র্যাব হেফাজতে নওগাঁর ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় তার ছেলে, ভাই ও মামা এবং বাড়িওয়ালা ও দু’জন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দল।
তদন্ত দলের সদস্যরা সোমবার বিকেল ৩টায় তাদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন। সার্কিট হাউসে তদন্ত দলের সঙ্গে কথা বলে বের হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সুলতানা জেসমিনের মামা নাজমুল হক মন্টু ও তার ভাই সুলতান মাহমুদ। তদন্ত দলের আমন্ত্রণে আসা অন্যদের তখনও জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল।
তদন্ত দলের সদস্যদের মধ্যে নওগাঁর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আবু শামীম আজাদ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইমতিয়াজুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল করিম, সিভিল সার্জন আবু হেনা মো. রায়হানুজ্জামান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমানকে সার্কিট হাউসে ঢুকতে দেখা যায়।
সোমবার সন্ধ্যায় নওগাঁ সার্কিট হাউস চত্বরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সুলতানা জেসমিনের মামা নাজমুল হক মন্টু। ছবি: নিউজবাংলা
নাজমুল হক বলেন, ‘তদন্ত দলের সদস্যরা ২২ মার্চ জেসমিনকে র্যাব সদস্যরা আটকের পর নওগাঁ হাসপাতাল থেকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং দাফন সম্পন্ন হওয়া সব ঘটনার বর্ণনা আমাদের কাছ থেকে শুনেছেন।
‘এছাড়া জেসমিনের বাসা থেকে জেসমিন ও মামলার বাদী এনামুল হকের মধ্যকার বিভিন্ন অংকের টাকা লেনদেনের কাগজপত্র আমরা পেয়েছি। সেগুলো তদন্ত দলের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশে যে তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে আশা করছি, তারা নিরপেক্ষ তদন্ত করবেন এবং বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবেন। নিরপেক্ষ তদন্ত হলে ন্যায়বিচার পাব বলে আমরা আশাবাদী।’
জেসমিনের ভাই সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘আটকের আগে আমার বোন সুস্থ ছিল। র্যাব আটকের পর অসুস্থ হন এবং তাদের হেফাজতে চিকিৎসা চলা অবস্থায় মারা যান। এজন্য র্যাবই দায়ী বলে আমি মনে করি। আশা করি, প্রকৃত দোষীরা চিহ্নিত হবে।’
হাইকোর্টের এক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ২২ মে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটির প্রধান করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মাহমুদুল হোসাইন খানকে। সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, নওগাঁর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সিভিল সার্জন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং নওগাঁর পুলিশ সুপার মনোনীত একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
র্যাব-৫-এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের একটি দল ২২ মার্চ সকালে জেসমিনকে আটক করে। স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক মো. এনামুল হকের মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে নিয়েই র্যাব এ অভিযান চালায়।
এনামুল হকের অভিযোগ, জেসমিন ও আল আমিন নামের এক ব্যক্তি তার (এনামুল) ফেসবুক আইডি হ্যাক করে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছিলেন বিভিন্নজনকে। এভাবে তারা প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন।
আটকের পরদিন ২৪ মার্চ সকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জেসমিন মারা যান। তার মৃত্যুর পর রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যুগ্ম সচিব এনামুল হকের করা একটি মামলার কথা জানা যায়। সেটি রেকর্ডের সময় ২৩ মার্চ বিকেল। জেসমিন ও তার কথিত সহযোগী আল-আমিনকে এতে আসামি করা হয়। আল-আমিনকে ২৬ মার্চ ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তিনি একজন মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট।