দুর্নীতির পৃথক মামলায় বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমানের ১৩ বছরের এবং ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর ৯ বছরের কারাদণ্ডের সাজা বহাল রেখেছে হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার তাদের আপিলের আবেদন খারিজ করে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়।
এ ছাড়া আমান উল্লাহ আমানের স্ত্রী সাবেরা আমানের ৩ বছরের কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। বিচারিক আদালতের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা অপিলের আবেদন খারিজ করে আদালত রায়ের কপি পাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে আসামিদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে।
রায়ে আদালত বলেছে, রাজনীতিবিদদের ওপর একটা দেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা থাকে। এ কারণেই রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি মুক্ত থাকতে হয়।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের আবেদনের শুনানিতে আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন। আপিলের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও নাজমুল হুদা।
সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আমান দম্পতির বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৬ মার্চ রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক। ওই বছরের ২১ জুন বিশেষ জজ আদালতের রায়ে আমানকে ১৩ বছরের ও সাবেরাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট আপিল মঞ্জুর করে তাদের খালাস দেয়।
পরে দুদক আপিল করলে ২০১৪ সালের ২৬ মে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল ঘোষণা করে আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে হাইকোর্টে পুনঃশুনানির নির্দেশ দেয়া হয়।
আপিল বিভাগের এই রায় রিভিউ (পুর্নবিবেচনা) চেয়ে আবেদন করেন আমান। পরে সে আবেদন খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশের পর হাইকোর্ট বিভাগে পুনঃশুনানি হয়। শুনানি শেষে মঙ্গলবার রায় দেয়া হয়।
এদিকে টুকুর মামলায় আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ এবং এ কে এম আমিন উদ্দিন। টুকুর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কেসি ও আইনজীবী সাইফুল্লাহ মামুন।
৪ কোটি ৯৬ লাখ ১১ হাজার ৯১৬ টাকার সম্পত্তির হিসাব ও আয়ের উৎস গোপন করার অভিযোগে দুদকের উপ-পরিচালক শাহরিয়ার চৌধুরী ২০০৭ সালের মার্চে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী টুকুর বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় এই মামলা করেন।
কমিশনের উপ-পরিচালক এসএমএম আখতার হামিদ ভূঞা ওই বছর ২৮ জুন মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বিচারিক আদালত এ মামলার রায়ে টুকুকে নয় বছরের কারাদণ্ড দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে হাইকোর্ট ২০১১ সালের ১৫ জুন তাকে খালাস দেয়।
হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপিল করলে ২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারি খালাসের রায় বাতিল করে পুনঃশুনানির আদেশ দেয় আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের এই রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে আবেদন করেন টুকু। পরে সেই আবেদন খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। এরপর হাইকোর্ট বিভাগে পুনঃশুনানি শেষে মঙ্গলবার রায় দেয়।
রায়ের পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, আদালত রায়ে বিচারিক আদালতের সাজা ও অর্থদণ্ড বহাল রেখেছে। রায়ের কপি পাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে তাদেরকে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।