তিন মাসে দুবার রোহিঙ্গাদের খাদ্য বরাদ্দ কমিয়ে দেয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। মিয়ানমার থেকে আশ্রয় নেয়া এ জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে অর্থ সহায়তা করতে আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন আহ্বান করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
অর্থ সংকটের কারণে চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের খাদ্যে বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয়েছিল। তিন মাসের মাথায় ১ জুন থেকে আরেক দফা কমেছে সে বরাদ্দ।
দাতাদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত অর্থ সহযোগিতা না আসায় খাদ্যে এ কাটছাঁট করতে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছে কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার জেনেভা থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতিসংঘ জানায়, ১ জুন থেকে কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাসিক খাদ্য ভাউচার তিন মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার কমানো হচ্ছে। এর ফলে দৈনিক রেশনের ৩৩ শতাংশ হ্রাস হবে। শরণার্থীদের প্রত্যেককে মাসিক মাত্র ৮ মার্কিন ডলার (৮৪০ টাকা) সমমূল্যের ফুড ভাউচার দেয়া হবে। এটুকুই তাদের জীবনধারণের একমাত্র অবলম্বন, জীবনধারণের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ বা কোনো সম্ভাবনা তাদের নেই।
জাতিসংঘ মনে করছে, রেশনের এই কাটছাঁট প্রায় ১০ লাখ শরণার্থীর জীবনে প্রভাব ফেলবে। রোহিঙ্গা মা-বাবারা ইতোমধ্যে কম খাচ্ছেন, যাতে তাদের সন্তানেরা খেতে পায়।
চলতি বছরের শুরুতে রোহিঙ্গারা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) থেকে মাথাপিছু মাসিক ১২ ডলার মূল্যমানের রেশন পাচ্ছিলেন। তা দিয়ে কেবল তাদের দৈনিক চাহিদাটুকু মিটত। কিন্তু অর্থায়নের অভাবে ১ মার্চ থেকে তাদের মাথাপিছু মাসিক রেশন কমিয়ে ১০ ডলার করা হয়। এখন থেকে তা হবে মাত্র ৮ ডলার মূল্যমানের।
এ বিষয়ে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন যে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য সহায়তা কমাতে বাধ্য হচ্ছে। শরণার্থীদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ক্ষেত্রে এর ফল হবে ভয়াবহ।
‘নারী, শিশু ও সবচেয়ে নাজুক মানুষেরা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে আমরা আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আবেদন জানাচ্ছি। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তায়, তাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি, খাদ্য ও শিক্ষার জন্য মোট যে পরিমাণ অর্থ দরকার তার মাত্র ২৪ দশমিক ৬ শতাংশের অর্থায়ন মিলেছে। এদের সাহায্য-সহযোগিতার আর কোনো উৎস নেই।
‘রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে বসবাসরত মানুষের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। তারা সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল।’
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবন-রক্ষাকারী সহায়তায় এই নতুন কাটছাঁটের উদ্যোগ এমন এক সময়ে নেয়া হলো, যখন তারা ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডব আর সম্প্রতি শিবিরগুলোতে বিরাট এক অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। এ সময় হাজার হাজার শরণার্থীর সাহায্য ভীষণ প্রয়োজন।
চলতি বছরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থা বিশেষভাবে নাজুক। কারণ, ২০২৩ সালে ৮৭৬ মিলিয়ন ডলার সাহায্যের যে আবেদন করা হয়েছে, ১ জুন নাগাদ তার মাত্র ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ অর্থায়ন মিলেছে। এর ফলে অন্যান্য জরুরি কর্মসূচি ও কর্মকাণ্ডেও কাটছাঁট করা হচ্ছে।