কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার কাজ রাঁধুনি, মালি, ওয়ার্ড বয় ও পরিচ্ছন্নকর্মী দিয়ে চলছে কি না সেটি তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টের রিট করা হয়েছে।
এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে জনস্বার্থে মঙ্গলবার হাইকোর্টে রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আনসারি।
রিটে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবায় প্রয়োজনীয় (প্রপার) চিকিৎসকসহ জনবল নিয়োগ দেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), কুড়িগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ও কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত চিকিৎসককে বিবাদী করা হয়েছে।
রিটটি বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হবে।
রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে এই হাসপাতালটি ২৫ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। হাসাপাতালটিতে মেডিক্যাল অফিসারের ১০টির মধ্যে দুটি, মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্টের দুটি ও স্বাস্থ্য সহকারীর ১৩টি ছাড়াও সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকের দুটি, ওয়ার্ডবয়ের দুটি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর দুটি পদ ফাঁকা আছে। এ ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেন্টাল চিকিৎসক, এমটি ডেন্টাল, ইপিআই, রেডিওগ্রাফার, কার্ডিওগ্রাফার, ক্যাশিয়ার, স্টোরকিপার, জুনিয়র মেকানিক্যাল পদগুলোও শূন্য দীর্ঘদিন ধরেই।
সাবেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী রবি দাস বলেন, ‘গত ১ ডিসেম্বরে ঝাড়ুদার পদ থেকে অবসর নিয়েছি। কিন্তু ড্রেসিং ও সেলাইয়ের কাজ করতে পারি। আগের অনেক ডাক্তারের সঙ্গে আমি কাজ করেছি। এখনো ওটি ও জরুরি বিভাগে নিয়মিত কাজ করি।’
হাসপাতালের রাঁধুনি বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘রাঁধুনি হলেও আমি জরুরি বিভাগের সব কাজই পারি। এর আগে আমি নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ীসহ অন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওয়ার্ডবয় হিসেবে কাজ করেছি। এই হাসপাতালে ওয়ার্ডবয় না থাকায় জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করছি। আমার মতো হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে মালী দেলোয়ার হোসেন, মিজানুরও কাজ করেন।’
মালী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ফুলের বাগান দেখভালের কাজ হলেও জরুরি বিভাগেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করি। পাশাপাশি সেলাই ও ড্রেসিংয়ের কাজও করতে পারি।’
রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে রাঁধুনি, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মালী ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে চলছে জরুরি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটার। এই হাসপাতালে তিনজন ওয়ার্ড বয়ের বিপরীতে আছেন একজন। তিনিও বর্তমানে কর্মরত আছেন উমর মজিদ ইউনিয়ন সাব-সেন্টারে। এ অবস্থায় আমাদের কিছু করার নেই।’
কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন মঞ্জুর-এ-মুর্শেদ জনবল সংকটকে দায়ী করে বলেন, ‘জরুরি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটারের চিকিৎসকের সহযোগিতা করে থাকেন তারা। তবে এখনও কোনো রোগী অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’