বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রাজনৈতিক অভিলাষের বহিঃপ্রকাশ এই বাজেট: সিপিডি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ৭ জুন, ২০২৩ ২২:৫৮

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘প্রত্যেক বাজেটে আমরা গৎবাঁধা সমালোচনা করি। কিন্তু আপনি একই রোগের জন্য ডাক্তারকে তো ভিন্ন ওষুধ দিতে বলতে পারবেন না। আমাদের সমস্যা তো একই।’

বাজেটে পরিসংখ্যান নিয়ে খেলা হয়েছে বলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কোনো পরিসংখ্যানের বিষয় নয়, এটি রাজনৈতিক অভিলাষের বহিঃপ্রকাশ। এ বছর যে প্রবৃদ্ধি হার দেয়া হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, তা শুধু নির্বাচন উপলক্ষে উদ্দীপনা তৈরির জন্য দেয়া হয়েছে।

বুধবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে সিপিডি আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪ অসুবিধাগ্রস্ত মানুষেরা যা পেল’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘নির্বাচনের বছর উপলক্ষে যে জনতুষ্টিমূলক বাজেট দেয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। নির্বাচনী বাজেট বলা হলেও এটি নির্বাচনী বাজেট নয়। এখানে পরিসংখ্যান নিয়ে খেলা হয়েছে। ছলনা বললাম না। ভর্তুকি, কর রেয়াত- সব একসঙ্গে করে ফেলা হয়েছে, যাতে অঙ্কটা বড় দেখায়।’

তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক বাজেটে আমরা গৎবাঁধা সমালোচনা করি। কিন্তু আপনি একই রোগের জন্য ডাক্তারকে তো ভিন্ন ওষুধ দিতে বলতে পারবেন না। আমাদের সমস্যা তো একই।

‘২০০৬ সালে বাজেট প্রক্রিয়ায় ১০০টি দেশের মধ্যে আমরা ৩৮তম ছিলাম। আর এখন যদি দেখেন, দেখবেন আমরা ৯৫ নম্বরে চলে এসেছি। এই র‍্যাংকিং নির্ধারণ করা হয় বাজেট প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে। অর্থাৎ সঠিক সময়ে বাজেটের অর্থ পাওয়া গেল কি না, দলিল আছে কি না, জনগণের অংশগ্রহণ আছে কি না ইত্যাদি।’

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘যারা দাবি করেন, রাজনৈতিক কল্পকথা হিসেবে, আমরা যে বাজেট দিই, তা আমরা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করি, তথ্য-উপাত্ত তা সমর্থন করে না। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও বড় ফারাক থেকে যাচ্ছে। যেটুকু আমাদের উন্নতি হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে, তাও তুলনীয় দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে নিতান্তই কম।’

ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমছে, কিন্তু বৈষম্য বাড়ছে। এই পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ আগামী দিনে এগিয়ে যেতে চায় কি না, এতে আমাদের প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে কি না, তা ভেবে দেখতে হবে।

‘২০২২ সালে সম্পদ নিয়ে যে জরিপ হয়েছে, তাতে বৈষম্যের ফল কিন্তু এখনো পাওয়া যায়নি। গ্রাম থেকে খাদ্য, নিরাপত্তা, উন্নয়নের জন্য মানুষ শহরে আসছে। এটি কি টেকসই উন্নয়ন হবে কি না, সেই প্রশ্ন আমাদের থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কর আহরণের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ হলো পরোক্ষ কর। এখানে নিম্নবিত্তরা যা কর দেয়, উচ্চবিত্তরাও একই হারে কর দেয়। তাহলে প্রত্যক্ষ কর কি বাড়ল? একই রকম ভ্যাটের ক্ষেত্রেও। বাংলাদেশে এক-তৃতীয়াংশ মানুষ ভ্যাট দিচ্ছে। এটি কোনোভাবেই আপনি আয়করের তুলনায় কমাতে পারলেন না। এটিকে মৌলিক বৈষম্যের একটি বড় অংশ হিসেবে দেখছি।

