বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আ.লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বৈঠক

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ২৫ মে, ২০২৩ ১৯:০৪

গুলশানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দু’জন করে নেতা প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেন। বৈঠকে তিন দলের পক্ষ থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করা হয়।

বাংলাদেশ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে দেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দলের।

বৃহস্পতিবার গুলশানে রাষ্ট্রদূতের বাসায় এই বৈঠকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, জাতীয় সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির দুই জন করে প্রতিনিধি যোগ দেন। বৈঠকে অংশ নেয়া তিন দলের পক্ষ থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করা হয়।

বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে অংশ নেন দলটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত।

জাতীয় পার্টির পক্ষে অংশ নেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল।

আর বিএনপির পক্ষে বৈঠকে অংশ নেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ।

বৈঠকে তিন দলের পক্ষ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত নতুন ভিসা নীতির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করা হয় বলে দলগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়।

আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র নতুন যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে তাতে আপত্তির কিছু নেই। তারা বরং গণতন্ত্র এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করেছে। এতে আওয়ামী লীগের ক্ষতির কিছু নেই। বরং ক্ষতি যা হওয়ার তা বিএনপির হয়েছে।’

ড. সেলিম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের কাএণ মোটা দাগে বিএনপি চারভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রথমত, বিএনপি যে এতোদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন করছিল সে দাবি ভেস্তে গেল। কেননা যুক্তরাষ্ট্র তাতে সমর্থন জানায়নি। আর দু’মাস আগেই আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলকে তারা জানিয়ে দেয় যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বক্তব্য বা অবস্থান নেই।

‘দ্বিতীয়ত, বিএনপি এতোদিন যে নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখাচ্ছিল সেটাও আসেনি। যে ভিসা নীতি ঘোষণা হয়েছে সেটা সবার জন্য প্রযোজ্য।

‘তৃতীয়ত, বিএনপি যে নির্বাচন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিল সেটা আর করতে পারবে না। কেননা ভিসা নীতিতে বলাই হয়েছে- যারা সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেয়া হবে না।

‘আর সবশেষ বলা হচ্ছিল যে বিএনপি অংশ না নিলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থানের কারণে তারা অংশ না নিলেও প্রতিহত করতে পারবে না, যে কারণে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে না।’

বৈঠক শেষে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। শুরুতেই তিনি জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত নতুন ভিসা নীতিকে স্বাগত জানান।

আমির খসরু বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, তারই প্রতিফলন যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা (বস্তুত নতুন ভিসা নীতি)। বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে এটি একটি বড় পদক্ষেপ। এই নীতি ক্ষমতাসীনদের ভোট কারচুপির বিরুদ্ধে বড় ধরনের সিগন্যাল।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ভোট রিগিং হচ্ছে। ভোটের দিন ছাড়াও প্রতিদিন ভোট রিগিং হয় এখানে। এটা বন্ধ করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাই।

‘যুক্তরাষ্ট্র এখানে যাদের কথা বলেছে, একেবারে সরাসরি যাদের কথা বলেছে এবং তাদেরকে যে ম্যানশন করেছে- এটা একটা বড় পদক্ষেপ। এটা তাদের জন্য বড় ম্যাসেজ।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত এসেছে। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে মানুষের নির্বাচন নিয়ে যে শঙ্কা, আমি মনে করি এ ধরনের একটি পদক্ষেপ আগামী দিনে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’

বিএনপি স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘এই স্টেটমেন্টটা কান্ট্রি স্পেসিফিক-বাংলাদেশ। এটা বাংলাদেশের সংগঠনগুলোকে স্পেসিফিক বলেছে, এটা বাংলাদেশের ব্যক্তিগুলোকে স্পেসিফিক বলেছে। একেবারে কম্প্রিহেনসিভলি নির্বাচন বানচাল করার জন্য, নির্বাচনকে দখল করার জন্য, ভোট চুরির মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সংগঠন-ব্যক্তিসহ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সরাসরি অ্যাড্রেস করেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এর মধ্যে তারা বিচার বিভাগের কথা বলেছে, সাংবাদিকদের কথা বলেছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কথা বলেছে, সরকারি কর্মকর্তাদের কথা বলেছে। যারাই ভোট চুরির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকবে সবার ক্ষেত্রে এটা যুক্তরাষ্ট্র অ্যাপ্লাই করবে।’

সরকারি দল যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন নয়; বিএনপি কি উদ্বিগ্ন- এমন প্রশ্নের জবাবে আমির খসরু বলেন, ‘সরকার উদ্বিগ্ন না হলে ভালো কথা। তাহলে তাদেরকে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটাধিকার, আইনের শাসন, জীবনের নিরাপত্তা এগুলো ফিরিয়ে দিতে হবে। তা না দিলে তাদেরকে উদ্বিগ্ন হতে হবে।

‘ভোটাধিকার ফিরিয়ে না দিয়ে যদি আবারও মানুষের ভোট কেড়ে নেয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে তাহলে তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ থাকবে।’

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু এবং মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়া জাতীয় পার্টিরও (জাপা) যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি নিয়ে কোনো আপত্তি নেই বলে জানান দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।

তিনি নিউজ বাংলাকে বলেন, ‘ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এই ভিসা নীতি করেছে। এটিকে জাতীয় পার্টি স্বাগত জানায়।

জাপা মহাসচিব জানান, বৈঠকের মূল বিষয় ছিল বাংলাদেশের জন্য আমেরিকার নতুন ভিসানীতি। সেটা জানানোর জন্যই বৈঠকটি ডাকা হয়। বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন যে ভিসা নীতি, রাষ্ট্রদূত সেটি আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন। আমাদের মতামতও জানতে চেয়েছেন।

‘প্রতিক্রিয়ায় আমি বলেছি, এই ভিসা নীতি ঠিক আছে। এটা আমেরিকা সরকারের নিজস্ব বিষয়। তারা কী পলিসি করবে, সেটা তাদের বিষয়। এ বিষয়ে আমাদের কোনোরকম আপত্তি বা অবজেকশন নেই। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ভালো। তারা এটা করেছে যেন বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়। এটাকে আমরা অ্যাপ্রিশিয়েট করি।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘বৈঠকে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আন-অফিসিয়াল কিছু কথা-বার্তা হয়েছে।’

বৈঠক শেষে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তাদের ফেসবুক পেজে পিটার হাসের বার্তা প্রচার করে। তাতে বলা হয়, ‘আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ভিসা সীমিত করার এই নতুন নীতি প্রযোজ্য।’

এ বিভাগের আরো খবর