সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে কর্মরত ৬৭৮ জন জাল সনদধারী শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই তালিকায় মেহেরপুরের রয়েছেন ছয়জন শিক্ষক।
তাদের মধ্যে তিনজন গাংনী উপজেলার বামন্দী নিশিপুর স্কুল ও কলেজের শিক্ষক।
প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা বলছেন, তাদের কাছে এখনও সরকারিভাবে নির্দেশনা আসেনি। প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
অভিযুক্ত মেহেরপুরের শিক্ষকরা হলেন মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি এআরবি কলেজের যুক্তিবিদ্যার প্রভাষক ফাতেমা মহতাসিমা, মোমিনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক মুজিবুর রহমান, গাংনী উপজেলার বামন্দী নিশিপুর স্কুল ও কলেজের কম্পিউটার শিক্ষক আরেফিন ইসলাম, তথ্য ও প্রযুক্তি শিক্ষার শিক্ষক প্রভাষক মাহমুদ হাসান, প্রদর্শক (কম্পিউটার) জাহাঙ্গীর আলম ও সাহেবনগর বহুমুখী উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক কাফুর উদ্দীন।
অভিভাবকরা বলছেন, জাল সনদে চাকরি পাওয়া শিক্ষকরা প্রতারণা করেছেন। তাই তাদের কাছ থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের ভালো কিছু শেখার আশা করা যায় না।
বামন্দী নিশিপুর স্কুল ও কলেজের এক ছাত্রের বাবা সেলিম রেজা বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানে আমার বড় ছেলে লেখাপড়া করে। শুনছি, এখানে সনদ জাল করে অনেকেই চাকরি করছেন। জাল সনদে চাকরি পাওয়া শিক্ষকরা তথ্য চুরি করে চাকরি করছেন, তাই তাদের কাছ থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের ভালো কোনো শিক্ষা পাওয়ার আশা নেই।’
তবে জাল সনদের অভিযোগ অস্বীকার করেন অভিযুক্তরা।
গাংনী উপজেলার সাহেবনহর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত শিক্ষক কাফুর উদ্দীন বলেন, ‘আমি নট্রামস কর্তৃক কম্পিউটার সনদ নিয়েছি। আমাকে ২০১৩ সালে একবার ধরেছিল, সেখানে আমার ওই সনদ দেখিয়ে রেহাই পাই। এবার আমার সনদকে জাল বললে, আমি আইনের আশ্রয় নেব। কারণ, এর সঙ্গে আমাদের সম্মান জড়িয়ে আছে।’
বামন্দী নিশিপুর স্কুল ও কলেজের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন অনলাইনের মাধ্যমে এ খবরটি জেনেছি। সবচেয়ে দুর্ভাগ্য ও কষ্টের বিষয়, আমাদের প্রতিষ্ঠানের তিন শিক্ষক রয়েছেন এ তালিকায়। তবে সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো চিঠিপত্র আসেনি। সরকারিভাবে বা বোর্ডের কোনো চিঠি পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
একই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মাসুম রেজা বলেন, ‘জাল সনদধারীদের তালিকা করে সরকার খুব ভালো কাজ করেছে। যদিও আমার প্রতিষ্ঠানেরই তিনজন শিক্ষক রয়েছেন। তারপরও বলব, যারাই জাল সনদে চাকরি করছে, তাদের সবার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্বাস উদ্দিন বলেন, ‘যে ছয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে জাল সনদে চাকরি নেয়ার অভিযোগ উঠেছে, আমরা তাদের বিষয়ে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদ ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের খোঁজ খবর নিয়ে জানাতে বলেছি। পরে ওপরের কর্মকর্তারা যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশ দেবেন, তাদের বিরুদ্ধে সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশে অভিযুক্তদের এমপিও বন্ধ এবং অবৈধভাবে এমপিও বাবদ ভোগ করা টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত নিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়।
এ ছাড়া জাল সনদধারী যেসব শিক্ষক অবসরে গেছেন, তাদের অবসর সুবিধা বাতিল করতে বলেছে মন্ত্রণালয়। যারা অবসরে গেছেন বা চাকরি ছেড়েছেন তাদের টাকা অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে আদায় করতে বলা হয়।