বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিলুপ্তপ্রায় ৩৭ প্রজাতির মাছের প্রজনন পদ্ধতি উদ্ভাবন

  •    
  • ২১ মে, ২০২৩ ১৩:২৫

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে গবেষণা কার্যক্রম সাম্প্রতিককালে জোরদার করা হয়েছে এবং দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে গবেষণা উদ্যেগ গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল দেশীয় মাছকে পুনরুদ্ধার করার জন্য স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’

দেশে বিলুপ্তপ্রায় মাছের সংখ্যা ৬৪টি। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা বিলুপ্তপ্রায় ও দেশীয় মাছের ওপর গবেষণা পরিচালনা করে ইতোমধ্যে ৩৭ প্রজাতির মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এরমধ্যে পাবদা, গুলশা, টেংরা, গুজি আইর, চিতল, ফলি, মহাশোল, বৈরালী, বালাচাটা, গুতুম, কুচিয়া, ভাগনা, খলিশা, গজার, রাণী, বাতাসি, পিয়ালি ইত্যাদি অন্যতম।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, ২০০৮-২০০৯ সালে চাষের মাধ্যমে দেশীয় ছোট মাছের উৎপাদন ছিল ৬৭ হাজার ৩৪০ টন, যা ২০২০-২১ অর্থ বছরে ২ দশমিক ৬১ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ গত ১২ বছরে দেশীয় ছোট মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৪ গুণ। আগে শুধুমাত্র ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহের স্বাদুপানি গবেষণা কেন্দ্র থেকে বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে গবেষণা পরিচালনা করলেও বর্তমানে ময়মনসিংহের স্বাদুপানি কেন্দ্র ছাড়াও বগুড়ার সান্তাহার, নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর ও যশোর উপকেন্দ্রে বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণে গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে।

আরও জানা যায়, ২০২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বের বিএফআরআইয়ে দেশের প্রথম দেশীয় মাছের লাইভ জিন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই লাইভ জিন ব্যাংকে দেশের বিলুপ্তপ্রায় ভাগনা, দেশী কই, নাপিত কই, গুলশা, খলিশা, লাল খলিশা, মাগুর, বোয়ালি পাবদা, সরপুঁটি, পুঁটি, শিং, মহাশোল, রুই, বুজুরি টেংরা, ভিটা টেংরা, গুলশা, বাটা, রিটা, মলা, পুইয়াগুতুম, পাহাড়ী গুতুম, ঠোটপুইয়া, শালবাইম, টাকি, ফলি, ঢেলা, চেলা, লম্বা চান্দা, রাঙাচান্দা, লালচান্দা, পিয়ালি, বৈরালি, দারকিনা, ইংলা, কেপ চেলা, রাণি, কাকিলা, কাজলী, ভাচা, বাতাসি, আঙ্গুস, কানপোনা, ঘাউরা, ভেদা, কাকিলা, বাসপাতাসহ মোট ৮৫ প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল দেশীয় মাছকে এ ব্যাংকে সংরক্ষণ করা হবে। দেশব্যাপী এ সংরক্ষণ কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে।

বিএফআরআইয়ের বিজ্ঞানীরা জানান, বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের একটি বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ। দেশে মিঠা পানির ২৬০টি প্রজাতির মাছের মধ্যে ১৪৩ প্রজাতির ছোট মাছ রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে দেশীয় প্রজাতির মাছ সহজলভ্য পুষ্টির অন্যতম উৎস্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এরমধ্যে মলা, ঢেলা, পুঁটি, বাইম, টেংরা, খলিশা, পাবদা, শিং, মাগুর, কেচকি, চান্দা ইত্যাদি অন্যতম।

এসব মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ ও আয়োডিনের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ রয়েছে। এসব উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে এবং রক্তশূন্যতা, গলগণ্ড, অন্ধত্ব প্রভৃতি রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলাশয় সংকোচন, অতি আহরণ ইত্যাদি নানাবিধ কারণে মাছের প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র বিনষ্ট হওয়ার ফলে প্রাকৃতিক জলাশয়ে ছোট মাছের প্রাপ্যতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায়।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. অনুরাধা ভদ্র নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশীয় মাছের চাষাবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে হ্যাচারিতে দেশীয় মাছের পোনা ব্যাপকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। পোনা প্রাপ্তি সহজতর হওয়ায় বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে পাবদা, গুলশা, শিং, টেংরা, মাগুর ও কৈ মাছ ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে। ইদানিং বাটা মাছের চাষ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশীয় মাছের চাষাবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় এদের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

এ ছাড়া নদ-নদী, হাওড় ও বিলে দেশীয় মাছের পোনা অবমুক্তকরণ ও মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ মাছের জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।’

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে গবেষণা কার্যক্রম সাম্প্রতিককালে জোরদার করা হয়েছে এবং দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে গবেষণা উদ্যেগ গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল দেশীয় মাছকে পুনরুদ্ধার করার জন্য স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাছের জার্মপ্লাজম সংরক্ষণের জন্য লাইভ জিন ব্যাংক একটি আধুনিক ধারণা। জিন ব্যাংক মূলত কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদের জেনেটিক উপাদানের সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা। কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদ যখন হুমকির সম্মুখীন হয় তখন জিন ব্যাংকের প্রয়োজন হয়। প্রাকৃতিক উৎসে কোনো দেশীয় মাছ হারিয়ে গেলে সেসব মাছকে পুনরুদ্ধারের জন্য লাইভ জিন ব্যাংক থেকে ব্যবহার করা যাবে।

‘সেক্ষেত্রে লাইভ জিন ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্ট মাছকে হ্যাচারিতে কৃত্রিম উপায়ে পোনা উৎপাদনের মাধ্যমে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে আনা হবে। মাত্রাতিরিক্ত মাছ আহরণ, পরিবেশগত বির্পযয়, জলাশয় সংকোচনসহ প্রভৃতি নানা কারণে মৎস্য সম্পদ হুমকির সম্মুখীন হলে এই ব্যাংক কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।’

বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক বলেন, ‘দেশের মৎস্য উৎপাদনে দেশীয় ছোট মাছের অবদান ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। দেশীয় মাছের চাষাবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে হ্যাচারিতে দেশীয় মাছের পোনা ব্যাপকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। ইনস্টিটিউট থেকে বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায় মাছ ঢেলা, শাল বাইম, রাণী, কাজলি, পিয়ালি, বাতাসি, কাকিলা ও ভোল মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে। আগামী প্রজনন মৌসুমে এক্ষেত্রেও সফলতা আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় সকল দেশীয় মাছকে পর্যায়ক্রমে খাওয়ার পাতে ফিরিয়ে আনাই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য।’

এ বিভাগের আরো খবর