দুই অর্থবছর ধরে জ্বালানি তেলে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেছেন, ২০২১-২২ ও চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে সরকারের কোনো ভর্তুকি নেই।
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান প্রতিমন্ত্রী। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে এ প্রশ্ন উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘২০২১-২২ অর্থবছরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে দাম বাড়লে সরকার সব ধরনের জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করে। তারপরও ওই অর্থবছরে বিপিসি প্রায় দুই হাজার ৭০৫ কোটি টাকার লোকসান দিয়েছে। ওই সময় বিপিসি সরকার থেকে কোনো ভর্তুকি না নিয়ে আগের মুনাফার সঙ্গে লোকসান সমন্বয় করে।
‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলমান থাকায় ২০২২-২৩ অর্থবছরেও বিপিসির লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে। এ অর্থবছরও সরকারের থেকে ভর্তুকি নেয়নি বিপিসি। আগের মুনাফার সঙ্গে এবারও লোকসান সমন্বয় করা হচ্ছে।’
বড় পুকুরিয়া কয়লাখনি চালু হওয়ার পর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত সব ধরনের ট্যাক্সসহ সরকারি কোষাগারে তিন হাজার ৫১৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা জমা হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
নোয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের প্রশ্নের উত্তরে নসরুল হামিদ বলেন, ‘ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪৭ কোটি ৮৯ লাখ ৯ হাজার টাকা মুনাফা করে, যা ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ১৪ কোটি ৯৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা বেশি। ওই অর্থবছরে সরকার মুনাফা অর্জন করেছিল ৩২ কোটি ৯৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।’
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের আরেক প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী জানান, গ্যাস খাতের উন্নয়নে ৭টি বিদেশি কোম্পানি দেশে বিনিয়োগ করেছে। গত ১৪ বছরে বাংলাদেশে বিদেশি কোম্পানিগুলো তিন হাজার ৪৮৩ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে আমেরিকার তেল-গ্যাস কোম্পানি শেভরণ সর্বোচ্চ। এ কোম্পানি দুই হাজার ৯৪১ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন ডলার, যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি তাল্লো ২৩৬ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন ডলার, কেয়ার্ন এনার্জি ২৪২ দশমিক শূন্য ৭ মিলিয়ন ডলার, ওএনজিসি কোম্পানি ৪৫ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কানকোফিলিপস ৬ দশমিক ২২ মিলিয়ন, অস্ট্রেলিয়ার সান্তোস ৫ দশমিক ৭১ মিলিয়ন ডলার ও দক্ষিণ কোরিয়ার পোসকো ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন বাংলাদেশে ৫ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
নসরুল হামিদ বলেন, ‘দেশের অভ্যন্তরীণ গ্যাসের চাহিদা মেটানোর জন্য এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্তের কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০-এর আলোকে কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করা হয়। এক্ষেত্রে সরকার বা পেট্রোবাংলার কোনো অর্থ খরচ হয়নি। তবে টার্মিনাল ব্যবহারের জন্য পেট্রোবাংলা নির্ধারিত ফি দিচ্ছে। আগামী ১৫ বছর পর এলএনজি টার্মিনাল দুটির মালিকানা সরকার বা প্রেট্রোবাংলার কাছে ন্যস্ত হবে।’
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য শাহে আলমের এক প্রশ্নের উত্তরে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ১১৬৯ দশমিক ৭৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। যার মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ থেকে অফ গ্রিডে ৩৫৭ দশমিক শূন্য ৯ মেগাওয়াট ও অন-গ্রিডে ৫৭৮ দশমিক ৬৬ মেগাওয়াটসহ মোট ৯৩৫ দশমিক ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।’