সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে তছনছ হয়েছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বাসিন্দাদের খুপড়িঘর। কঠিন এ পরিস্থিতিতে দ্বীপটিও পর্যটক শূন্য। এর মানে হচ্ছে, পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল শ্রমজীবী মানুষদের ডাল-ভাত জোগাড়ই অনিশ্চিত। এর মধ্যে যোগ হয়েছে রোদ-বৃষ্টি থেকে সন্তানদের রক্ষায় দুমড়েমুচড়ে থাকা ঘরটি মেরামতের দুশ্চিন্তা।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বাসিন্দাদের বড় একটি অংশ পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। পর্যটন মৌসুমে যে আয় হয়, তা দিয়েই অধিকাংশ শ্রমজীবী বাসিন্দার বছরের খোরাক মেলে। তারা জানান, খাদ্য-বস্ত্রের বাইরে বাড়তি খরচ করার সুযোগ তাদের অধিকাংশরই নেই।
সেন্ট মার্টিনের ডেইল পাড়ার হাফেজ আহমেদ (৪০) বলেন, ‘পাঁচ লাখ টাকা দিয়া ঘর তৈরি করছিলাম, সব বাতাসে উড়াই নিয়ে গেছে। এখন ছোট করে ঘর বানাইলেও তো টাকা লাগব। আমার কাছে ১০০ টাকাও নাই। পরিবারে আছে ১১ জন। স্ত্রী-সন্তানদের মুখে ভাত দেব, নাকি ঘরের ছাদ দেব, কিছুই বুঝতেছি না। কর্জ (ঋণ) করে বাজার সদাই করতেছি এখন।’
রিকশাচালক ইমান হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় এসে সব লণ্ডভণ্ড করে দিছে। জীবন বাঁচাতে পরিবার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গেছিলাম। ঝড়বৃষ্টি কমার পর ফিরে দেখি কিছুই ঠিকঠাক নাই। ত্রিপলের ঘর উড়াই নিয়ে গেছে।’
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটক এলে কাজ পান মাঝি, দোকানদার, রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী এমনকি ঝিনুক কুড়িয়ে মালা বানিয়ে বিক্রি করা শিশু-কিশোররা। বর্তমানে পর্যটক না আসায় তাদের নতুন আয়ের ব্যবস্থাও নেই।
দ্বীপের পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দা হোসেন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের আশপাশে বাড়িঘর ভাঙছে। কিন্তু আমার বাড়ির হালকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তারপরও মেরামত করতে গেলে ২০-২৫ হাজার টাকা লাগবে।’
ত্রাণের বিষয়ে ফজলু মিয়া বলেন, ‘কিছু টিন আর ত্রাণসামগ্রী পাইছি, তবে ঘর তৈরি করতে টাকার প্রয়োজন। আর কিছু চাই না। শুধু একটা ঘর চাই। সরকারের কাছে এটাই আমাদের আকুল আবেদন।’
টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইরফানুল হক চৌধুরী বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে সরকারি ত্রাণসামগ্রী নিয়ে আমি সেন্ট মার্টিনে অবস্থান করছি। প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে দুই বান্ডেল ঢেউটিন ও নগদ ছয় হাজার টাকা করে বিতরণ করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কোনো পরিবার বাদ যাবে না। ধাপে ধাপে সবাইকে দেয়া হচ্ছে। যাদের এসব দিয়ে হচ্ছে না, তাদের জন্য অন্য ব্যবস্থা করতে হবে।’