমলে গাছের অভ্যন্তরে পানি জমে যায়। পরে সেটি বেরিয়ে আসে। এখন যেহেতু তাপপ্রবাহ কমে এসেছে। ফলে পানি পড়াও বন্ধ হয়ে যাবে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নুহু আলম বলেন, ‘গাছ তো মাটি থেকে পানি গ্রহণ করে। গাছের যে ভাস্কুলার সিস্টেম আছে সেটি দিয়ে মাটি থেকে পানি শোষণ করে। ওই পানিকে বলা হয়, ক্যাপিলারি ওয়াটার। এই পানি গাছ তার কাণ্ড ও পাতায় পৌঁছে দেয়। কোনো কারণে ওয়াটার সোর্স বেশি পেলে বা ক্যাপিলারি ওয়াটারের পরিমাণ যদি বেশি থাকে, পানি যদি বেশি জমা হয়, তাহলে কাণ্ডমূল দিয়ে সেই অতিরিক্ত পানি বের হতে পারে। এটি খুবই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।’
পানি খাওয়ার উপযোগী কি না প্রশ্নে বিশেষজ্ঞ এ শিক্ষক বলেন, ‘এই গাছ যদি বিষাক্ত হয়, তাহলে সেটি অনিরাপদ। তবে তা যদি না হয়, এই পানি খাওয়া যাবে।’
পানি খাওয়ার ব্যাপারে আগে পরীক্ষা করে নেয়া উচিত বলে জানান তিনি।