রাজধানীর অভিজাত একাধিক এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ আসনে বইছে ভোটের হাওয়া। আগামী ১৭ জুলাই আসনটিতে হবে উপনির্বাচন। বর্তমান সংসদের পাঁচ মাস বাকি থাকলেও নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে আগ্রহে কমতি নেই। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির রাজনীতিক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী ও তারকারা।
ঢাকা-১৭ আসনটি গুলশান, বনানী, ভাষানটেক থানা ও সেনানিবাস এলাকা নিয়ে গঠিত। এ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যু হয় গত ১৫ মে।
শূন্য হওয়া আসনটিতে গত ১ জুন উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। সে অনুযায়ী আগামী ১৭ জুলাই হবে নির্বাচন।
ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আগ্রহী দলের অন্তত দুজন হেভিওয়েট নেতা। আছেন স্থানীয় পর্যায়ের দুই প্রভাবশালী নেতা, সহযোগী সংগঠনের একজন শীর্ষ নেতাও। আগ্রহ আছে ব্যবসায়ী, খেলোয়াড় এবং চিত্রজগতের একাধিক ব্যক্তির। এ ছাড়া গুঞ্জন আছে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সমাঝোতার অংশ হিসেবে শরিক বা সম্ভাব্য শরিক কাউকে ছেড়ে দেয়া হতে পারে আসনটি।
আওয়ামী লীগ থেকে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্ল্যাহ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দুই সহসভাপতি আবদুল কাদের খান ও মো. ওয়াকিল উদ্দিন, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাবেক সংসদ সদস্য এইচবিএম ইকবাল।
বঙ্গবন্ধু জোটের একাংশের সভাপতি চিত্রনায়ক আলমগীর, চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের একাংশের সাধারণ সম্পাদক ও অভিনেতা-নির্মাতা সিদ্দিকুর রহমান আলোচনায় রয়েছেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রার্থী হতে আগ্রহ দেখা গেছে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন ও সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের। আলোচনায় আছে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নাম।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্ল্যাহ দলে বেশ প্রভাবশালী ও দলীয় সভাপতির অত্যন্ত আস্থাভাজন। তিনি সংসদীয় বোর্ডেরও সদস্য। তার মূল আসন ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন)। সে আসনে দুবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়ী হন মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন চৌধুরী)।
কাজী জাফরউল্ল্যাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কিছু ভাবিনি। যেসব সংবাদ বা আলোচনা হচ্ছে, তা স্পেকুলেশন।’
রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে পরশ ও ফাহিম পরস্পর চাচাত-জেঠাত ভাই। পরশ ১৫ আগস্টের শহীদ শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে। আর ফাহিম আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছেলে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তাদের মনোনয়নের প্রসঙ্গ এলে বিষয়টি নিয়ে পারিবারিকভাবেই আলোচনা ও ঐকমত্য হবে, তবে আবদুল কাদের খান ও ওয়াকিল উদ্দিন মনোনয়ন পেতে আগ্রহী বলে নিউজবাংলাকে জানান।
আলোচনায় থাকা মোহাম্মদ এ আরাফাতের মন্তব্য জানতে তাকে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি। যদিও কয়েক দিন আগে একটি সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘এতদিন আমি দল বা সরকারের বাইরে থেকে আদর্শিক লড়াই করেছি। এবার যেহেতু আমাকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেয়া হয়েছে, ফলে দল ও নেত্রী সিদ্ধান্ত নিলে আমি সেটাকে অবশ্যই রেসপেক্ট করব।’
মনোনয়ন পেতে আগ্রহী নন জানিয়ে চিত্রনায়ক আলমগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক চিন্তা লালন করি। আওয়ামী লীগকে সমর্থন করি, তবে নির্বাচনের রাজনীতিতে আমি আগ্রহী না।’
চিত্রনায়ক ফেরদৌস মনোনয়ন চেয়ে পোস্টারিং ও ডিজিটাল ক্যাম্পেইন করছেন; গিয়েছেন গণসংযোগেও।
গত নির্বাচনে মাগুরা-১ আসনে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নাম আলোচনায় এসেছিল। এবার তার নাম আসছে ঢাকা-১৭ আসনে। মনে করা হচ্ছে যদি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিজয়ী দেখতে চায়, তাহলে সাকিবকে প্রার্থী করা হতে পারে।
এ আসনে মনোনয়ন কে পেতে পারেন এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ফারুক খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে দলীয় ফোরামে এখনও আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক কোনো আলোচনাই হয়নি, তবে দলের সভাপতি বিভিন্নভাবে খোঁজখবর নিচ্ছেন। আমরাও নিচ্ছি।
‘মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকের আলোচনায় যাকে যোগ্য এবং বিজয়ী হয়ে আসতে পারবে বলে মনে করা হবে, তিনিই মনোনয়ন পাবেন।’
এদিকে ব্যবসায়ীদের পক্ষে এফবিসিসিআই সভাপতির আশাবাদী হওয়ার কারণ দুই ব্যবসায়ীর লাভজনক পদে যাওয়া। একজন আলমগীর মহিউদ্দিন, যিনি ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ফজলে নূর তাপসের ছেড়ে দেয়া আসনে সংসদ সদস্য হয়েছেন। আরেকজন ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, যিনি ব্যবসায়ী পরিচয়েই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য জানান, ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য বিএনএফের আবুল কালাম আজাদও আগ্রহী। তার পাশাপাশি জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডেন্ট আন্দালিব রহমান পার্থর নামও ক্ষেত্রবিশেষে শোনা যাচ্ছে। যদি আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তাদের কারও সঙ্গে সমাঝোতা হয়, তাহলে এ দুজনের কেউ একজন পেতে পারেন মনোনয়ন।