যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা করা নতুন ভিসা নীতি আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জন্য এই লজ্জা বহন করে এনেছে। এই সরকার বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিবন্ধক।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শনিবার এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে এই সমাবেশ হয়। রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। এর মাধ্যমে ১৯ মে শুরু হওয়া সারাদেশে মহানগর ও জেলায় চারদিনের যে সমাবেশের কর্মসূচি শুরু হয়েছিল তা শনিবার ১৫ জেলার মধ্য দিয়ে শেষ হলো।
নয়াপল্টনের সমাবেশে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছে যে বাংলাদেশে আগামীতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য যে নির্বাচন, তা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে যারা বাধা দেবে তাদেরকে তারা ভিসা দেবে না। তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
‘এই বাংলাদেশে গণতন্ত্র অথবা জনগণের ভোট এবং সুষ্ঠু নির্বাচনকে যারা বাধা দিয়েছে ও দিচ্ছে তারা হচ্ছে বর্তমান সরকার। আজ আমেরিকা বলেছে যে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও সুষ্ঠু নির্বাচনে যারা বাধা দেবে তাদেরকে তারা ভিসা দেবে না। অর্থাৎ তারাও এদেরকে (সরকার) প্রত্যাখ্যান করেছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিএনপি এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। আমরা ঘোষণা করেছি যে শেখ হাসিনার অধীনে অতীতে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। আমাদের সঙ্গে যারা আন্দোলনে আছে তারাও শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না।
আন্তর্জাতিকভাবেই দাবি উঠেছে যে নির্বাচন হতে হবে অংশগ্রহণমূলক। আমরা যদি নির্বাচনে না যাই তাহলে তা অংশগ্রহণমূলক হবে না। অতএব, এই সরকার যত কথাই বলুক না কেন, এদেশের মানুষ বুঝতে পেরেছে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন নয়।’
নয়াপল্টনে শনিবার বিএনপির সমাবেশে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে কর্মী-সমর্থকরা যোগ দেন। ছবি: নিউজবাংলা
বিএনপির এই বর্ষীয়াণ নেতা বলেন, ‘এ ধরনের স্বৈরাচার সরকার নিজে থেকে আপসে সরে দাঁড়াবে না। এই সরকারকে হটাতে হবে। সেজন্য গণঅভ্যুত্থানের বিকল্প নেই। দেশের মানুষ প্রস্তুত।
এদেশের মানুষ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বৈরাচার সরকারকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে হটিয়েছে। তার স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটিয়েছে। পাকিস্তান আমলে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আইয়ুব খানের মতো স্বৈরাচারকে হটাতে পেরেছে। অচিরেই গণআন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারকে বিদায় করতে হবে।’
বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন সাবেক এই স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘এই সরকার গায়ের জোরের সরকার। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তাদের অন্যায় আবদার, অন্যায় নির্দেশ আপনাদের মানার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। অতিউৎসাহী হয়ে যারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছেন, তারা এই অবৈধ সরকারের পক্ষ ত্যাগ করে জনগণের পক্ষে আসুন। আপনাদেরকে কেউ কিছু বলবে না।’
মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, নাসির উদ্দিন অসীম, রকিবুল ইসলাম বকুল, যুবদল নেতা সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ।