আমেরিকায় যারা অর্থ পাচার করছেন তাদের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ডাকছে না, অথচ তাকে ডেকে হয়রানি করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।
জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি পলাতক মানুষ নই, বাংলাদেশ থেকে যারা অর্থ পাচার করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না। আজ যিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তাকে হাইকোর্ট ২১টি বিষয়ে জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে।
‘যারা আমেরিকায় অর্থ পাচার করছেন, তাদের দুদক ডাকল না। আমি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বিলাসী জীবনযাপন করিনি, সে জন্য হয়রানি করা হচ্ছে।’
দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ২১ ও ২২ মে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেয়ার জন্য জাহাঙ্গীর আলমকে তলব করা হলে তিনি সময়ের আবেদন করেছিলেন। গত ১৮ মে তার আবেদন গ্রহণ করে তাকে এক মাস সময় দেয়া হলেও রোববার হঠাৎ করেই দুদকে উপস্থিত হন তিনি। এ সময় মুখোমুখি হন গণমাধ্যমের।
জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লাখ লাখ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছি। মেয়রের পদের মেয়াদ পাঁচ বছর, মাত্র তিন বছরের মাথায় ঢাকা থেকে চিঠি দিয়ে অবৈধভাবে আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এটা একজন জনপ্রতিনিধির জন্য কতটুকু আইন অনুসরণ করা হয়েছে, সে বিচার আপনাদের।’
তিনি বলেন, ‘সরকার আমাকে দুটি প্রজেক্টে মাত্র ৬০০-৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। কিন্তু দুদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে আমার বিরুদ্ধে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। এটা কী করে সম্ভব? এটা কাল্পনিক, বানোয়াট ও মিথ্যা।’
বরখাস্ত হওয়া এই মেয়র বলেন, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণা চলছে। আমার জন্মদাতা মা মেয়র প্রার্থী, আমি প্রধান সমন্বয়কারী। ২৫ তারিখে ভোট। আজ ও আগামীকাল নির্বাচনের প্রচারণা শেষ দিন। ২১ ও ২২ তারিখ নির্বাচনের প্রচারণা শেষ দিন। এমন সময় দুদক আমাকে ডেকেছে। নির্বাচনের সময় আজ কেন আমাকে আসতে বাধ্য করল। একটি মহল দুদককে ব্যবহার করে আমাকে হয়রানি করছে। একজন জনপ্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?’
এক প্রশ্নে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হিসেবে আজ দুদক এসেছি। আমি সময় চেয়ে আবেদন করেছিলাম, কিন্তু আমি জানতে পারিনি, আমাকে সময় দেয়া হয়েছে কি না, সেটা জানতেই আজ আমি এখানে এসেছি।’
গত ১৮ মে দুর্নীতির অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ, ব্যাখ্যা ও প্রস্তুত করতে এক মাস সময় চেয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম।
দুদকের অনুসন্ধান নথি বলছে, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ এসেছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিছুর রহমানসহ করপোরেশনের কতিপয় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও উঠেছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জাহাঙ্গীরকে তলব করে দুদক।
গাজীপুর সিটির নির্বাচনে ২০১৮ সালে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হযেছিলেন জাহাঙ্গীর। বঙ্গবন্ধু ও দলকে নিয়ে মন্তব্যের জেরে ২০২১ সালের নভেম্বরে বহিষ্কার হন তিনি।
এক পর্যায়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকেও তাকে সরানো হয়। তবে এ বছরের জানুয়ারিতে দলের শৃঙ্খলা মেনে চলার শর্তে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে আওয়ামী লীগ।
এর মধ্যে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে আওয়ামী লীগ মেয়র পদে মনোনয়ন দেয় আজমত উল্লা খানকে। তিনি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। অন্যদিকে দলের মনোনয়ন না পেয়ে জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র কেনেন। পাশাপাশি মা জায়েদা খাতুনের নামেও মনোনয়নপত্র নেন তিনি।
ঋণখেলাপির জামিনদার হওয়ার কারণে গত ৩০ এপ্রিল জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম। তবে তার মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়।
প্রার্থিতা ফিরে পেতে জাহাঙ্গীর আলম হাইকোর্টে রিটও করেন। তবে তার করা রিট খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। সম্প্রতি তিনি আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার হয়েছেন।