বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মেয়েদের ব্যক্তিগত ভিডিও সংগ্রহ করে ব্ল্যাকমেইল করত চক্রটি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ২২ মে, ২০২৩ ১৫:৪৭

সিআইডি জানায়, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম আইডি হ্যাক করে তরুণীদের গোপন ছবি ও ভিডিও হাতিয়ে নিত চক্রটি। পরে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা দাবি করতেন চক্রের সদস্যরা। টাকা দিতে না পারলে ভিডিও কলে এসে আপত্তিকর কর্মকাণ্ড করতে বাধ্য করা হতো।

আন্তর্জাতিক টেলিগ্রাম চক্রের ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) জানিয়েছে, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে হাজারো কিশোরী ও তরুণীর ভিডিও সংগ্রহের মাধ্যমে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

মালিবাগে সিআইডি সদরদপ্তরে সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বিভাগের প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া এ তথ্য জানিয়েছেন।

সিআইডি জানায়, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম আইডি হ্যাক করে তরুণীদের গোপন ছবি ও ভিডিও হাতিয়ে নিত চক্রটি। পরে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা দাবি করতেন চক্রের সদস্যরা। টাকা দিতে না পারলে ভিডিও কলে এসে আপত্তিকর কর্মকাণ্ড করতে বাধ্য করা হতো। আর কোনো প্রস্তাবেই সাড়া না দিলে তরুণীদের নাম-পরিচয় ও ব্যক্তিগত তথ্য লাখ লাখ সাবস্ক্রাইবার থাকা টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোতে ভাইরাল করে দেয়া হতো।

গ্রেপ্তার ৯ জন হলেন মার্ক সাকারবার্গ ওরফে আবু সায়েম, শাহরিয়ার আফসান অভ্র, বোগদাদী শাকিল, ডিটিআর শুভ ওরফে মশিউর রহমান, মো. জসীম, ক্যাকটাস ওরফে কেতন চাকমা, এল ডোরাডো ওরফে শাহেদ, তুর্য ওরফে মারুফ ও মিঞা ভাই ওরফে নাজমুল সম্রাট। তাদের মধ্যে সাকারবার্গ চক্রটির হোতা বলে জানিয়েছে পুলিশ।

‘ভিডিও দেশ-বিদেশে বিক্রি’

সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান মোহাম্মদ আলী টেলিগ্রাম গ্রুপে গ্রেপ্তার ৯ জনের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পাই, গ্রুপটি আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ভিকটিমের কাছ থেকে যে কেবল টাকা আয় করে, তা নয়; চক্রটি ওইসব ভিডিও দেশে-বিদেশে বিক্রি করেও কোটি টাকা আয় করেছে। মাসে ১ থেকে দুই হাজার টাকা সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, পর্তুগাল, কানাডা, আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডের মতো দেশের অসংখ্য ক্রেতা গ্রুপটির সদস্য হয়েছেন। তারা অল্পবয়সী মেয়েদের আপত্তিকর ওইসব কনটেন্ট কিনে সংরক্ষণ করেন।

‘চক্রটির নেতৃত্ব দেয় মার্ক সাকারবার্গ নামের এক ব্যক্তি। শুরুতে খুবই চতুর এই মার্ককে চিহ্নিত করা সহজ ছিল না। মার্কের আসল নাম আবু সায়েম। বেকার সায়েম থাকে চট্টগ্রামে। এনআইডি অনুযায়ী তার বয়স ২০ বছর। সে শ্যামলী পলিটেনিক ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম থেকে ইলেকট্রিক্যালে ডিপ্লোমা করেছে। তার বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।’

সিআইডি জানায়, এক ভুক্তভোগী ও তার প্রেমিকার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি পমপম গ্রুপে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে ডিএমপির তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মার্ক সাকারবার্গ ও তার দলের নামে পর্নোগ্রাফি ও ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা হয়। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় চট্টগ্রামের লালখান বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে মার্ক সাকারবার্গ ওরফে সায়েমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মার্কের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তার ঘনিষ্ট দুই বন্ধু শাহরিয়ার আফসান অভ্রকে চট্টগ্রামের একটি হাউজিং এলাকা থেকে এবং বোগদাদী শাকিলকে কক্সবাজারের উখিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় পুলিশ।

সিআইডির প্রধান বলেন, মার্ক ওরফে সায়েমের মোবাইল ফোন তল্লাশি করে মার্ক সাকারবার্গ আইডিটি লগইন করা অবস্থায় পাওয়া যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আবু সায়েমই মার্ক সাকারবার্গ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে পমপম গ্রুপের যতগুলো চ্যানেল ও গ্রুপ আছে, সেগুলোর অ্যাডমিনদের আসল নাম-পরিচয় পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, অ্যাডমিনদের কাজ ছিল মার্কের হয়ে নতুন নতুন কনটেন্ট জোগাড়। নতুন কনটেন্ট পেতে তারা ভুয়া এনআইডি বানিয়ে টার্গেটের ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম আইডি হ্যাক করতেন একসময়।