‘এখনো উন্নয়ন কাজের ৪০ শতাংশ বিদেশি সাহায্যে হয়। একদিকে বলা হচ্ছে, বিদেশি সাহায্য দরকার নেই, অন্যদিকে আমরা দেখি অনেক উচ্চমূল্যে বৈদেশিক ঋণ নিচ্ছি।’

সিপিডির এই ফেলো বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ে বিবিএস একধরনের কথা বলছে, অর্থ মন্ত্রণালয় দিচ্ছে আরেক পরিসংখ্যান। তাহলে কি ডান হাত-বাম হাত একসঙ্গে কাজ করছে না? এ রকম হলে কিন্তু বাজার বেত্তমিজি করবে। রপ্তানির ক্ষেত্রে গত বছর ২০ শতাংশ আপনি প্রাক্কলন করলেন, অথচ বাস্তবায়ন হলো ৭ দশমিক ১ শতাংশ। এ বছর আবার আপনি ১২ শতাংশ দিলেন। ডলার রেট আপনি প্রাক্কলন করছেন ১০৪ টাকা। অথচ এখনই বাজারে এটি ১০৮ টাকা হয়ে গেছে।’

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘অন্য সব মন্ত্রণালয়ের মতো জ্বালানি ও জলবায়ু নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দের সঙ্গে বাস্তবায়নের ফারাক থেকে যায়। আমরা বাজেট বিশ্লেষণের সময় বলেছি, বাজেট এমন এক সময়ে দেয়া হয়েছে, যখন আমরা আইএমএফের ঋণের আওতায় রয়েছি। সেই শর্ত অনুযায়ী, ১১টি খাতে সংস্কার করতে হবে। এর মধ্যে জলবায়ু খাতে সংস্কারের একটি শর্তও রয়েছে। কিন্তু, বাজেটে আমরা সেটির প্রতিফলন দেখতে পাইনি।’

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের যে সম্পদ আছে, সেটি বণ্টনে নায্যতা নিশ্চিত করা জরুরি। একটি কথা খেয়াল রাখতে হবে, এনবিআর কত টাকা আয় করতে পারল তা নিয়ে কথা বলি। একইভাবে কত টাকা সাশ্রয় করা যায়, তাও গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। আমাদের ১ হাজার ২৫০টির মতো প্রকল্প আছে, যার মধ্যে ৮৭৮টি ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ করতে হবে। এর অধিকাংশই আগের প্রকল্প। এই যে ক্যারিওভার প্রকল্প, এগুলোর কারণেই সমস্যা আরও প্রকট হচ্ছে। কেবল বাজেট প্রণয়ন নয়, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও অনেক বৈসাদৃশ্য রয়ে গেছে। এগুলো এখন প্রতীয়মান হচ্ছে।’

ব্র্যাক শিক্ষা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রোগ্রাম হেড সমীর রঞ্জন নাথ বলেন, ‘শিক্ষার বাজেট বলতে আমরা যেটা বুঝি, তার মধ্যে এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যোগ করে একটি বড় অঙ্ক দেখানো হয়েছে। এর আগে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাজেট যখন শিক্ষার ক্ষেত্রে জুড়ে দেয়া হয়, তা কিন্তু একটা বড় অঙ্কে দাঁড়িয়েছিল। ২২-২৩ অর্থবছরে ১০০ টাকার মধ্যে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ কমিয়ে বলা হচ্ছে, যা পরে দেখা যাবে।’

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে স্বাস্থ খাত নিয়ে ড. দিবালোক সিংহ ও সামাজিক সুরক্ষা খাত নিয়ে সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. তৌফিকুল হক আলোচনা করেন। এসময় ব্যক্তি খাতে বাজেটের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি ড. আসিফ ইব্রাহিম।

এ বিভাগের আরো খবর