অচেতন অবস্থায় উদ্ধারের পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে পুরান ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ওয়াসিম রানাকে।
পুরান ঢাকার চানখাঁরপুল এলাকার বাসা থেকে উদ্ধার করে শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয় ওয়াসিমকে। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
ওয়াসিম রানা কবি নজরুল কলেজে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায়।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকারি কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ওয়াসিম রানাকে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান। আমরা জানতে পেরেছি তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন, তবে কী কারণে আত্মহত্যা করেছেন, প্রাথমিকভাবে সেটি জানা যায়নি।
‘মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি বংশাল থানাকে জানানো হয়েছে।’
ওয়াসিম রানার বন্ধু ও তার স্ত্রীর ভাষ্য, কবি নজরুল সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আত্মহত্যা করেছেন।
বন্ধু ইমরান হোসেন বাবু বলেন, ‘ওয়াসিম রানা সবসময় হতাশাগ্রস্ত থাকত, তবে কী কারণে হতাশাগ্রস্ত থাকত তা কখনও জানতে পারিনি। অনেকবার তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। এক বছর আগে তার বাবা মারা যায়। তার এক ভাই ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
‘গত নভেম্বরে সে ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছে। তিন বছর কষ্ট করার পরে সে এই পদ পেয়েছিল। অথচ সে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করল! ও আমার অনেক কাছের বন্ধু ছিল। বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।’
ওয়াসিমের স্ত্রী সানজিদা আক্তার ওরফে জান্নাতি কবি নজরুল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক।
রানার স্ত্রী সানজিদা আক্তার বলেন, ‘আমাদের বিয়ে হয়েছে সাত বছর। এতদিন পলিটিক্যাল কারণে জানানো হয়নি। সে আমাদের (নারায়ণগঞ্জের তারাব) বাসায় নিয়মিত আসা-যাওয়া করত। গত এক সপ্তাহ আগে ছোট একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে রানা আমার গায়ে হাত তোলে।
‘আমার বাবা, মা তখন ওর কাছে যেতে নিষেধ করে। শুক্রবার রাতে ও আমাকে ওর বাসায় আসতে বলে। না আসলে আত্মহত্যা করার হুমকি দেয়। ও এমনটা করবে আমি ভাবতেই পারিনি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কবি নজরুল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এক সহসভাপতি বলেন, ‘আমরা জানতাম সানজিদার সঙ্গে প্রেম ছিল। বিয়ে হয়েছিল কি না, তা সঠিক জানি না।’
সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসল রহস্য উন্মোচন করে বিচারের দাবি জানান কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এ নেতা।
বংশাল থানার ওসি মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘নাজিমুদ্দিন রোডে শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজের পেছনে একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন ওয়াসিম রানা। সেখানে তিনি গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। ঠিক কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি। আমরা তদন্ত করে বিস্তারিত বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করছি।’
শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কবি নজরুল সরকারি কলেজ মাঠে ওয়াসিম রানার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
দীর্ঘ ৩৯ মাস পর গত বছরের ৮ নভেম্বর কবি নজরুল সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওয়াসিম রানাকে সভাপতি ও ফারুক হাওলাদারকে সাধারণ সম্পাদক করে ১ বছরের জন্য এ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়।