বিএনপি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়ার পর দেখার বিষয় ছিল কে হচ্ছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) বর্তমান মেয়র লিটনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। এখানকার একাধিক বিএনপি নেতার নাম শোনা যাচ্ছিলো সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে পরিষ্কার হচ্ছে যে বিএনপির কোনো নেতা শেষ পর্যন্ত এখানে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না। সে ক্ষেত্রে এখানে মেয়র পদের লড়াইটা জমবে না বলেই মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
বিএনপির সাবেক নেতা সাহিদ হাসানের প্রার্থী হওয়ার জোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। তিনিও চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়েছেন নির্বাচন না করার। এ অবস্থায় শেষ পর্যন্ত নৌকার প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সামনে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীই রইল না। তবে এই নির্বাচন ঘিরে পাড়া-মহল্লা সরগরম করে তুলেছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হিসেবে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, জাতীয় পার্টির প্রার্থী রাজশাহী নগরের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপন এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী তাদের রাজশাহী মহানগরের সহ-সভাপতি হাফেজ মাওলানা মুরশিদ আলম ফারুকী মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিলো নৌকার প্রার্থী লিটনের বিপক্ষে লড়াই করবেন বিএনপির কোন নেতা। প্রথম দিকে নাম আসে মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইটের। তবে এমন গুঞ্জনের মাঝেই সুইট জানিয়ে দেন যে তিনি ভোটের মাঠে নামছেন না।
সুইট এই প্রতিবেদককে জানান, ‘সুষ্ঠু ভোট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আবার দলীয়ভাবে বিএনপি ভোট বর্জন করেছে। এ অবস্থায় আমি প্রার্থী হচ্ছি না।’
চলতি মাসের শুরু থেকে আলোচনায় আসেন বিএনপির সাবেক নেতা সাহিদ হাসানের। বিএনপি নির্বাচনে না আসার কথা বললেও মেয়র প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। তিনি ভোটের মাঠে এলে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে এমনটাও বলাবলি ছিল।
সাহিদ হাসান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফার ভাই। তিনি রাজশাহী কলেজ ছাত্রদল, মহানগর ছাত্রদল এবং সবশেষ মহানগর বিএনপির সাবেক নেতা। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সাহিদ এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেয়ার ইচ্ছা আছে। তবে আমি সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছি। নির্বাচনে জনগণের রায়ের প্রতিফলন হবে কি না সেটিও দেখার ব্যাপার। আবার বিএনপি নেতাকর্মীদের সমর্থন মিলবে কিনা তা-ও পর্যবেক্ষণ করছি। এসব কিছু মিলিয়ে কয়েকদিন পরই বিষয়টি নিশ্চিত করবো।’
এ বিষয়ে জানতে শনিবার সঙ্গে আবারও যোগাযোগ করলে সাহিদ জানান, তিনি ভোটে অংশ নিচ্ছেন না।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ভালো ভোট হওয়ার বিষয়ে আমি নিশ্চিত হতে পারিনি। এছাড়া বিএনপির দলীয় কঠোর অবস্থানও এই সিদ্ধান্তের একটি কারণ।
‘আমি দলের কোনো পদে নেই। এরপরও অন্যান্য সিটি করপোরেশনের বিষয়ে বিএনপির কঠোর অবস্থানের বিষয়টি বিবেচনা করেছ। এ অবস্থায় সব মিলিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মেয়র পদে ভাট করবো না।’
বিএনপির এই নেতার প্রার্থী হওয়ার ঘোষণার পর এখন অনেকটাই নিশ্চিত যে, রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদের লড়াইটা জমছে না।
মেয়র লিটন রাজশাহী শহরের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত। আবার তিনি দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। এ অবস্থায় লিটনকে শক্ত প্রার্থী হিসেবেই মনে করেন নগরবাসী।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টি বা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নিজস্ব কোনো ভোটব্যাংক নেই এখানে। আবার বিএনপি কিংবা জামায়াতের সমর্থনও এই দুই প্রার্থীর কারও পক্ষে যাওয়ার পরিবেশ এখানে এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি।
তারপরও নৌকার প্রার্থী লিটন ভোটের মাঠে ব্যাপক তৎপর। তিনি প্রতিনিয়ত মতবিনিময় সভা ও শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন নগরীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে। তার কর্মী-সমর্থকরা প্রতিদিনই পাড়া-মহল্লায় যাচ্ছেন, লিফলেট বিতরণ করছেন। মেয়র লিটনরে উন্নয়ন কাজ তুলে ধরে আবারও তার পক্ষে ভোট চাইছেন।
লিটন সবখানেই বলছেন, তিনি নগরীর যে উন্নয়ন করেছেন তা দৃশ্যমান। এ কারণে নগরবাসী তাকেই আবারও সুযোগ দেবেন। আর তিনি আবারও মেয়র হলে কর্মসংস্থানে এবার গুরুত্ব দেবেন।
তবে অন্য দুই প্রার্থীর নির্বাচনী তৎপরতা এখনও তেমন একটা দৃশ্যমান নয়। জাতীয় পার্টি রাজশাহী নগরের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘ভোটের মাঠে আছি। আপাতত নিজেই মানুষের কাছে যাচ্ছি। প্রতীক বরাদ্দের পর জোরালোভাবে মাঠে নামব।
‘দিন যত যাচ্ছে মানুষের সাড়া মিলছে। মানুষের আগ্রহ দেখে ভালো ফলাফলের ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’
নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে কেমন আশাবাদী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মুরশিদ আলম ফারুকী বলেন, ‘রাজশাহীর মানুষ দেশের মানুষ একটা পরিবর্তন চায়। এক্ষেত্রে তো আমরা আশা করতেই পারি। আমাদের অবস্থা একেবারেই খারাপ না। রাজশাহীতে আমরা কাজ করছি। অন্যদের মতো না হলেও আমাদের কাজ চলছে।’