নাফ নদীর তীরে কুঁড়েঘর ছিল কবির আহমেদের (৪৫)। বঙ্গোপসাগরে ধরা মাছ এনে শুকিয়ে বিক্রি করে যা আয় করতেন, তা দিয়ে কোনো রকমে যাচ্ছিল দিন। ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র তাণ্ডবে তছনছ হয়ে গেছে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপের এ বাসিন্দার থাকার ঘর।
হাতে টাকা না থাকায় সেই ঘর ঠিক করতে পারছেন না কবির। তিনি দুঃখ করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার থেকে সাহায্য না পেলে ঘর দেয়ার কোনো উপায়ই নাই।’
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ, পশ্চিমপাড়া, ডাংগরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, উত্তরপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া ও জালিয়াপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫ হাজার কাঁচা-পাকা ঘর মোখার তাণ্ডবে বিধ্বস্ত হয়েছে।
শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়ার জেলে আব্দুল শুক্কুর বলেন, ‘আমরা গরিব, অসহায় মানুষ। যেভাবে এখন জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, তাতে ঘরের কাজ শুরু করতে ভয় পাচ্ছি।
‘১০০টি বাঁশ ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রশি, টিন, পলিথিনসহ অন্যান্য সামগ্রীর দামও বেড়েছে। যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো, তারা কিনতে পারছে।’
নাফ নদীর কাছে জালিয়াপাড়ায় থাকেন আট সন্তানের জননী মরিয়ম বেগম। তার স্বামী রকিব উদ্দিন জেলে। দীর্ঘদিন ধরে নাফ নদীতে জাল ফেলা নিষিদ্ধ থাকায় রকিব কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
পরিবার নিয়ে ৩ বছর আগে পলিথিন দিয়ে তৈরি দুই কক্ষের ঘরে থাকতেন মরিয়ম। ঘূর্ণিঝড় মোখায় পুরো ঘরটি লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন ওই নারী।
শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা শরীফ বলেন, ‘এলাকার বেশির ভাগ মানুষই গরিব। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ঘরের টিন উড়ে গেছে। কারও সাহায্য না পেলে ঘর মেরামত করব কীভাবে? পাড়ার অনেক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।’
আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় ঘর মেরামতও করতে পারছেন না বলে জানান এ ব্যক্তি।
জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের ভাষ্য
সাবরাং ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, ‘এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা করেছি। কিছু পরিবারকে দিয়েছি। বাকি ১ হাজারের মতো পরিবার রয়ে গেছে। তারা বিভিন্ন সংস্থার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।’
টেকনাফ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, ‘আমার ৯ ওয়ার্ডে ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে অনেক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের সবাইকে কথা দিয়েছি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা করব বলে, তবে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানাই।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে এই উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা বেশি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে ধাপে ধাপে তাদেরকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক শাহীন ইমরান জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে আট উপজেলায় অংশিক ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে ১০ হাজার ৪৬৯টি। ২ হাজার ২২টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৬২০ জন মানুষ দুর্গত। তালিকা করে সবাইকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে।