সাতক্ষীরার একজন স্বনামধন্য প্রেস ব্যাবসায়ীর মোবাইল ফোনে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোন রিসিভ করলে শুনতে পান, ‘আমি সাব-ইন্সপেক্টর মনির বলছি। আপনার ছেলের নাম কি সালাম (ছদ্মনাম)?’ তখন তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ’।
এরপর সাব-ইন্সপেক্টর পরিচয়দাতা ব্যাক্তি বলেন, ‘আপনার ছেলেকে ৫০ পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাবু নামে আরও একটি ছেলেকে আটক করা হয়েছে। তারা এখন আমাদের হেফাজতে আছে। এই নিন আপনার ছেলের সঙ্গে কথা বলুন।’
এরপর অপর একজন কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে ভাঙ্গা গলায় বলল, ‘বাবা আমার কোনো দোষ নেই; বাবু আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। স্যারকে কিছু টাকা দিলে আমাকে এখনি ছেড়ে দেবে। স্যারের এই নম্বরে বিকাশ করা আছে। বাবা, তুমি আমাকে বাঁচাও।’ বলেই ফোনটি কেটে দিল।
প্রথমে বিষয়টি বুঝে উঠতে পারেননি ওই ব্যাবসায়ী; বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হয় তার। পরে ছেলের মোবাইলে নম্বরে ফোন করে নিশ্চিত হলেন তার ছেলে আসলেই আটক হয়েছে কি না। কারণ তিনি জানতেন, তার ছেলে তখন দোকান চালাচ্ছে।
এর পর তিনি সাতক্ষীরা সদর থানায় ফোন দিয়ে নিশ্চিত হলেন, ওই নামে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা থানাতে নেই। ফোন নম্বরটিও কোনো পুলিশ কর্মকর্তার নয়।
আসলে এটি ছিল একটি প্রতারক চক্রের কSটকৌশল।
একই অভিজ্ঞতা হয়েছে সাতক্ষীরা সদরের মধু ব্যাবসায়ী মানিক হোসেনের। কিছুদিন একই ধরনের একটি নম্বর থেকে বিএসটিআই কর্মকর্তা পরিচয়ে তাকে ফোন করা হয়। বলা হয়, ‘এখনই আপনার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালাবে। আমরা এখন খুলনা রোড মোড়ে অবস্থান করছি। আপনি যদি বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা পাঠান তাহলে আপনার প্রতিষ্ঠানে অভিযান হবে না।’
বিষয়টি নিয়ে তার সন্দেহ হলে খুলনার বিএসটিআই অফিসে ফোন দিয়ে জানতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
চক্রটির বিরুদ্ধে কখনও পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, লাইন্সেস আবেদনকারী, চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এভাবেই প্রতিনিয়ত সাতক্ষীরার বিভিন্ন গ্রাম ও শহরের সহজ-সরল মানুষদের বোকা বানিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি।
এদের প্রতারণার জালে পড়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অনেকে। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করেন না। তবে বেশকিছু মানুষ প্রতারণার শিকার হওয়ার পর বিষয়টি আস্তে আস্তে সামনে আসছে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান বলেন, ‘এ রকম বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। দ্রুত এই প্রতারক চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
এদিকে সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে একটি পোস্ট দেয়া হয়েছে।
পোস্টে বলা হয়, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ০১৭৭৪৬৮০৩৪৯ মোবাইল নম্বর থেকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কিংবা অন্য কোনো অফিসার পরিচয়ে আপনাদের নিকট ফোন দিয়ে বলছেন যে আপনাকে নাশকতার মামলা বা অন্য কোনো মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া হবে। বিকাশে টাকা পাঠান। অনেকেই হয়ত মামলার আসামি আছেন কিংবা মামলার আসামি হবেন এমন দুশ্চিন্তায় আছেন বা পরিবারের অন্য কোনো সদস্য মামলায় ফেঁসে যাবে এই ভয়ে বিকাশে টাকা দিচ্ছেন। আপনাদের এই মর্মে সাবধান এবং সতর্ক করা হচ্ছে যে, সাতক্ষীরা সদর থানা কিংবা অন্য কোনো থানা পুলিশ আপনার নিকট কোনোভাবেই টাকা দাবি করছে না। কখনো সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়।
এতে বলা হয়, আমরা খোঁজ খবর নিয়ে দেখেছি এটি একটি সঙ্গবদ্ধ প্রতারক চক্রের কাজ। আমরা এদের ধরার চেষ্টা করছি। আপনারা ফাঁদে পড়ে কখনো কাউকে বিকাশে কিংবা অন্য কোনোভাবে টাকা দেবেন না।