বাংলাদেশের অর্জনগুলো নস্যাৎ করতে দেশি ও আন্তর্জাতিক গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে এবং তা চলতেই থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এদেশকে নিয়ে, এদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে কেউ যাতে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
বুধবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে শুভেচ্ছা জানাতে আসা নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর দীর্ঘদিন নির্বাসনে থাকা বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের এই দিনে দেশে ফিরে আসেন।
স্বদেশে ফিরে আসার সেদিনের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেদিন ফিরে এসে পেয়েছিলাম এদেশের জনগণ আর আমার আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীকে। সেদিন থেকে আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশের জনগণই আমার পরিবার।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে একটা গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। আর তা চলতেই থাকবে যেন আমাদের অর্জনগুলো নস্যাৎ হয়।’
জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগই একমাত্র দল, যে দলটি বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণের চিন্তা করে। বাকিগুলো লুটেরার দল। তারা এদেশের মানুষের কল্যাণের চিন্তা করে না। সে কথা মাথায় রেখে ওই সন্ত্রাসীর দল, খুনির দল, যুদ্ধাপরাধীদের দল যেন আর বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেদিকে সবাইকে নজর দেয়ার অনুরোধ জানাই।’
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘যারা ভোটচোর ছিল, ভোট ডাকাত ছিল, তারাই এখন গণতন্ত্র চায়, ভোটের অধিকারের কথা বলে। যাদের জন্মই হয়েছে অবৈধভাবে তাদের কাছে এসব কথাও শুনতে হচ্ছে!
‘এগুলো মাঠের কথা মাঠে থাকবে। আমরা জনতার সঙ্গে থাকব, জনতার পাশে থাকব। জনগণের আস্থাই আওয়ামী লীগের একমাত্র শক্তি।’
আওয়ামী লীগ দেশে নির্বাচনী পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা এনেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণতন্ত্র নিয়ে, ভোটের অধিকার নিয়ে অনেকে কথা বলে। কিন্তু বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার কবে ছিল? ১৯৭৫ সালের পর থেকে চলেছে ভোট চুরি, ভোট কারচুপি, ভোট নিয়ে খেলা, মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলা।
‘বরং আওয়ামী লীগের নানা পদক্ষেপের ফলে আজ বিভিন্ন সংস্কার করে নির্বাচন পদ্ধতিটাকে গণমুখী করা, জনগণের ভোট সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব- এই স্লোগান নিয়ে মানুষকে যে ভোট সম্পর্কে সচেতন করা সেটা তো আওয়ামী লীগ করেছে। নির্বাচন কমিশন করার জন্য আইনও করে দিয়েছে আওয়ামী লীগই।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘আগে ভুয়া ভোটার তালিকা হতো। সেখানে ছবিসহ ভোটার তালিকা, আইডি কার্ড, নির্বাচনী পদ্ধতি সংস্কার বা মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন- এগুলো তো আওয়ামী লীগেরই করে দেয়া। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স সবই করে দিয়েছি আমরা।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। পাশাপাশি উন্নয়নের গতি যাতে ত্বরান্বিত হয় তার ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের সংগঠন আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাবে এটাই আমাদের একমাত্র প্রতিজ্ঞা। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জাতির পিতার যে স্বপ্ন সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। জাতির পিতার সোনার বাংলা ইনশাআল্লাহ আমরা গড়ে তুলব। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে শুধু উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ নয়, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতও সরকার কাজ করছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চেয়েছিলেন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে। সেই হাসি ফোটানো একমাত্র কর্তব্য। সেটা আমরা করে যাচ্ছি। লক্ষ্য একটাই দেশের মানুষের জীবনটা উন্নত করে দেয়া। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করে দেয়া।
‘আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এটাকে ধরে রেখে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
মানুষের কল্যাণে কাজ করার তৃপ্তির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যখন একজন ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষকে ঘর দেই, তাদের মুখের হাসি আর চোখের পানি যখন একাকার হয়ে যায়, আমি মনে করি এর চেয়ে বড় পাওয়া এবং স্বার্থকতা আর কিছু নেই।’
গণভবনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগ ছাড়াও এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।