গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার একটি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচনের দেড় বছর পর ওই ইউপিতে পরাজিত এক সদস্য পদের প্রার্থীর প্রতীকে সিল দেয়া ১০০ ব্যালট উদ্ধার হয়েছে।
শনিবার ছাইদার রহমান নামের প্রার্থীর তালা প্রতীকের সিল দেয়া এসব ব্যালট পেপার উদ্ধার করা হয়। সোমবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আজমিরুজ্জামান।
তিনি জানান, উপজেলার শান্তিরাম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কেন্দ্র ক্ষুদিরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষের টেবিলের নিচে বিছানো কার্পেটের নিচ থেকে ব্যালটগুলো উদ্ধার করে পুলিশ।
২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর এ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে ভোটের ফলাফলে বিজয়ী হন জাহেদুল ইসলাম। তিনিই এখন এই ইউপিতে সদস্য আছন। নির্বাচনে তার থেকে ৭ ভোট কম পেয়ে পরাজিত হয়েছিলেন তালা প্রতীকের ছাইদার রহমান।
ব্যালট উদ্ধার প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং অফিসার ও উপজেলার সাবেক কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এ কে এম ফরিদুল হক।
বিষয়টিকে রহস্যজনক বলছেন নির্বাচনকালীন সময়ের ওই ইউনিয়নের রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম সাবু। আর উপজেলা নির্বাচন অফিসার সেকেন্দার আলী বলেছেন, তদন্তের কাজ পুলিশের। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পুলিশ ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষের পুরাতন কার্পেট পরিবর্তন করার সময় তালা প্রতীকের বেশ কিছু সিল মারা ব্যালট পেপার পান বিদ্যালয়ের পিয়ন কাম নৈশ প্রহরী ওসমান গণি। বিষয়টি বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমারকে জানালে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সে ব্যাপারে পুলিশ ও নির্বাচন অফিসারকে জানান।
পরে থানার ওসি এম আজমিরুজ্জামান ও ধুবনী কঞ্চিবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক ইসলাম হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং স্থানীয়দের সামনে গণনা করে তালা প্রতীকের ১০০ সিলমারা ব্যালট পেপার জব্দ করেন।
ওসি কে এম আজমিরুজ্জামান বলেন, উদ্ধার ব্যালট পেপার জব্দ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তধীন।
পরাজিত মেম্বার প্রার্থী ছাইদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা আমার মার্কার (তালা প্রতীকের) ব্যালট পেপার লুকিয়ে রেখে আমাকে পরিকল্পিতভাবে, দুর্নীতি করে পরাজিত করেছে। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেন তিনি।
উদ্ধার ব্যালট পেপার প্রশ্নে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ও তৎকালীন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার এ কে এম ফরিদুল হক বলেন, কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন শেষ হওয়ার পর ভোট গণনা করে সব প্রার্থীর এজেন্টকে ফলাফল শিট সরবরাহ করা হয়েছে।
শান্তিরাম ইউনিয়নের রিটানিং অফিসার ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম সাবু জানান, নির্বাচন হয়েছে ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর। প্রায় দেড় বছর পর বিদ্যালয় কেন্দ্রের অফিস কক্ষের কার্পেটের নিচ থেকে সিল মারা ব্যালট পেপার পাওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক মনে হচ্ছে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসার সেকেন্দার আলী জানান, বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে। এটি পুলিশের কাজ। তারা তদন্ত শেষে নির্বাচন অফিসকে জানাবেন। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে নির্বাচন অফিস।