রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয় চিকিৎসক ফাহাদের (ছদ্মনাম)। অপরিচিত ব্যক্তি ফাহাদকে জানান, তার কাছে সৌদি রিয়াল আছে। যা কম দামে বিক্রি করবেন। ৯ লাখ রিয়াল বিক্রি করবেন ৯ লাখ টাকায়। লোভে পড়েন ফাহাদ, নামমাত্র মূল্যে সৌদি রিয়াল কেনার জন্য অজ্ঞাত ব্যক্তির হাতে তুলে দেন ৯ লাখ টাকা। আর ওই ব্যক্তি ফাহাদকে দেন একটি ব্যাগ।
বাসায় ফেরার পর ব্যাগ খুলে ফাহাদ দেখতে পান রিয়ালের পরিবর্তে ভেতরে রয়েছে গামছায় মোড়ানো পেপার। সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছে। বনানী থানায় একটি মামলা করেন। এ্ই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বনানী থানা পুলিশ প্রতারক চক্রের ৫ সদস্যকের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন, মো. মিরাজ তালুকদার, আহাদ শেখ, হায়দার মৃধা, মফিজুল মিয়া ও ইমারাত মোল্লা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে ফাহাদ বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ দিয়ে হেঁটে বাসায় যাচ্ছিলেন। পথে অজ্ঞাতনামা একজন ব্যক্তি সৌদি রিয়েল কোথায় ভাঙ্গানো যায় তাকে জিজ্ঞেস করেন। ফাহাদ অজ্ঞাত ব্যক্তিকে কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে এআর মানি এক্সচেঞ্জ দেখিয়ে দেন। তখন ফাহাদকে তার সাথে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। ফাহাদও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির সঙ্গে এআর মানি এক্সচেঞ্জে যান।
তিনি জানান, অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি মানি এক্সচেঞ্জে থেকে ১০০ রিয়াল পরিবর্তন করে টাকা নেন। এআর মানি এক্সচেঞ্জ থেকে বের হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ফাহাদকে জানান, তার কাছে আরো অনেক সৌদি রিয়াল আছে। যা মানি এক্সচেঞ্জের চেয়ে একটু কম মূল্যে ৯ লাখ রিয়াল ৯ লাখ টাকায় দিতে পারবেন। ফাহাদের বোন হজের জন্য সৌদি আরব যাবেন। সৌদি রিয়াল প্রয়োজন হওয়ায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির কাছ থেকে রিয়াল নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে ১ মার্চ সেই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ফাহাদকে ফোন করে রিয়াল নেয়ার জন্য বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ আসতে বলেন। ফাহাদ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির কথা মতো আসেন। তখন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির সাথে আসা ২ জন ব্যক্তি তাকে একটি ব্যাগ দেন।
ওসি জানান, অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি জানান, ব্যাগের মধ্যে ৯ লাখ রিয়াল আছে। ফাহাদ সরল বিশ্বাসে ব্যাগটি গ্রহণ করে নগদ ৯ লাখ টাকা দেন। পরে বাসায় গিয়ে ব্যাগটি খুলে ভেতরে পেপার গামছা দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় দেখতে পান। ফাহাদ প্রতারণার বিষযটি বুঝতে পেরে বনানী থানায় একটি মামলা করেন।
তিনি বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নূর উদ্দিন ও এসআই প্রিয়তোষ চন্দ্র সরকার মামলাটি তদন্তকালে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করেন। এরপর ২১ মে গোপালগঞ্জ থেকে আসামী লিয়াকতকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত মিরাজ, আহাদ, হায়দার, মফিজুল ও ইমারাতকে গ্রেপ্তার করে।