গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণের বাকি আর মাত্র তিনদিন। আর শেষ মুহূর্তে চলছে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরামহীন প্রচারণা। পথসভা, কর্মিসভার পাশাপাশি নানাভাবে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টায় ব্যস্ত প্রার্থীরা। নাগরিক সমস্যা সমাধানে প্রার্থীরা দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। তুলে ধরছেন উন্নয়নের নানা পরিকল্পনা। ভোটাররা বলছেন, নাগরিক সমস্যার সমাধান, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা যিনি নিশ্চিত করতে পারবেন তাকেই বেছে নেবেন তারা।
রোববার সকাল ১১টায় শহরের প্রকৌশল ভবনের সম্মেলন কক্ষে নগরীর যানজট সমস্যা ও জলাবদ্ধতা নিরসনকে প্রাধান্য দিয়ে ২৮ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান। নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশন থেকে অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করার মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে এই সিটিকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে চান বলে জানান নৌকা প্রতীকের প্রার্থী।
আজমত উল্লা খান পরে নেতাকর্মীদের নিয়ে সদর থানা এলাকার দক্ষিণখান, ধীরাশ্রম, ছোট দেওড়া, নীলেরপাড়া, হাড়িনাল, জোড়পুকুর পাড়, ভানুয়া, চতরবাজার, শিমুলতলী, লক্ষ্মীপুরাসহ আশপাশ এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন পথসভায় ২৫ মে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান।
আজমত উল্লা বলেন, ‘নৌকা উন্নয়নের প্রতীক, জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের প্রতীক। গাজীপুর সিটি করপোরেশন বিগত দিনে দুর্নীতিগ্রস্ত সিটি করপোরেশনে পরিণত হয়েছে। যারা মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন তারা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত। সে কারণে নগরীর কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, দুর্নীতিমুক্ত সিটি করপোরেশন গড়ার লক্ষ্যে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই।’
জাতীয় পার্টির (জাপা) লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন রোববার দিনভর টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানাধীন শিলমুন, মরকুন, পাগাড়, মধুমিতা, গাজীপুরা সাতাইশ, শিংবাড়ি, চেরাগআলী এলাকায় রোড-শো করে প্রচার চালান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
নিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘আমি কাজের মানুষ, কাজকে ভালোবাসি। সচিব থাকাকালে আমি এই নগরীতে অসংখ্য হাসপাতাল এবং স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার উন্নয়ন করেছি। ভোটাররা আমাকে ভোট দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে নগরবাসী আমাকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করবেন বলে আমি আশাবাদী।’
দিকে গাজীপুর শহরের আদালত পাড়া, জয়দেবপুর বাজার ও আশপাশের এলাকায় সকাল থেকে নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করেন বিএনপি ঘরানার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনি। নির্বাচিত হলে তরুণ ও যুবকদের স্বাবলম্বী করে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেন তিনি। এছাড়াও নগরীর সড়ক ব্যবস্থা, যানজট নিরসন, রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ আবর্জনামুক্ত একটি নগরী গড়ে তোলার আশ্বাস দেন তিনি।
গত বেশ কয়েকটি উপনির্বাচন ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে চমক দেখানো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মাওলানা গাজী আতাউর রহমান এদিন সকাল থেকে টঙ্গী পূর্ব থানার বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ, সংশয় ও শঙ্কা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মী ও হাতপাখার লোকেরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করার পরও বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা জরিমানা ও প্রচার কাজে বাধার সৃষ্টি করছেন।
‘একজন মেয়র প্রার্থীকে ৫ জন লোক নিয়ে গণসংযোগ করার কথা বলে নির্বাচনী কার্যক্রমে তারা আমাদেরকে দুর্বল রাখতে চাচ্ছেন। প্রশাসন সরকারি দলের প্রর্থীকে সবদিক থেকে ফেভার করছে। নির্বাচনী মাঠ সবার জন্য সমতল নয়।’
গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘গণমাধ্যমের রিপোর্ট বলছে সরকার দলীয় প্রার্থী বিশাল গাড়িবহর নিয়ে প্রচার চালালেও সে বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেটরা নীরব। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আগে থেকেই অফিস থাকলেও এখানে উদ্দেশ্যমূলক জরিমানা করে কর্মীদের মনোবল ভেঙে দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে আমরা মনে করি না।’
মেয়র প্রার্থী ছাড়াও নগরীর ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে প্রায় সাড়ে তিনশ’ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। তবে প্রচারকালে কোথাও এখন পর্যন্ত অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।
প্রসঙ্গত, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৫ মে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ৪৮০টি ভোটকেন্দ্র সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন।