গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মতো বাকি চার মহানগরেও অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গাজীপুরে হারলেও বাকি চারটিতে জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী দলটি। নির্বাচন যাতে কোনোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে চান দলের নেতারা।
ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, দলের একটি অংশের অহসযোগিতায় গাজীপুরে পরাজয় হলেও বাকি চার মহানগরের নির্বাচনে সব দুর্বলতা কাটিয়ে জয় নিয়ে ঘরে ফিরবে আওয়ামী লীগ, তবে জয়-পরাজয় থেকেও নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ওপর নজর রাখবেন তারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আবদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় পর্যায়ের এই নির্বাচনকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। চার সিটিতে দলের মেয়র প্রার্থীর বিজয় যাতে নিশ্চিত করা যায়, সে জন্য দল ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।
‘এই নির্বাচন যাতে কোনোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে জন্য আমরা দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাব, যাতে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে উন্নয়ন মহাযজ্ঞ চলছে, তাতে মানুষ অকৃতজ্ঞ হবে না এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থীদেরই বিজয়ী করবে।’
আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে দলটি। এ নির্বাচনের কয়েক মাস পরই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তার আগে সিটি নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ভিসা নীতির বিষয়টিও আমলে নিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু করার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান, ইইউসহ অনেক দেশ ও জোট বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর জোর দিয়েছে। এসব রাষ্ট্রের পরামর্শ আমলে নিয়ে সরকারও সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দেশে-বিদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে বিভিন্ন পক্ষকে আশ্বস্ত করেছেন। এর মডেল হিসেবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোকে দেখানো হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসন্ন বাকি চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। সংবিধানসম্মতভাবে নির্বাচন হবে। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। সরকার শুধু নৈমিত্তিক কাজ করে যাবে। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আওয়ামী লীগ সব ধরনের সহযোগিতা করে যাবে।’
চলতি বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর মধ্যে সিটি করপোরেশন নির্বাচন বেশ গুরুত্ব বহন করে। জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটির ভোটে জয়-পরাজয় সরকার ও দলের জনপ্রিয়তার ওপর প্রভাব ফেলবে। হেরে গেলে মানুষের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে বলেও আওয়ামী শীর্ষ নেতারা মনে করছেন। তাই সিটির এ নির্বাচনে কোনো বাজে পরিস্থিতি সৃষ্টি যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে এগিয়ে চলছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
আগামী ১২ জুন হবে খুলনা ও বরিশাল সিটি নির্বাচন। ২১ জুন ভোটগ্রহণ হবে সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন আবারও দলীয় প্রার্থী। সিলেটে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এবং বরিশালে আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ।