বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে না থেকেও আছে বিএনপি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ২৪ মে, ২০২৩ ২১:৪৫

বিএনপির স্থানীয় একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে জানান, তাদের কোনো দলীয় প্রার্থী নেই। তবে ভোট দিতে তারা কেন্দ্রে যাবেন। আর ভোটটা দেবেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনকে। কারণ নৌকা প্রতীকের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী তিনিই। তারা মনেপ্রাণে চাচ্ছেন আজমত উল্লা খানের পরাজয়।

নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি পরিবর্তনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আসন্ন সব সিটি করপোরেশনের নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে দলটির পক্ষ থেকে কোনো সিটিতেই মেয়র পদে ধানের শীষ প্রতীকে কোনো প্রার্থী দেয়া হয়নি।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী দেশের পাঁচটি সিটি করপোরেশনের মধ্যে বৃহস্পতিবার ভোট হবে গাজীপুরে। এরপর ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন সিলেট ও রাজশাহী সিটিতে ভোটগ্রহণ হবে।

বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তের কারণে অন্যান্য সিটি করপোরেশনের মতো গাজীপুর সিটির ভোটেও ধানের শীষের কোনো প্রার্থী নেই। এমনকি বিএনপির বেশ কয়েকজন স্থানীয় নেতা এখানে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিলে তাদেরকে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। এ অবস্থায় দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ভোট কোথায় যাচ্ছে তা নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা।

বিএনপির স্থানীয় একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে জানান, তাদের কোনো দলীয় প্রার্থী নেই। তবে ভোট দিতে তারা কেন্দ্রে যাবেন। আর ভোটটা দেবেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনকে। কারণ নৌকা প্রতীকের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী তিনিই। আর তারা মনেপ্রাণে চাচ্ছেন আজমত উল্লা খানের পরাজয়।

এদিকে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়র পদে না থাকলেও বিএনপি পরিবারের প্রার্থী আছেন এবারের নির্বাচনে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ‘হাতি’ প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন সরকার শাহনূর ইসলাম রনি। বিএনপিতে কোনো পদ না থাকলেও তিনি দৃশ্যত এই দলেরই লোক।

রনির বাবা নুরুল ইসলাম সরকার বহু বছর ধরেই বিএনপিতে যুক্ত। ২০০৫ সালে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টারকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার মামলায় মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে তিনি এখন কারাবন্দি।

রনির চাচা হাসান উদ্দিন সরকার গাজীপুরের গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। এবারের নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের সমর্থন তার পক্ষে আছে- গণমাধ্যমে এমনটা দাবি এই স্বতন্ত্র প্র্রার্থীর।

তবে স্থানীয় বিএনপির নেতাদের দাবি, ভোটের মাঠের রাজনীতিতে এগিয়ে আছেন জাহাঙ্গীর আলম। সম্প্রতি গাজীপুর আওয়ামী লীগে কাউন্সিলের মাধ্যমে যেসব যেসব নেতা নির্বাচিত হন, তাদের অধিকাংশই জাহাঙ্গীর আলমের ঘনিষ্ঠ। গোপনে মাঠে সক্রিয় থাকা নেতারাও জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে কাজ করছেন।

বিএনপির নেতারা জানান, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় নারী-পুরুষ মিলে ৩৩ জন বিনেপি নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার প্রায় ১১ লাখ। বিএনপির নেতাদের দাবি, এই ১১ লাখ ভোটারের বড় অংশই ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে রয়েছে। এর বাইরে জামায়াতে ইসলামী ও হাতপাখা প্রতীকের ইসলামী দলের ভোটও তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এসব ভোট জাহাঙ্গীরের মায়ের বাক্সেই পড়বে বলে তারা বিশ্বাস করেন

গাজীপুরের গাছা থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফুর রহমান জুয়েল তাজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দলকে ভালবেসে দলের পক্ষে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র তুলেছিলাম। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। ভোটকেন্দ্রেও যাচ্ছি না।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা যেহেতু বিএনপি করি, কাজেই আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষের জয়-ই কাম্য আমাদের কাছে। আমাদের দলের কেউ ভোট কেন্দ্রে গেলেও নিশ্চয়ই আজমত উল্লাকে ভোট দেবে না। সেক্ষেত্রে ভোটটা যাবে জাহাঙ্গীর আলমের মায়ের প্রতীকে।’

গাজীপুরের সন্তান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেন অবশ্য বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন।

তিনি নিজউবাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা দক্ষ সংগঠক ও দক্ষ প্রশাসক হিসেব পরীক্ষিত। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অগ্রসৈনিক। সৎ, সজ্জন ও যোগ্য ব্যক্তি।

‘আমার বিশ্বাস যেসব দল অংশ নিয়েছে বা যারা অংশ নেয়নি তাদের নেতাকর্মীরা এবং রাজনীতি সচেতন সব ভোটার আজমত উল্লাকেই বেছে নেবেন। একজন আপাদমস্তক রাজনীতিবিদকে জয়ী করে তারা কার্যত রাজনীতিকেই জয়ী করবেন।’

হেফাজতসহ ইসলামপন্থী দলগুলোর ভোটও জাহাঙ্গীরের মা পাবেন বলে মাঠ পর্যায়ে শোনা যাচ্ছে। স্থানীয় সূত্রগুলোর এর কারণও ব্যাখ্যা করেছেন। তারা বলছেন, এই ঘরানার লোকের সঙ্গে বিশেষ করে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের ব্যবসায়িক এবং ক্ষেত্রবিশেষে অনৈতিক অর্থনৈতিক লেনদেন রয়েছে।

গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম ঝুট ব্যবসাসহ বৈধ-অবৈধ অনেক সূত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এর আগে তিনি মেয়র হওয়ায় যতটা না আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের লাভ হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি লাভবান হয়েছে জামায়াত-বিএনপি-হেফাজতের লোকজন।’

প্রসঙ্গত, ২০১৩ ও ২০১৮ সালে গাজীপুরসহ অন্য সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে বিএনপি অংশ নিয়েছিল। এরপর জাতীয় নির্বাচনেও অংশ নেয় দলটি। বিএনপির নেতারা বলছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে তারা এ সরকারের অধীনে সব ধরনের নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, ‘বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। তবে ভিন্ন তথ্য দিচ্ছেন বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মী। তাদের ভাষ্য- ভোটকেন্দ্রে যাবেন, ভোটও দেবেন। আওয়ামী লীগের বিপক্ষে যাকে শক্তিশালী মনে হবে, তাকেই ভোট দেবেন তারা।

তবে, জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী টঙ্গী পৌরসভার টানা কয়েক বারের চেয়ারম্যান এবং গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজমত উল্লা। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযদ্ধের পক্ষের শক্তি, গণতন্ত্রমনা এবং প্রগতিশীল মানুষ অবশ্যই আমাকে বিজয়ী করবেন। অতীতে গাজীপুরবাসীর জন্য কাজ করেছি। আগামীতেও তাদের জন্য কাজ করার সুযোগ চাই।’

এ বিভাগের আরো খবর