‘প্রতিশোধের নেশায় কনটেন্ট সরবরাহ’

অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, ভুক্তভোগী তরুণীদের সাবেক প্রেমিকরাই নতুন নতুন কনটেন্টের জোগান দেন। অর্থাৎ সুসময়ে প্রেমিকার যেসব অন্তরঙ্গ মুহূর্ত তারা ক্যামেরাবন্দি করেছেন, সেগুলোই প্রতিশোধের নেশায় তুলে দেন মার্ক সাকারবার্গদের গ্রুপে। মার্ক তার অ্যাডমিনদের দিয়ে সেগুলোতে মিউজিক বসিয়ে, ফেসবুক আইডি থেকে ছবি নিয়ে ৩০ থেকে ৪০ সেকেন্ডের প্রমো বানিয়ে আপলোড করতেন তার গ্রুপগুলোতে। প্রমো দেখে যারা ফুল ভার্সন দেখতে চান, তাদের ১ থেকে ২ হাজার টাকার প্রিমিয়াম সার্ভিস কিনতে হয়।

পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, মার্ক ওরফে সায়েম, অভ্র এবং শাকিলকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের ডিভাইস তল্লাশি করে মার্ক সাকারবার্গের বিভিন্ন পেজের অ্যাডমিনদের আসল পরিচয় উদ্ধার করা সম্ভব হয়। দেখা যায়, তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ডিটিআর শুভ ওরফে মশিউর রহমান। মশিউরের দায়িত্ব ছিল গ্রুপ থেকে কৌশলে কনটেন্ট সেভ করে রাখা এবং নানা প্রলোভনে তরুণীদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও হাতিয়ে নেয়া। মশিউর চট্টগ্রামের একটি ফিশিং কোম্পানিতে চাকরি করেন। অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাকে কর্ণফুলী এলাকা থেকে প্রেপ্তার করা হয়। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় তার সহযোগী জসীমকেও।

ফাঁদ পেতে গ্রেপ্তার

সিআইডির প্রধান বলেন, সায়েম ও মশিউরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই অ্যাডাল্ট গ্রুপগুলোর অ্যাডমিনদের অনেকেই ঢাকায় অবস্থান করছেন। এ তথ্যের ভিত্তিতে তাদের বেইলি রোড এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় গেট টুগেদারের ফাঁদ পাতা হয়। ফাঁদে পা দিয়ে একে একে গ্রেপ্তার হন গুরুত্বপূর্ণ অ্যাডমিন ক্যাকটাস ওরফে কেতন চাকমা, এল ডোরাডো ওরফে শাহেদ, তুর্য ওরফে মারুফ এবং মিঞা ভাই ওরফে নাজমুল সম্রাট।

চ্যানেলগুলোতে সাবস্ক্রাইবার কত

সিআইডির প্রধান বলেন, ‘মার্ক সাকারবার্গ ও তার সহযোগীদের গ্রুপ ও চ্যানেলগুলোতে সাবস্ক্রাইবের সংখ্যা প্রায় সোয়া চার লাখ। আর সেগুলোতে ২০ হাজার আপত্তিকর ভিডিও এবং প্রায় ৩০ হাজার কন্টেন্ট রয়েছে।

‘অন্যদিকে মাসে ১ থেকে ২ হাজার টাকা ফি দিয়ে তাদের প্রিমিয়াম গ্রুপের সদস্য হয়েছেন দেশ-বিদেশের প্রায় সাড়ে সাত শ মানুষ। আমরা তাদের বিস্তারিত পেয়েছি। তাদের নিয়েও কাজ করছি। তরুণীদের অ্যাডাল্ট কনটেন্ট কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।’

এ ঘটনায় মানিলন্ডারিং তদন্তের পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে সিআইডির প্রধান বলেন, ‘তাহলে কেবল টেলিগ্রাম চক্রের হোতারাই নয়, ফলো দ্য মানি করে তাদের দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা সহযোগীদেরও আইনের আওতায় আনা যাবে।’

সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণীদের (কিশোরী) সঙ্গে কথা বলে আমাদের মনে হয়েছে, একান্ত মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি এবং তা আদান-প্রদান করে তারা যেমন ভুল করেছে, তেমনিভাবে সেই ভুল করে বিপদে পড়া কঠিন সময়ে তারা নির্ভরযোগ্য কাউকে পাশে পায়নি; না পরিবার, না অন্যান্য স্বজন। ফলে অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তারা কোনো আইনের আশ্রয় নিতে পারেনি।’

এ বিভাগের আরো খবর