ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন সেটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নামে নিবন্ধন করা সিম কার্ড ব্যবহারের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। সেটটি বর্তমানে আশুগঞ্জ থানার হেফাজতে রয়েছে।
শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় আশুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজাদ রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ছিনতাই হওয়া ওই মোবাইল ফোন সেটের মালিক আশিকুর রহমান। তিনি ভোরের ডাক পত্রিকার আশুগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি। সেট ছিনতাইয়ের ঘটনায় বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলার আবেদন করা হয়। তাতে বিজয়নগরের ইউএনও-কে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে আশুগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার এজাহার সূত্র ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের ২১ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু শামার একটি ইটভাটার সামনে থেকে আশিকুরের স্যামসাং ব্র্যান্ডের একটি মোবাইল সেট ছিনতাই হয়। মুখোশ পরা দুষ্কৃতকারীরা মোবাইল সেট ছাড়াও আশিকুরের কাছ থেকে ৫০০ ইউএস ডলার, আনুমানিক সাড়ে ৭ হাজার টাকা, এক ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন ও ৬ আনা ওজনের একটি স্বর্ণের আংটিসহ মূল্যবান কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি আশুগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন আশিকুর। মোবাইল সেটের বিষয়ে সাধারণ ডায়েরির তদন্ত করেন আশুগঞ্জ থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান। তদন্তে দেখা যায়, ছিনতাই হওয়া ওই মোবাইল সেটে ব্যবহৃত সিম কার্ডটি বিজয়নগরের ইউএনও’র নামে নিবন্ধন করা।
এএসআই মুজিবুর রহমান বলেন, ‘শনাক্ত হওয়ার পর মোবাইল ফোনে ব্যবহৃত সিম কার্ডে যোগাযোগ করলে বিজয়নগর ইউএনও’র একজন স্টাফ ফোনটি রিসিভ করেন। ফয়সাল নামের ওই স্টাফ তখন স্যারের (ইউএনও) সাথে কথা বলতে বলেন। পরে ইউএনও স্যার ফোন দিয়ে জানতে চান যে মোবাইল সেট ছিনতাই হওয়ার তথ্য-প্রমাণ থানায় আছে কি না। তাছাড়া মোবাইলের সব কাগজপত্র রয়েছে কি না। আমি ইউএনও স্যারকে জানাই যে জিডি কপি রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউএনও স্যার তার স্টাফ জালালকে যে সিমটি দিয়েছেন সেটি প্রথমে একটি বাটন ফোনে ছিল। বাটন ফোনটি নষ্ট হয়ে গেলে জালাল তার ব্যক্তিগত ফোন সেটে সিমটি লাগিয়ে ব্যবহার করতে থাকেন। আর জালাল ফোন সেটটি এনেছিলেন ভৈরব থেকে। আর এই ফোন সেটটিই হচ্ছে সাংবাদিক আশিকের ছিনতাই হওয়া সেট।’
মামলার বাদী আশিকুর রহমান বলেন, ‘পরিচিত এক পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে ছিনতাই হওয়া সেটটিতে ব্যবহার হওয়া সিমকার্ডধারীর নাম-পরিচয় বের করি। সেখানে এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদের ছবিসহ নাম-ঠিকানা পাই। তখনও আমি জানতে পারিনি তিনি বিজয়নগরের ইউএনও। ‘২২ মে বিকেলে ইউএনওর কার্যালয়ের একটি সরকারি নম্বর থেকে ফয়সাল নামে একজন ফোন করেন। তিনি জানান- মোবাইল সেট নিতে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, সেটটি কেনার রসিদ ও বক্স লাগবে। সে অনুযায়ী পরদিন মোবাইল সেটটি আনতে গেলে তারা টালবাহানা শুরু করে। সে জন্য আদালতে মামলা করেছি।’
ওসি আজাদ রহমান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের এক স্টাফ মোবাইল সেটটি থানায় দিয়ে গেছেন। আর বাদী বলতেই পারেন। তবে আমরা তদন্ত করে দেখব সিম ও সেটটি কার ছিল।’
ইউএনও এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ জানান, তার এক কর্মচারী ভৈরব থেকে মোবাইল সেটটি কিনেছিল। ব্যবহার ও যোগাযোগের জন্য তার নিবন্ধিত একটি বাংলালিংক সিম ওই কর্মচারীকে দিয়েছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘সরল বিশ্বাসে স্টাফ জালালকে সিমটি দেয়ায় এমনটা হয়েছে। আমার সতর্ক হওয়া দরকার ছিল। মোবাইলের মালিকের সঙ্গে আমার এখনও কথা হয়নি। তিনি আমাকে বিপদে ফেলতে ও সম্মান ক্ষুণ্ন করতে এই মামলা করেছেন।’