যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত নতুন ভিসা নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশে চার ক্ষেত্রে জড়িত ব্যক্তি সে দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, ওইসব ব্যক্তির পরিবারের অন্য সদস্যরাও এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবেন।
ক্ষেত্রগুলো হলো- নির্বাচনে ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন, ভোট কারচুপি, বাক্-স্বাধীনতা বা সমাবেশের স্বাধীনতায় বাধাদান এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে সহিংসতা সৃষ্টি।
বুধবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের টক শো তৃতীয় মাত্রায় এসব তথ্য জানান দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। জিল্লুর রহমানের উপস্থাপনায় এই আয়োজনে প্রশ্নোত্তর পর্বে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা করা নতুন ভিসা নীতি নিয়ে বিস্তারিত বলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি অনুযায়ী, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ও সহযোগী বাংলাদেশিদের ভিসাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ দিতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র।
কে বা কারা এই বিধিনিষেধের আওতায় আসবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ডোনাল্ড লু বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজ (বুধবার) একটি নীতি ঘোষণা করেছেন। আমরা এখনও নীতিটি কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করিনি। চারটি ক্ষেত্রের যেকোনো কোনো একটিতে জড়িত থাকলে এই নীতির আওতায় তাদের যে কারও যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিতে চাই- এই নীতি নিরপেক্ষ ও গঠনমূলক উপায়ে প্রয়োগ করা হবে। এটি বিরোধী দল ও সরকার উভয়ের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রয়োগ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার কখনোই নির্বাচনে পক্ষ নেয় না। আমরা কোনো নির্দিষ্ট দল বা বিশেষ প্রার্থীকে সমর্থন করি না। যুক্তরাষ্ট্র সরকার একমাত্র অবাধ ও সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে।’
ভিসার নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরাও একই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন বলে জানিয়েছেন ডোনাল্ড লু। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “উত্তরটি হচ্ছে ‘হ্যাঁ’। এই নীতি ও এ-সংক্রান্ত আইন উভয়ই খুব স্পষ্ট। পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্য, অর্থাৎ স্বামী বা স্ত্রী ও সন্তানেরা এই ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় পড়বেন।”
প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশের জন্য কেন এই ভিসা নীতি গ্রহণ করা হলো এবং এর প্রয়োজনীয়তা কী? জবাবে ডোনাল্ড লু’র ভাষ্য, ‘আমি খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা আজ কারও বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেইনি। আপনি যেমনটা এইমাত্র উল্লেখ করেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী (ব্লিংকেন) আজ (বুধবার) একটি নতুন নীতি ঘোষণা করেছেন। এর আওতায় বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত করার সঙ্গে যারা দায়ী বলে যুক্তরাষ্ট্র সরকার মনে করবে, তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসায় বিধিনিষেধ আরোপ করা যাবে।
‘সুতরাং তিনি হতে পারেন সরকার, বিচার বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা বিরোধী দলের সদস্য। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, দক্ষিণ এশিয়া ও বিশ্বজুড়ে নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার জন্য গণতন্ত্রের সুরক্ষা অপরিহার্য।’
আদেশদানকারী ও পালনকারী উভয়েই এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবেন বলে জানান ডোনাল্ড লু। তিনি বলেন, ‘যারা আদেশ দেবেন, আর যারা সে অনুযায়ী কাজ করবেন- উভয়ের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে। যারা আদেশ মেনে সহিংসতা বা ভোটারদের ভয় দেখাবেন বা ভোট কারচুপি করবেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবেন না। একইসঙ্গে যারা আদেশ দেবেন, তারাও যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবেন না।’
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তায় বাংলাদেশ সরকারের কাটছাঁটের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একদমই না। ৩ মে বাংলাদেশ সরকারকে এই নতুন নীতি সম্পর্কে আগাম জানিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়ায় আমি ব্যক্তিগতভাবে যুক্ত ছিলাম। তাই আমাদের ৩ মে জানিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত এবং সে বিষয়ে আজকের ঘোষণা কোনোভাবেই বাংলাদেশ সরকারের ১৪ মে নেয়া সিদ্ধান্তের পাল্টা পদক্ষেপ হওয়ার সুযোগ নেই। যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রতিশোধের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়নি, নেবেও না।’
নতুন ভিসা নীতির প্রয়োগ কতটা কাজে লাগবে?- এমন প্রশ্নের জবাবে ডোনাল্ড লু বলেন, ‘এটি সামনে এগিয়ে যাওয়ার একটি নীতি। যার অর্থ, আমাদের প্রত্যাশা, এই নীতি সহিংসতা প্রতিরোধে সহায়তা করবে এবং বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে উৎসাহিত করবে।
‘আমরা বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। আমরা পেছনে তাকাতে চাই না। যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে বাংলাদেশের বন্ধু মনে করে। আমরা চাই এই নীতি বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, তার সরকার, সুশীল সমাজ এবং জনগণকে সহায়তা করবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’